• ৬ বৈশাখ ,১৪৩১,19 Apr ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

ভাবার সময় হয়েছে, ঔষধ কোম্পানির কাছ থেকে কতখানি নেব?- ডা: হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন

| মে 10, 2016 | 0 Comments
12122934_900798980013264_3072832473579958131_n

ডা: হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন

 ইউরোবিডি //হেল্থ ইস্যুজ:

ডা: হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন

কতখানি নেব?
——————
গতকাল সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়া চিকিৎসকদের অনেকেই ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করেছেন, সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন । আমরাও অভিনন্দন জানিয়েছি।

দ্বিধায় পড়েছি কারও কারও পোস্ট করা ছবি দেখে। ঔষধ কোম্পানির কর্মকর্তাগণ ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন, জানাতেই পারেন পেশাগত পরিচয়ের সূত্রে। কিন্তু যে ভাবে ফলাও করে তা প্রচার করা হচ্ছে, তা নিয়ে একটু ভাবনা চিন্তা করা যেতে পারে। একতরফা সিদ্ধান্ত পরিহার করে একটু নির্মোহ দৃষ্টিতে বিশ্লেষন করা যেতে পারে চিকিৎসক ও ঔষধ শিল্পের সম্পর্কের বিষয়টি।

কিছুদিন আগে জাতীয় ক্যান্সার সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে আমাকেই একটা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। সামাজিক একটি অধিবেশনে বিভিন্ন পেশার মানুষদের বক্তব্য ছিলো। একটি বহুজাতিক ঔষধ কোম্পানীর একজন কর্মকর্তার প্রেজেন্টেশন ছিলো ক্যান্সারের আর্থসামাজিক প্রভাব নিয়ে। একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রশ্ন তুললেন একটি কোম্পানিকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেয়ায়। ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ এর প্রশ্ন এসে যায় কিনা? তিনি চিকিৎসকদের বিভিন্ন সোসাইটির অনুষ্ঠানে ঔষধ কোম্পানীর প্রবল সম্পৃক্তির বিষয়টি তুলে ধরেন। একটি ভিন্নধর্মী সংগঠন হিসেবে সিসিপিআর -ও একই ধরণের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ুক তা তিনি চান না। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আরেকজন সিনিয়র রিপোর্টারই এর জবাব দিলেন। আমার নিজের দৃষ্টিভঙ্গী ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তাঁরা ভালোই জানেন, যারা আমাদের কর্মসূচীগুলোতে অংশ নেন। প্রথমতঃ আমাদের প্রোগ্রামগুলোতে এ যাবতকাল ঔষধ কোম্পানীর কন্ট্রিবিউশনের অনুপাত নন- ফারমাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির তুলনায় তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। দ্বিতীয়তঃ কয়েকটি দেশি কোম্পানীর মালিক ও কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ভালোলাগা ও সম্পর্ক বেশি ভুমিকা রাখে ব্যবসায়িক বিষয়- আশয়ের তুলনায়। নাম ধরেই বলতে পারি ইউনিহেলথ এর এমডি মোসাদ্দেক ভাই, জেনারেলের এমডি মোমেন ভাই, ডেল্টা ফার্মার এমডি স্নেহাস্পদ জাকির ও রেনাটাতে বন্ধুবর শিবলি- মনোয়ার ভাই-সাবরিনার কথা। যে কোন অনুষ্ঠানের জন্য পানির বোতল দরকার হলে এবং একমির কাছে চাইলে সরবরাহ নিশ্চিত। আমাদের অনুষ্ঠানে এই সহযোগিতাটুকু করে উনাদের পাওয়ার কিছু নেই। এঁদের কারো সরাসরি এন্টি- ক্যান্সার প্রোডাক্ট নেই। আমি নিজে তেমন প্র্যাক্টিশনারও নেই। এর বাইরে, বিশেষ করে মাল্টিন্যাশনাল ও দেশি কোম্পানি যাদের এন্টি ক্যান্সার প্রডাক্ট আছে, তাঁরাও আমাদের মাঝে মধ্যে সহযোগিতা করেন। কিন্তু অন্য যে কোন সম্মেলন, সেমিনার বা কর্মশালায় যে হারে তাঁরা কন্ট্রিবিউট করেন, তার তুলনায় আমাদের জনসম্পৃক্ত কর্মসূচীতে তাঁদের কন্ট্রিবিউশন সামান্যই বলা যায় । আমরা যেহেতু মূলতঃ প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করি, সে জন্য আমাদের বৈজ্ঞানিক কর্মসূচীতেও তাঁরা পারেন না, নানা কারনে। এসব নিয়ে এঁদের সাথে আমার খোলাখুলি কথাও হয়। অনেকের সাথে আমার ব্যক্তিগত জানাশোনা ভালো। আমি বিষয়টাকে মেনে নিয়েছি। আমাদের কোন প্রোগ্রাম তো আর টাকার জন্য থেমে থাকে নি!

এরপরও আমি মনে করি, পৃথিবীর অনেক দেশেই ঔষধ শিল্প সহায়তা করে থাকে পেশাগত উন্নয়নে ও গবেষণায়।আমাদের দেশে কোন গবেষণা কাজে, কিংবা পেশাগত উন্নয়নধর্মী কোন সম্মেলন, কর্মশালা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কাজে ঔষধ কোম্পানি বা প্রাইভেট হাসপাতাল/ ডায়াগনস্টিক সেন্টার যদি সহায়তা করে, আমি দোষের কিছু দেখি না। আমার নিজের কোন একরোখা মানসিকতা নেই যে, কোন সহযোগিতাই নেব না। কিন্তু কতটুকু নেব? এটাই মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। স্বার্থের সংঘাত দেখা দিবে, এমন কোন অংশীদারিত্ব কিংবা সম্পর্কে জড়াবো কি না?

বর্তমান ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থায় অন্যায্য প্রতিযোগিতার বাজারে চিকিৎসা- ব্যবসায় যে আক্রমনাত্মক বিপণন নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকেই, নৈতিকতা সেখানে এক রকম হারিয়েই যেতে বসেছে। কে কাকে প্রলুব্ধ বা বাধ্য করছেন সেটা নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে। কিন্তু জনগণের কাছে ভাবমূর্তির সঙ্কটে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চিকিৎসক সমাজ। সংখ্যালঘিষ্ট সদস্যের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরাও।

উপরে যে ধরনের গবেষণা বা পেশাগত উন্নয়নে গ্রহণযোগ্য সহায়তার কথা বললাম, তা ছাড়িয়ে ব্যক্তিগত লাভের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে।দেশের মধ্যে একটি সম্মেলন আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করা, আর সেই সম্মেলনে ব্যক্তিগতভাবে, ক্ষেত্রবিশেষে স্বামী/স্ত্রী/সন্তান নিয়ে প্লেজার ট্রিপে যাওয়ার খরচ দেয়া-নেয়ার মধ্যে নিশ্চয়ই পার্থক্য আছে? অহেতুক চাকচিক্য- জনিত বিশাল বাজেটের অনুষ্ঠান আয়োজনের পরোক্ষ ভোগান্তি শেষ পর্যন্ত দরিদ্র রোগীর উপরেই তো পড়ে। এসব খাতে ব্যয় হিসেব করেই তো ঔষধের দাম ধরা হয় ?
ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত সুবিধা নেয়ার বদলে প্রতিদান দেয়ার একটা দায় কি সৃষ্টি হয়ে যায় না? মানের প্রতি সুবিচার কি পেছনে পড়ে যায় না?

ভাবার সময় হয়েছে, পরিবার- পরিজন নিয়ে পিকনিয়ে গিয়ে যে দামী খাবার খাবো, তা ঔষধ কোম্পানির কাছ থেকে নেয়া সম্মানজনক কি না ? ঈদের সেমাই- পোলাওয়ের চাল কোম্পানীর কাছ থেকে নেয়ার মধ্যে কোন গৌরব আছে কি না? আমাকে দিয়ে ওরা ব্যবসা করে, ওরা দিবে না কেন, এই কথাটা খুব যুক্তিগ্রাহ্য কি না?

আমি বলছি না, কাউকে অস্পৃশ্য ভাবতে হবে, অসম্মান করতে হবে। পারস্পরিক সহায়তা দেয়া- নেয়া হতে পারে পেশাগত কাজে, জনকল্যাণমূলক কাজে। কিন্তু ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ভোগবিলাসে কি তা যুক্তিযুক্ত?

দেব-নেব, কিন্তু কতটুকু?

Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, হেল্থ ইস্যুজ

About the Author ()

Leave a Reply