‘তিন মা-বাবার সন্তান’ জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়াকে বৈধতা দিয়েছে যুক্তরাজ্য
হেল্থ ইস্যুজ: বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ‘তিন মা-বাবার সন্তান’ জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়াকে আইনি অনুমোদন দিয়েছে। এই পদ্ধতিতে দুই নারী এবং একজন পুরুষের ডিএনএ নিয়ে সন্তানের জন্ম দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে জিনগত অসুখে আক্রান্ত নারীরাও সুস্থ সন্তান পেতে পারেন। ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা গত ফেব্রুয়ারিতে এই চিকিৎসাপদ্ধতি অনুমোদনের পক্ষে ভোট দেন। তবে এ জন্য চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোকে হিউম্যান ফার্টিলাইজেশন অ্যান্ড এমব্রায়োলজি অথরিটির (এইচএফইএ) অনুমতিপত্র বা লাইসেন্স নিতে হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান স্যালি চেশায়ার বলেন, এ ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি অনুমোদন এটিই বিশ্বে প্রথম। তাই ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ।
দুই নারী ও এক পুরুষের ডিএনএ নিয়ে সন্তান জন্মদানের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। বৃহস্পতিবার বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমাজের বিভিন্ন স্তরে তুমুল বিতর্কের পর দেশটির প্রজনন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ বিষয়ে একটি ঐতিহাসিক বিধান পাস করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বংশগত জটিল রোগের কারণে নবজাতক শিশুর মৃত্যু রোধ করতেই এই বিধান পাস করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের নিউ ক্যাসলের চিকিৎসকেরা দীর্ঘ গবেষণার পর ‘আইভিএফ’ বা ‘ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’-এর মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের প্রক্রিয়ার আরও উন্নত রূপান্তর ঘটিয়েছেন। এই প্রক্রিয়ায় ২০১৭ সালের শেষের দিকে দুই নারী ও এক পুরুষের ডিএনএ নিয়ে প্রথম সন্তানের জন্ম হতে পারে।
মানব শরীরের প্রায় প্রতিটি কোষে থাকা মাইটোকন্ড্রিয়া, খাদ্যকে শরীরে ব্যবহারযোগ্য শক্তিতে পরিণত করে। কিন্তু মায়ের শরীর থেকে ত্রুটিপূর্ণ মাইটোকন্ড্রিয়া সন্তানের শরীরে যেতে পারে। আর এ ত্রুটিপূর্ণ মাইটোকন্ড্রিয়া সন্তানের মস্তিষ্কের ক্ষয়, পেশি কোষের ক্ষয় থেকে শুরু করে অন্ধত্ব তৈরি এমনকি হৃৎপিণ্ড বিকল করতে পারে। আর এই মাইটোকন্ড্রিয়ার ত্রুটিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
তবে কিছু বিজ্ঞানী ও গবেষক এ বিষয়ে নৈতিকতা ও প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে তাঁরা বলছেন, যেসব এলাকায় শিশুদের মাইটোকন্ড্রিয়া জনিত রোগের ঝুঁকি বেশি সেসব এলাকায় ‘থ্রি-পারসনস বেবি’ নামে বহুল আলোচিত-সমালোচিত এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
এখন দেশটির যে কোনো হাসপাতাল হিউম্যান ফার্টিলাইজেশন অ্যান্ড এমব্রায়োলজি অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে ‘থ্রি-পারসনস বেবি’ পদ্ধতির চর্চা করতে পারে।
নিউ ক্যাসল ফার্টিলিটি সেন্টারের অধ্যাপক মারি হারবার্ট বলেন, এ বিষয়ে আমাদের অনেক বছরের গবেষণা অবশেষে কাজ করতে চলেছে। ভয়াবহ রোগ থেকে কিছু পরিবারকে সহায়তা করা যাবে। এখন আমরা একদম প্রায়োগিক চিকিৎসার দিকে এগিয়ে যাব। এ জন্য আমাদের ‘এগ ডোনার’ প্রয়োজন।’
জর্ডানের এক দম্পতি ও নিউইয়র্কের চিকিৎসকেরা মেক্সিকোতে এই পদ্ধতিতে ‘থ্রি-পারসনস বেবি’র জন্ম দিয়েছেন। ওই শিশু সুস্থ্য আছে।
মাইটোকন্ড্রিয়ার চিকিৎসা
এই পদ্ধতিতে ‘আইভিএফ’ বা ‘ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’-এর মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের প্রক্রিয়ার আরও জটিল রূপান্তর ঘটানো হয়েছে। মাইটোকন্ড্রিয়া রোগে আক্রান্ত নারীরা সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা নিতে পারেন। এতে সন্তান জন্মদানে ইচ্ছুক নারী-পুরুষের ডিএনএর সঙ্গে সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া অধিকারী আরেক নারীর কাছ থেকে ডিএনএ নেওয়া হবে। এভাবে জন্ম নেওয়া সন্তান জৈবিক বাবা-মায়ের ডিএনএর পাশাপাশি দাতা নারীর ডিএনএর মাত্র ০ দশমিক ১ শতাংশ পাবে। কিন্তু এতেই শিশুটি ত্রুটিপূর্ণ মাইটোকন্ড্রিয়ার হাত থেকে রেহাই পাবে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তা অব্যাহত থাকবে।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, আন্তর্জাতিক, শীর্ষ সংবাদ, হেল্থ ইস্যুজ