• ১৪ চৈত্র ,১৪৩০,28 Mar ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

ফরাসি প্রেসিডেন্টদের পরকীয়া নতুন কিছু নয়। সংকটে প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ

| জানুয়ারী 25, 2014 | 0 Comments

ইউরো সংবাদ: মহা সংকটে পড়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। ফ্রান্সের জনপ্রিয় বিনোদন সাময়িকী ক্লোজার অভিনেত্রী জুলি গায়েতের সঙ্গে তাঁর কথিত প্রেমের কাহিনি চাউর করে দেওয়ায় এ সংকটের শুরু। শেষ কোথায়, তা বলা যাচ্ছে না এখনই। তবে যা রটেছে, তা কিছুটা হলেও বটে বলে ব্যাপারটা সহজে মিটছে না, তা ধরেই নেওয়া যায়। সাময়িকীটির দাবি সত্যি হতে পারে, তা মনে করার কারণ হচ্ছে, দুজনের কেউই সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেননি। কেবল প্রতিবাদ জানিয়েছেন ‘ব্যক্তিগত গোপনীয়তার’ নীতি লঙ্ঘন করার জন্য।

জুলি গায়েত ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের সোশ্যালিস্ট দলের সমর্থক। ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রকাশ্যেই ওলাঁদকে সমর্থন করেন গায়েত। তখন এক সাক্ষাৎকারে সমাজতন্ত্রী এ নেতাকে ‘দুর্দান্ত, বিনয়ী ও অন্যের কথা শুনতে সত্যিই আগ্রহী’ বলে বর্ণনা করেন সুপরিচিত এ অভিনেত্রী।

ক্লোজার সাময়িকী সাত পাতা জোড়া প্রতিবেদনে কয়েকটি ছবি ছেপেছে। এতে দেখা যায়, ওলাঁদ ও জুলি গায়েত আলাদাভাবে একটি ফ্ল্যাট বাড়িতে ঢুকছেন। ক্লোজার-এর দাবি, অভিসারের উদ্দেশ্যেই তাঁদের সেখানে যাওয়া। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, অন্য এক ব্যক্তি মোটরবাইকে করে ওই ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেন প্রেসিডেন্টকে। সাময়িকীটির মতে, এর মধ্যে সত্যিই রয়েছে কঠিন প্রেম, যা তাঁদের দুজনের জীবনকেই এলোমেলো করে দিয়েছে।

জনমত জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রেসিডেন্ট ওলাঁদের জনপ্রিয়তা এখন রেকর্ড মাত্রায় নিচে। কোনো কেলেঙ্কারি তাঁর জন্য মহা বিপদ ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে নারীঘটিত। দুজন নারী— বর্তমান বান্ধবী ভ্যালেরি ত্রিয়াবেলার ও সাবেক প্রেমিকা সেগুলেন ঘয়াল—অনেক তর্কবিতর্কের জন্ম দিয়ে তাঁকে যথেষ্ট ভুগিয়েছেন। পার্লামেন্ট নির্বাচনে ত্রিয়াবেলার ঘয়ালের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছিলেন। দুই রমণীর দ্বৈরথ পরিচিতি পায় ‘টুইটগেট’ নামে। আর সর্বশেষ এ কেলেঙ্কারির জেরে ওলাঁদ-ত্রিয়াবেলার সম্পর্ক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অনেকের মতে, প্রেমের খবর প্রকাশের পরপরই ত্রিয়াবেলারের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সংকটের গভীরতাকেই তুলে ধরেছে।

জুলি গায়েতজুলি গায়েত২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারণার সময় ওলাঁদ বলেছিলেন, ‘ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতি মুহূর্তে আমার প্রতিটি আচরণ হবে দৃষ্টান্তমূলক।’ কিন্তু ক্ষমতায় আসীন হওয়ার ২০ মাসের মধ্যে নতুন করে এই প্রেমের খবর ফাঁস হওয়ার পর অনেকের কাছে মনে হচ্ছে সেগুলো ছিল কেবলই কথার ফুলঝুরি। তবে ওলাঁদের সমর্থকদের মতে, এটা একেবারেই তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। বান্ধবী ভ্যালেরি ত্রিয়াবেলারের সঙ্গে ওলাঁদের সম্পর্কটা জটিল রূপ নিয়েছে। এ সম্পর্ক থেকে তাঁর বের হওয়া দরকার। এখান থেকেই শুরু হতে পারে তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায়।

তবে কথা হচ্ছে কি, ফরাসি প্রেসিডেন্টদের পরকীয়া নতুন কিছু নয়। প্রেমিকার নিকুঞ্জে রাত কাটিয়ে কাকভোরে গাড়ি চালিয়ে ঘরে ফেরার সময় দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন ভ্যালেরি জিসকার দেস্তাঁ। মজার ব্যাপার, এ ঘটনার পর চালানো জরিপে তাঁর জনপ্রিয়তা বরং বেড়েই গিয়েছিল। নিন্দুকেরা আড়ালে জ্যাক শিরাককে ডাকতেন, ‘গোসলসহ পাঁচ মিনিট’ বলে। শিরাকের প্রেমের কথা নিয়ে গুঞ্জনের অন্ত ছিল না। তিনি নিজেই তাতে উৎসাহ জুগিয়েছিলেন এ কথা বলে যে ‘কয়েকজন নারী ছিলেন, যাঁদের আমি অনেক ভালোবাসতাম, যতটা সম্ভব গোপনে।’ সোশ্যালিস্ট প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁ তাঁর দুই মেয়াদের (১৯৮১-১৯৯৫) বড় একটা সময়ই দীর্ঘদিনের রক্ষিতা আন প্যাঁজোর গর্ভে হওয়া প্রেমের সন্তান মাজারিনের কথা গোপন রাখতে পেরেছিলেন। তবে ওলাঁদের পূর্বসূরি নিকোলা সারকোজির কপাল তত ভালো নয়। এর কারণ, দেশের সার্বিক অবস্থা। তাঁর ঘটনায় বোঝা যায়, দেশের দুর্দিনে প্রেসিডেন্টদের ব্যক্তিগত ফুর্তিফার্তা সহ্য করে না এমনিতে এ বিষয়ে উদার ফরাসিরা। তারকা মডেল কার্লা ব্রুনির সঙ্গে প্রেম শুরু হতে না হতেই একের পর এক দুর্গতি ঘিরে ধরেছিল সারকোজিকে।

গায়েত-ওলাঁদ সম্পর্কের খবর আলোচনায় তুলে এনেছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও যৌনতার মতো বিষয়ে ফরাসি সমাজের মনোভাবও। দীর্ঘদিন ফ্রান্সে থাকা এক ব্রিটিশ সাংবাদিকের মূল্যায়ন, যৌন নৈতিকতার বিষয়টি ফরাসিরা ঘটনা ধরে ধরে আলাদাভাবে বিবেচনা করে। যেমন তারা মনে করে একজন রাষ্ট্রীয় পদে থাকা মানুষের চরিত্রের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এই ‘চরিত্র’ বলতে তারা বোঝে সেসব কাজ থেকে বিরত থাকার ক্ষমতা, আসলে যা করার পূর্ণ অধিকার তাঁর রয়েছে। কারণ, সেগুলো না করার পক্ষের যুক্তিগুলো আরও বড়। ওই সাংবাদিকের মতে, ফরাসি রাজনৈতিক অভিজাতেরা খুবই স্বার্থপর ধরনের। নিজের কামনা-বাসনা চরিতার্থ করতে গিয়ে তাঁরা সন্তান লালন-পালনের মতো গুরুত্ব্বপূর্ণ বিষয়কে পর্যন্ত উপেক্ষা করেন। শীর্ষ নেতাদের একের পর এক পরকীয়া বা অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি হয়তো সে দিকটাকেই তুলে ধরে। অন্যদিকে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিষয়ে ফরাসিদের মনোভাব বদলাচ্ছে। দেশটির প্রচারমাধ্যম এ বিষয়টি নিয়ে বেশি মাতামাতি করেনি। এর একটি কারণ হচ্ছে, নিজেদের তুলনামূলকভাবে বেশি উদার মনে করা ফরাসিরা নেতাদের ব্যক্তিগত জীবনকে তাঁদের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার হিসেবেই দেখে। তবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সীমারেখাটি কোথায় টানা উচিত, সে নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনা চলছে ফরাসি সমাজে।

Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, ইউরো সংবাদ, ইউরো সংবাদ, ইউরো-সংবাদ - France, শীর্ষ সংবাদ

About the Author ()

Leave a Reply