• ১৭ কার্তিক ,১৪৩১,01 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

বিশ্ব ইজতেমা শুরু: জুমার নামাজে লাখো মুসলি্ল

| জানুয়ারী 9, 2016 | 0 Comments

image_1422_217549দেশের খবর: টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুক্রবার শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফা। বাদ ফজর ভারতের মওলানা আব্দুর রহমানের আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার এ পর্ব। রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম দফা।

শুক্রবার ইজতেমা মাঠে দেশের সবচেয়ে বড় জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এ নামাজে অংশ নিতে ভোর থেকেই রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জসহ টঙ্গীর আশপাশের লক্ষাধিক মানুষ বিভিন্ন যানবাহনে করে ইজতেমাস্থলে এসে সমবেত হন। জুমার নামাজ শুরুর আগ পর্যন্ত মুসলি্লদের আসার এ স্র্রোত অব্যাহত ছিল। নামাজের পরই স্থানীয় মুসলি্লরা বাড়ি ফিরে গেলে ময়দান এলাকায় মুসলি্লদের চাপ কমে যায়।

এরই মধ্যে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান ইজতেমা ময়দানে এসে উপস্থিত হয়েছেন। প্রথম দফায় দেশের ১৭টি জেলার মুসলি্ল জেলাওয়ারি মাঠের ২৭টি খিত্তায় অবস্থান করছেন। বিগত বছরে ইজতেমার প্রথম দফায় ৪০খিত্তায় মুসলি্ল ছিল ৩২ জেলার এবং দ্বিতীয় দফায় ৩৯ খিত্তায় বাকি ৩২ জেলার মুসলি্ল অংশ নেন। কিন্তু এবার থেকে দুদফায় ৩২ জেলার মুসলি্ল অংশ নিচ্ছে। এবার প্রথম দফায় ঢাকাসহ ১৭ জেলা এবং দ্বিতীয় দফায় ঢাকাসহ ১৬ জেলার তাবলিগ সদস্য অংশ নিচ্ছেন।
ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে বিদেশি মেহমানদের জন্য টিনের বেড়া ও চাল দিয়ে সুরক্ষিত ক্যাম্প নির্মাণ এবং তাতে পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগ দেয়া হয়েছে।

বৃহত্তম জুমার নামাজ : বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফার শুরুর দিন শুক্রবার জুমা বার হওয়ায় ইজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় জুমার জামাত। দুপুর দেড়টায় ওই নামাজ শুরু হয়। এতে খুতবা ও ইমামতি করেন (কাকরাইল মসজিদের ইমাম) কারি জোবায়ের। জুমার নামাজ শেষ হয় দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে।
গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, ইজতেমায় যোগদানকারী মুসলি্ল ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার কয়েক লাখ মানুষ ইজতেমাস্থলে হাজির হন।

ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে ইজতেমা মাঠের দিকে মানুষ ছুটতে থাকেন। মাঠে স্থান না পেয়ে মুসলি্লরা মূল ময়দানের বাইরে যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হয়েছেন। নামাজ শেষে আবার মুসলি্লদের ময়দান এলাকা ত্যাগ করার প্রতিযোগিতা দেখা দেয়। এতে যানবাহনে ভিড় ও মহাসড়কে সাময়িক যানজট দেখা দেয়।

ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, তিন বছর ধরে জামাতবদ্ধ হয়ে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন। এবারো পাঁচ দিনের জামাতে এসেছেন। বিগত বছরের তুলনা এবার ময়দানের ভেতরের খিত্তায় মুসলি্লদের চাপ কম ছিল। এতে মুসলি্লদের অজু-গোসল ও রান্না-বান্নার কাজে তেমন ভোগান্তি হয়নি। তবে জুমার নামাজে অংশ নিতে বাইরের মুসলি্লরা সাময়িক ভিড় করেছিলেন।

গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকার ঠিকাদার মো. ওয়াসিম জানান, জুমার নামাজ পড়তেই শুধু এ ময়দানে এসেছেন। তাবলিগের সদস্যদের সঙ্গে মাঠে যোগ দিতে আসেননি। বিগত ২০ বছর ধরে তিনি এখানকার জুমার নামাজে অংশ নিচ্ছেন। এবার ময়দানে মুসলি্লদের চাপ কম।

বিশ্ব ইজতেমার মুরবি্ব প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, জেলা ও খিত্তাওয়ারি মুসলি্লর সংখ্যা এবার কম হওয়ায় মুসলি্লদের ভোগান্তিও অনেকটা কমেছে। তবে বিদেশি মুসলি্লদের সংখ্যার আগমনে কমতি ছিল না এবার।

এ ব্যাপারে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, ইজতেমা ময়দানের ভেতরে লোকসংখ্যা কম থাকলেও বাইরে কম নেই। তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের আয়োজনের কমতি নেই।

ভিআইপিদের অংশগ্রহণ : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, স্থানীয় সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুরের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ প্রমুখ গতকাল জুমার নামাজে অংশ নেন বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের বিশের শাখার পরিদর্শক মো. মোমিন মিয়া।

হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা : টঙ্গী হাসপাতাল ও সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে ৪টি মেডিকেল ক্যাম্পে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রায় ২ হাজার জন মুসলি্ল চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২ জনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে এবং প্রায় অর্ধশত জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. পারভেজ।

এদিকে টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি এমএ লতিফ জানান, সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও মুসলি্লদের চিকিৎসাসেবা দিতে ইজতেমা ময়দানে প্রায় অর্ধশত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে কাজ করছে।

ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা : শুক্রবার সকাল থেকে ইজতেমা ময়দান সংলগ্ন ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্পগুলোতে মুসলি্লদের চিকিৎসা নিতে ভিড় দেখা গেছে। মুসলি্লদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ময়দানের আশপাশে ও মন্নু নগর এলাকায় বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি পরিষদ, র‌্যাব’র ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্প, গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিস, টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, হামদর্দ ওয়াক্ফ, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিকেলস, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক কলেজ, হোমিওপ্যাথিক অনুশীলন কেন্দ্র, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি পরিষদ, জাতীয় ইমাম সমিতি, ইসলামী ফাউন্ডেশনের ইসলামী মিশন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। এলোপ্যাথি ছাড়াও মুসলি্লরা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিতে তাদের ক্যাম্পে ভিড় করেছেন। অসুস্থদের অধিকাংশই ঠা-া, সর্দি, কাশি, আমাশয়, শ্বাসকষ্টের রোগী।

বিদেশি তাঁবুতে গ্যাস সংকট : টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার মাঠে বিদেশি মেহমানদের তাঁবুর অস্থায়ী রন্ধনশালায় ‘গ্যাসের সরবরাহ কম’ বলে জানা গেছে। এজন্য বিদেশিদের জন্য খাবার রান্নায় বিঘি্নত হচ্ছে।

বিদেশি মেহমান তাঁবুতে রান্নার জামাতের জিম্মাদার মো. নুরুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকাল থেকে তাদের গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় রান্নায় সমস্যা হচ্ছে। গত দুদিন তেমন সমস্যা না হলেও আজ (শুক্রবার) সকাল সোয়া ১১টার দিকে হঠাৎ গ্যাসের চাপ কমে যায়। ফলে প্রায় ৭ হাজার বিদেশি মুসলি্লর খাবার তৈরিতে সমস্যা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাসের টঙ্গী (বিক্রয়) কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, তারা বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন।
র‌্যাবের ব্রিফিং

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেছেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্ব সমপ্রতি জঙ্গি হামলা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। সবাই জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করছে। অর্থাৎ জঙ্গি হামলার বিষয়টি কেউ উড়িয়ে দিচ্ছে না। আমরা সেই রকম প্রস্তুতি নিয়ে এখানে কাজ করছি। জঙ্গি হামলার আশঙ্কা মাথায় রেখেই আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। ইজতেমাস্থল ঘিরে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি।

শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ব ইজতেমার মাঠ সংলগ্ন মন্নুনগর এলাকায় স্থাপিত র‌্যাবের কন্ট্রোল রুমের সামনে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে এসব কথা জানান র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক। তিনি জানান, ইজতেমার ১৮টি প্রবেশ পথে এবং মেহমানখানায় সিসি টিভি আছে। ৩৮টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো ইজতেমা ময়দান পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

জিয়াউল আহসান আরো বলেন, বিশ্বে ইজতেমায় যারা এসেছেন, সবাই মিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করলে যেকোনো হামলা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, ২০০৫ সালের পর থেকে যেভাবে জঙ্গি হামলা শুরু হয়েছিল তা আপনাদের সবার উদ্যোগে একত্রিত হওয়াতেই বন্ধ করা গেছে। ইজতেমা ময়দানে র‌্যাব দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করছে। পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করার জন্য আমাদের নয়টি অবজারভেশন পোস্ট রয়েছে। পর্যবেক্ষণ চকি থেকে ইজতেমার ভেতরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আভাস পেলে তার প্রতিরোধ ব্যবস্থা করা হবে। ইজতেমা ময়দানের আশপাশে আগত মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য র‌্যাবের বিশেষ মহিলা টিমও নিয়োজিত রয়েছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালত
ইজতেমা মাঠের আশপাশ এলাকায় হোটেল রেস্তোরাঁ শুক্রবার দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ভেজাল ও ক্ষতিকর খাদ্যদ্রব্য রাখা ও বিক্রয়ের অভিযোগে ভোক্তা অধিকার আইনে ১২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা ও আদায় করেছেন বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল ইসলাম।

হেলিপ্যাড ঃ দুর্ঘটনা ও ভিআইপি বহনের জন্য টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে একটি হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হয়েছে বলে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার জানান।

যৌতুকবিহীন বিয়ে আজ : ইসলামিক শরিয়া অনুযায়ী আজ বাদ আসর যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। সকাল থেকে ওইসব বিয়ের জন্য বয়ান মঞ্চের কক্ষেই বর-কনের নাম তালিকাভুক্ত করা হবে।

ইজতেমার মুরবি্বদের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমার আয়োজন শুরু করা হয়। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সরকারিভাবে তুরাগতীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।

তিন মুসলি্লর মৃত্যু: টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম পর্বে অংশ নেয়া তিন মুসলি্ল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত মারা গেছেন। এরা হলেন_ সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার রনকলি এলাকার জয়নাল আবেদীন (৫৫), কুড়িগ্রমের উলিপুর উপজেলার চকলাপাড় গ্রামের নূরুল ইসলাম (৭২) ও নাটোরের সিংড়া উপজেলার বটিয়া গ্রামের ফরিদ উদ্দিন (৬৫)।

লাশের জিম্মাদার আদম আলী জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাতের বিভিন্ন সময়ে ওই তিন মুসলি্ল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফরিদ উদ্দিন, রাত ১১টার দিকে নূর ইসলাম ও রাত পৌনে ১টার দিকে জয়নাল আবেদীন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইজতেমা ময়দানে মারা যান। ইজতেমা ময়দানে জানাজার পর তাদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর, শীর্ষ সংবাদ

About the Author ()

Leave a Reply