আজকের খুলনা ০৪মার্চ -২০১৩ (সোমবার),এম শিমুল খান, খুলনা অফিস
সড়ক অবরোধ গাড়ি ভাংচুর ও গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে খুলনায় দ্বিতীয় দিনের হরতাল পালিত
ঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর বিশ্ব বরেণ্য মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় বাতিল এবং তার মুক্তির দাবিতে দলের ডাকা ৪৮ ঘন্টা হরতালের দ্বিতীয় দিন সোমবার সড়ক অবরোধ গাড়ি ভাংচুর ও গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে। হরতাল চলাকালে খুলনার অফিস আদালত, ব্যাংক বীমার প্রধান দরজা বন্ধ ছিল। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিপনীবিতান, শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। সীমিত আকারে রিক্সা-ভ্যান চললেও কোন ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল করেনি। লঞ্চ ও ট্রেন নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাতে খুলনায় ছয় প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এরমধ্যে মহানগরীর পাঁচ থানায় তিন পাটুন ও জেলার তিন উপজেলায় তিন পাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে জানানো হয়েছে, নগরীতে ৯০ সদস্যের তিন পাটুন বিজিবি মোতায়েন আছে। জেলা কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, জেলার ডুমুরিয়া, পাইকগাছা ও কয়রায় ৬০ সদস্যের তিন পাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া হরতালে বিভিন্ন স্তরে মহানগরীতে ১৩ শ’ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও বৃদ্ধি করা হয়েছে। নগরীর রয়্যাল মোড়, ডাকবাংলো মোড়, সোনালী ব্যাংক চত্বর, ফেরিঘাট মোড়, পিকচার প্যালেস মোড়, পাওয়ার হাউজ মোড়, ময়লাপোতা মোড়, শিববাড়ি মোড়, পশ্চিম রূপসা ঘাট, শামসুর রহমান রোড, বৈকালী মোড়, বয়রা মোড়, নিরালা, গলামারী মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অস্ত্রধারী বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। জামায়াতে ইসলামীর ডাকা ৪৮ ঘন্টার হরতালের দ্বিতীয় দিন গতকাল সোমবার ভোর থেকেই খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবির নগরীর বিভিন্ন স্থানে মিছিল, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে পিকেটিং করে। একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখে। প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে অবরোধ করে রাখার ফলে রাস্তার দুই ধারে বহু যানবাহন আটকে পড়ে। এখানে নেতৃত্বে ছিলেন মহানগরী সাংগঠনিক সম্পাদক মিম মিরাজ হুসাইন, মহিউল ইসলাম, তানজিল, হাফিজ প্রমুখ। এখান থেকে ছাত্রলীগ ও পুলিশ বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে সুজন ও রাশেদ নামের দুই শিবির কর্মীকে দৌলতপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরে তাদেরকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। এই নির্যাতন ও গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের খুলনা মহানগরী সভাপতি সাঈদুর রহমান ও সেক্রেটারি আজিজুল ইসলাম ফারাজী। খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি এলাকায় খুলনা-পাইকগাছা সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে অবরোধ করে রাখে স্থানীয় জনতা ও সাঈদী ভক্তরা। এর ফলে খুলনা থেকে পাইকগাছা ও কয়রার নৌ ও সড়ক পথ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। হরতালের সমর্থনে সকালে পাইকগাছায় মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির ও সাঈদী ভক্তরা। পাইকগাছা থেকে শুরু করে কপিলমুনি পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার ও কয়রা চাঁদআলী বাজারের আশপাশ প্রায় ৩ কিলোমিটার গাছের গুড়ি, বিদ্যুতের খুটি, ইটপাটকেল ফেলে রাখা হয়েছে খুলনা-কয়রা সড়কে। এখানে কিছুন পরপর টায়ার জ্বালিয়ে বিােভ করে তারা। এসময় পুলিশ সড়কে আসতে সাহস পায়নি। এলাকার আওয়ামী লীগসহ বামপন্থী কোন নেতাকে এলাকায় দেখা যায়নি। এদিকে হরতালের আগের রাতে খুলনা জেলার ফুলতলায় ১০/১৫টি ককটেল বিষ্ফোরণ হয়েছে বলে সেখানকার বাসিন্দারা জানান।
ডুমুরিয়া উপজেলার কাটেঙ্গা বাজারে হরতালের সমর্থনে বিােভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এখানে পিকেটাররা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখে। চুকনগর এলাকার দেয়াড়াতলা থেকে ১৮ মাইল পর্যন্ত গাছের গুড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে খুলনা-সাতীরা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। রূপসা উপজেলার কুদির বটতলা এলাকায় খুলনা-মংলা মহাসড়কে গাছের গুড়ি ও টায়াতে আগুন জ্বালিয়ে বিােভ করে। তেরখাদা উপেলার নেবুদিয়া বাজারে বিােভ মিছিল ও খুলনা-তেরখাদা সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এখানে একটি বাসসহ চারটি গাড়ি ভাংচুর করে বিােভ করে সাঈদী ভক্তরা। খানজাহান আলী থানার শিরোমনি এলাকায় মিছিল বের করলে পুলিশের সাথে শিবির কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে এখানে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া নগরীর দৌলতপুর থানাধীন নতুন রাস্তা মোড়ে গতরাতে গাছের গুড়ি ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু ভোর হতে না হতেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় পুলিশ সেগুলো সরিয়ে ফেলে। একই সময় খুলনা মেডিকেল কলেজ এলাকায় পুলিশের গাড়ি ল্য করে হরতাল সমর্থকরা ইট-পাটকেল নিপে করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। তবে এখানে কোন হতাহত বা গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি। সকাল ৭টায় নগরীর আহসান আহমেদ রোডস্থ খুলনা সরকারী করোনেশন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আতংক সৃষ্টি করা হয়। পরে কেএমপির উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। অপরদিকে জামায়াতের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল সফল করতে নগরীতে খুলনা মহানগরী জামায়াত বিােভ মিছিল ও পিকেটিং করেছে। এতে নেতৃত্ব দেন মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সদর থানা সেক্রেটারি মাওলানা অলিউলাহ, সহকারী সেক্রেটারি অধ্য মুস্তাফিজুর রহমান টিংকু, আব্দুস সামাদ, খান সালাহ উদ্দীন, মোঃ তানভির, মনিরুল ইসলাম, নাজমুস সাকিব, রহমত উলাহ, মোঃ আলী হায়দার প্রমুখ। নগরীর রূপসা, পিটিআই মোড়, থানার মোড়, ডাকবাংলা, সোনাডাঙ্গা, শেখ পাড়া মোড়, মোল্লাবাড়ীর মোড়, শিববাড়ি, ময়লাপোতা, নতুন রাস্তার মোড়, বৈকালী মোড়, বয়রা মোড়, লিবার্টি মোড়, মহসীন মোড়, সোনাডাঙ্গা বাসষ্টান্ড, টুটপাড়া কবর খানা মোড়, গল্লামারী, চানমারী, রূপসা ব্রীজ, বিশ্ব রোড এলাকায় মিছিল ও পিকেটিং করে। এছাড়াও বিভিন্ন থানায় পিকেটিংসহ বিােভ মিছিল করেছে। এসব মিছিলে উপস্থিত ছিলেন আক্তার হোসেন, আবুল হাসান, আসলাম হোসেন, কামরুল ইসলাম, সালাহা উদ্দীন, মোমরেজুল ইসলাম, শাহাদৎ হোসেন, আলফিদা হোসেন, ইকবাল হোসেন, তাসনীম, এ কে এম তানজিম, হাফিজুর রহমান, মোশাররফ আনসারী প্রমূখ। ডুমুরিয়ায় পুলিশ-জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষ ঃ খুলনার ডুমুরিয়ায় উপজেলার ধামালিয়া ইউনিয়নের ছয়বাড়িয়া গ্রামীণ সড়ককে হরতালের সমর্থনে জামায়েত-শিবির মিছিল বের করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশের ২ সদস্য শরিফুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলামসহ ১০-১৫ জন শিবিরকর্মী আহত হয়। ঘটনা স্থল থেকে পুলিশ ৫ শিবির কর্মী জসিম উদ্দিন, আবুল কাশেম, আব্দুর রহিম, জয়নাল পাড়, আব্দুল আজিজ সানাকে আটক করে এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রোববার সকালে ১০১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫০ জন জামায়াত-শিবির নেতা কর্মীদের নামে ১টি মামলা দায়ের করেছেন। ডুমুরিয়া থানার ওসি এম, মশিউর রহমান জানান, ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়া ইউনিয়নের ছয়বাড়িয়া গ্রামীণ সড়ক নামক স্থানে মহিলাসহ প্রায় ৪-৫শ’ জামায়েত-শিবিরের নেতা কর্মী জড়ো হয়ে মিছিল বের করার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পুলিশকে ল্য করে বোমা ও ইট-পাটকেল নিপে করে। এ সময় ২ পুলিশ সদস্য আহত হয়। তখন পুলিশ ৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে জামায়াত-শিবির কর্মীদের ছত্র-ভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। সুশৃংখল ও শান্তিপূর্ণ ২য় দিনের হরতাল সফল হওয়ায় নগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে খুলনা মহানগরী জামায়াতের আমীর মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও সেক্রেটারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। হরতাল বিরোধী মিছিল পূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মিজানুর রহমান মিজান। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগ নেতা কাজী এনায়েত হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হাদী, এমডিএ বাবুল রানা, হুমায়ুন কবির ববি, শ্যামল সিংহ রায়, মোঃ মাহবুব আলম সোহাগ, প্যানেল মেয়র আজমল আহমেদ তপন, এডভোকেট সাইফুর ইসলাম, ওর্য়াার্কাস পার্টির মফিদুল ইসলাম, এডভোকেট সরদার আনিসুর রহমান পপলু, কামরুজ্জামান জামাল, কাউন্সিলর আলী আকবর টিপু, আকতারুজ্জামান বাবু, কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডন, হাফেজ মোঃ শামীম, তসলিম আহমেদ আশা, শেখ মোঃ আবু হানিফ, শফিকুর রহমান পলাশ, শেখ ফারুখ হাসান হিটলু, ফয়েজুল ইসলাম টিটো প্রমুখ।
খুলনায় বিএনপির বিােভ সমাবেশ হরতালের সমর্থনে
ঃ ব্যর্থ, অযোগ্য, লুটেরা তাবেদার সরকার মতা চিরস্থায়ী করতে পুলিশ-র্যাব-বিজিবি লেলিয়ে দিয়ে গণহত্যা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে বলে অভিযোগ করেছেন খুলনার বিএনপি নেতারা। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির প্রোপটে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার সরকারকে হঠাতে মঙ্গলবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল সর্বাত্মকভাবে সফল করতে খুলনাবাসীর প্রতি বিএনপি নেতারা আহবান জানিয়েছেন। হরতালের সমর্থনে এবং দেশব্যাপী জুলুম-নির্যাতন ও ধর্মপ্রান মুসল্লীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শতাধিক নারী-পুরুষ-শিশু হত্যার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার বিকেলে নগরীর কে ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত বিােভ সমাবেশে সভাপতির বক্তৃতায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপি এসব কথা বলেন। একই সময়ে খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহানআলী থানা বিএনপির উদ্যোগে স্ব-স্ব থানা এলাকায় বিােভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মহানগর বিএনপির সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে দূর্বল করতে সরকারের অপকৌশলে রাজধানীতে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতাদের নামে মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন মামলা হয়েছে। খুলনাতেও বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলাকারী যুবলীগ ক্যাডারদের প্রতিহত না করে পুলিশ গুলি চালিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের আহত করার সাথে সাথে দু’ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। বিতর্কিত ওসি এস এম কামরুজ্জামান, এস আই আলমগীরসহ যে সব অতি উৎসাহি পুলিশ সদস্য এহেন ঘৃন্য তৎপরতায় লিপ্ত তাদেরকে অচিরেই বিচারের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। বক্তারা বলেন, ধর্ম নিরপেতার নামে ধর্মহীনতার বিষাক্ত বীজ সরকার শাহবাগসহ সারা দেশে রোপন করেছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্বিচারে আলেম ওলামাদের হত্যা করা হচ্ছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গনগ্রেফতার ও পেন্ডিং মামলায় আসামি করা হচ্ছে। এসব অত্যাচার নির্যাতন করে মহাজোট সরকারের পতন ঠেকানো যাবে না বলে তারা হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। মহানগর বিএনপির বিােভ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম নূরুল ইসলাম দাদু ভাই। বক্তব্য রাখেন, মনিরুজ্জামান মনি, সাহারুজ্জামান মোর্তুজা, সৈয়দা নার্গিস আলী, জাফর উল্লাহ খান সাচ্চু, সিরাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট বজলার রহমান, অ্যাডভোকেট এম এ আজিজ, অ্যাডভোকেট এস আর ফারুক, রেহেনা আক্তার, ফখরুল আলম, মাহবুব কায়সার, নজরুল ইসলাম বাবু, আব্দুর রহিম বক্স দুদু, মেহেদী হাসান দিপু, ইউসুফ হারুন মজনু, একরামুল হক হেলাল, আরিফুজ্জামান আরিফ প্রমুখ।
সুস্থ সবল মেধা বিকাশে প্রতিটি মানুষের প্রতিদিনই সঠিক মাত্রায় আয়োডিন গ্রহণ করা প্রয়োজন————-খুলনা সিটি মেয়র
ঃ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছেন, সুস্থ সবল মেধা বিকাশে প্রতিটি মানুষের প্রতিদিনই সঠিক মাত্রায় আয়োডিন গ্রহণ করা প্রয়োজন। দেশের পুষ্টির অভাবজনিত সমস্যাগুলির মধ্যে আয়োডিন ঘাটতি অন্যতম প্রধান সমস্যা। তিনি স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন ও মেধাভিত্তিক জাতি গঠনে আয়োডিনের ঘাটতি মেটাতে লবন মিল মালিক, ব্যবসায়ী এবং সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সকল পেশাজীবীকে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহবান জানান। খুলনা সিটি মেয়র সোমবার সকাল ৯টায় খুলনা মহানগরীর সিএসএস আভা সেন্টারে ‘সার্বজনীন আয়োডিনযুক্ত লবন নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক পলিসি ডায়ালগ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ইনিসিয়েটিভ (এমআই)-এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ ুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) সিআইডিডি প্রকল্পের আওতায় দিনব্যাপী এ কর্মশালার আয়োজন করে। সিটি মেয়র আয়োডিন গ্রহণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, সাধরণত লবনের মাধ্যমে আমাদের শরীরে আয়োডিন প্রবেশ করে থাকে। কিন্তু খুলনার কিছু অঞ্চলে লবন চাষ হওয়ায় এখানে আয়োডিন বিহীন খোলা লবন বিক্রীর হার বেশী। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের দেহে আয়োডিনের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম। খুলনার জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন-এর সভাপতিত্বে কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন এমআই-বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার প্রকৌশলী আশেক মাহফুজ ও বিসিক-এর আঞ্চলিক পরিচালক শেখ কবির উদ্দিন। কর্মশালায় স্বাগত বক্তৃতা করেন সিআইডিডি প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক আবু জামিল। কর্মশালায় সরকারি কর্মকর্তা, শিাবিদ উন্নয়নকর্মী সহ লবন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, খুলনাঞ্চলে ২২% নারী ও শিশু আয়োডিন স্বল্পতায় ভুগছে বলে কর্মশালায় উল্লেখ করা হয়।
খুলনায় বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে জামায়াতের হরতাল চলছে
ঃ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় বাতিল এবং তার মুক্তির দাবিতে দলের ডাকা ৪৮ ঘন্টার হরতালের দ্বিতীয় দিন সোমবার বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে খুলনায় চলছে। হরতালের আগের রাতে জেলার ফুলতলায় ১০/১৫টি ককটেল বিষ্ফোরন হয়েছে বলে সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন। এছাড়া খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর থানাধীন নতুন রাস্তা মোড়ে রবিবার রাতে গাছের গুড়ি ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় হরতাল সমর্থকরা। কিন্তু ভোর হতে না হতেই স্থানীয় মতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় পুলিশ সেগুলো সরিয়ে ফেলতে সম হয়। ভোর রাতে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ আল-ফারুক সোসাইটির সামনে পুলিশের গাড়ি ল্য করে হরতাল সমর্থকরা ইট-পাটকেল নিপে করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। কিন্তু পুলিশ সেখান থেকে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
সোমবার সকাল ৭টায় খুলনা মহানগরীর আহসান আহমেদ রোডস্থ খুলনা সরকারী করোনেশন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে খুলনা মহানগর জামায়াতের একটি মিছিল বের হয়। পরে সেখানে আগুন ধরিয়ে আতংক সৃষ্টি করা হয়। কেএমপির উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে সেখান থেকেও কোন গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি। জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি এলাকায় খুলনা-পাইকগাছা সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে অবরোধ করে রাখা হয়েছে। রুপসার খুদির বটতলা এলাকায় খুলনা-মংলা মহাসড়কে গাছের গুড়ি ফেলে সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত দু’ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে হরতাল সমর্থকরা। ডুমুরিয়ার আঠারোমাইল নামক স্থানে সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত দু’ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে এবং ৪টি মাইক্রোবাস ও পিকআপ ভাংচুর করা হয়। তেরখাদার কাটেঙ্গা বাজারে সকাল ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত এক ঘন্টা সড়ক অবরোধ করা হয়। এ সময় একটি যাত্রীবাহি বাস ভাংচুর করা হয়। এছাড়া হরতাল চলাকালে প্রথম দিনের ন্যায় সোমবার সকাল থেকে দূর পাল্লার কোন যানবাহন ছেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে খুলনা মহানগরীতে রিক্সা-ভ্যান-ইজিবাইক ও কিছু বেবী ট্যক্সি চলাচল করেছে। অপরদিকে খুলনা মহানগর জামায়াতের প্রচার সেক্রেটারী মোঃ মুনীর হোসেন লিটন স্বারিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে এবং সারা দেশে হরতালের ১ম দিনে জামায়াতে ইসলামীর ৩০/৩৫ জন নেতা-কর্মী পুলিশের হাতে নির্বিচারে গুলিতে নিহত ও গত পরশু দিন বিভিন্ন জেলায় একশ’ থেকে ১২০ জন নিহত হওয়ার প্রতিবাদে কেন্্র ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সোমবার হরতালেল ২য় দিন সকাল-সন্ধ্যা হরতাল সফল করতে খুলনা মহানগরীতে এক বিােভ মিছিল ও পিকেটিং অনুষ্ঠিত হয়। বিােভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগর সহকারী সেক্রেটারী আইনজীবী শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদর থানা সেক্রেটারী মাওলানা অলিউল্লাহ, সহকারী সেক্রেটারী অধ্য মুস্তাফিজুর রহমান টিংকু, আব্দুস সামাদ, খান সালাহ উদ্দীন, মোঃ তানভির, মনিরুল ইসলাম, নাজমুস সাকিব, রহমত উল্লাহ, মোঃ আলী হায়দার প্রমুখ। খুলনা মহানগরীর রূপসা, পিটিআই মোড়, থানার মোড়, ডাকবাংলা, সোনাডাঙ্গা, শেখ পাড়া মোড়, মোল্লাবাড়ীর মোড়, শিববাড়ি, ময়লা পোতা, নতুন রাস্তার মোড়, বৈকালী মোড়, বয়রা মোড়, লিবার্টি মোড়, মহসীন মোড়, সোনাডাঙ্গা বাসষ্টান্ড, টুটপাড়া কবর খানা মোড়, গল্লামারী, চানমারী, রূপসা ব্রীজ, বিশ্ব রোড এলাকায় মিছিল ও পিকেটিং করে বলেও প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
খুলনার ফুলতলায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ৯৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ঃ খুলনার ফুলতলায় পুলিশের ওপর হামলা, সরকারী কাজে বাঁধা এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযোগ এনে ৫০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৯৫০ জনকে আসামী করে ফুলতলা থানায় মামলা করা হয়। ফুলতলা থানার এস আই উজ্জল বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ ১২ জন জামায়াত-শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। ফুলতলা থানার নবাগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবীর দত্ত জানান, রোববার উপজেলার যুগ্নিপাশা থেকে হরতাল সমর্থনে ছাত্র শিবিরের একটি মিছিল বের হয়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার পরে পুলিশ বাঁধা দেয়। মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ ১৬০ রাউন্ড রাবার বুলেট, ৮ রাউন্ড টিয়ার সেল নিপেসহ ফাঁকা ২ রাউন্ড চায়না রাইফেলের গুলিবর্ষণ করে। একে অপরকে দীর্ঘ সময় ধরে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে পুলিশের গুলি ফুরিয়ে গেলে আত্মরার্থে পালানোর চেষ্টা করে। তারা এক পর্যায়ে লাফিয়ে পুকুরে পড়ে বলে আহতদের সূত্র জানিয়েছেন। সুযোগ বুঝে প্রতিপ ধারালো দা দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে। এতে ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ, এ এস আই জাহিদ, নায়েব কেরামত আলী, এস আই কামাল এবং কনস্টেবল সেলিম আহত হয়। এদের মধ্যে এস আই কামালকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং বাকী ৪ জনকে গুরুত্বর অবস্থায় খুমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি জানান, বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদসহ আহত পুলিশ সদস্যরা সুস্থ রয়েছেন। এ হামলার অভিযোগে রাতে পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের রিপন শেখ, নাজিম উদ্দিন, শামীম শেখ, আল আমিন মোল্লা, হোসাইন হোসেন সজল, আনোয়ার বিশ্বাস, মোল্লা শওকত হোসেন, মাহবুবুর রহমান, রুবেল বিশ্বাস, এস এম ইউসুফ, ফারুক শেখ, মফিজুর রহমান শেখকে গ্রেফতার করে। বতর্মানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন জামায়াত-শিবির কর্মীদের আটকের নামে পুলিশ নিরীহ লোকদের হয়রানী করছে।
খুলনা-ইশ্বরদী ট্রেন লাইন মেরামত চলছে
ঃ সোমবার সকালে খুলনায় নাশকতার উদ্দেশ্যে লাইন উপড়ে ফেলেছে জামাত-শিবির। বর্তমানে খুলনা-ইশ্বরদী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সোমবার সকাল পৌনে ১০টায় বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ৯টা থেকে মেরামতের কাজ চলছে। জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর থেকেই ট্রেনের বগি ও রেল লাইনগুলোতে হামলা, উপড়ে ফেলা হয়। এসব ঘটনার পেছনে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন শিবিরের সংশ্লিষ্ঠতার কথা জানিয়েছে পুলিশ ও রেল কর্মকর্তারা।
Category: দেশের খবর