• ১৯ বৈশাখ ,১৪৩১,02 May ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

ছেলে তানজিম হায়দারের চোখে বাবা এস এইচ হায়দার

| ফেব্রুয়ারী 21, 2022 | 0 Comments

বামে আমি ভয়াজের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম এস এইচ হায়দার এবং ডানে আমি ভয়াজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তানজিম হায়দার হোসেন

মরহুম এস এইচ হায়দার ফ্রান্সে বাংলাদেশ কমিউনিটির একজন সদা হাস্যজ্বল এবং অত্যন্ত অমায়িক মানবিক মানুষ হিসেবে কমিউনিটির দল মতের উর্ধ্বে সকলের নিকট অতি প্রিয়ভাজন ছিলেন। নিজের মেধা,যোগ্যতা সততার সাথে কঠোর পরিশ্রমের সংমিশ্রণে ধীরে ধীরে যিনি ফ্রান্সের মতো একটি উন্নত ও ব্যায়বহুল দেশে নিজেকে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলেছেন।যিনি তিলে তিলে রাজধানী প্যারিসে গড়ে তুলেছেন ফ্রান্সের মাটিতে বাংলাদেশী মালিকানায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ ট্রভেল এজেন্সি “আমি ভয়াজ”। যাকিনা এস এইচ হায়দারের দক্ষ পরিচালনায় সুনামের সাথে ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশী সহ প্রায় সকল দেশের মানুষকে প্রায় ২০বছর ভ্রমন সেবা সহ ওমরা ভিসা,ভ্রমণ ভিসা সহ বিভিন্ন যাবতীয় ভিসা ও ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত সহায়তা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসার পাশাপাশি এস এইচ হায়দার ছিলেন একজন দানশীল ও মানবিক মানুষ। ফ্রান্সে বাংলাদেশী কমিউনিটি প্রতিষ্ঠায় তাঁর ছিলো অসামান্য অবদান। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি চর্চায় অর্থ পরামর্শ ও সাহস দিয়ে ফ্রান্সে একটি শক্ত বাংলাদেশী কমিউনিটি গড়তে যিনি সবসময়ে একজন দক্ষ অগ্রজের ভূমিকায় ছিলেন। বিদেশের মাটিতে ফ্রন্সে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি সহ জাতীয় দিবস গুলো উদযাপনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য উবারভিলিয়ে বাংলাদেশী জামে মসজিদ, স্তা মসজিদ ও হোশের মসজিদ সহ বিভিন্ন জায়গায় মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণে ব্যপক আর্থিক অনুদান দিয়ে মুসলিম ধর্মপ্রাণ মানুষদের ধর্মীয় শিক্ষা ও ধর্ম পালন সহজ করতে সহায়তার হাত উদার ভাবে প্রসারিত করেছিলেন। ফ্রান্সে এস এইচ হায়দার নিজের মানবিকতা, ভালোবাসা ও সদাহাস্যজ্বল ব্যবহার দিয়ে কমিউনিটির বাংলাদেশীদের মন জয় করে প্রায় তিন যুগেরও বেশী সময় ধরে কমিউনিটি সেবা করেছেন। কিন্তু সেদিন আকাশে মেঘের ছিলো ঘনঘটা, কে জানতো এই মেঘ ফ্রান্সের কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণের পূর্বাভাস। সকলকে কাঁদিয়ে ১অক্টোবর ২০২০ সালে মাত্র ৬০(ষাট) বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধি ব্রেইন টিউমারের কাছে পরাজিত হয়ে ফ্রান্সের একটি মেজো ম্যাডিকেলে এই ক্ষণজন্মা জীবনের শেষ নিস্বাস ত্যাগ করেন। এস এইচ হায়দারের মৃত্যুতে পরিবার সহ গোটা কমিউনিটিতে নেমে আসে শোকের ছায়া। মৃত্যু কালে তিনি স্ত্রী আবরিনা হোসেন ও দুই ছেলে তানজিম হায়দার হোসেন ও তাসিফ হায়দার হোসেন সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।

আজকে ইউরোবিডি24নিউজ এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউতে মরহুম এস এইচ হায়দারের সংক্ষিপ্ত জীবনী জানার চেষ্টা করবো তাঁর বড় ছেলে ও আমি ভয়াজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তানজিম হায়দার হোসেনের কাছে।

তানজিম হায়দার হোসেন আপনাকে স্বাগতম আপনি কেমন আছেন? জ্বি ধন্যবাদ, ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।

আপনার বাবা এস এইচ হায়দার হোসেন কত সালে কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? তিনি ১৯৬০ সালে ফেনী জেলার বটতলী এলাকায় একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে বাবা এডভোকেট হাবীব উল্যা মজুমদার ও মা নূরজাহান হাবীবের ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন।

জনাব এস এইচ হায়দারের শিক্ষাজীবন সম্পর্কে বলুন? তিনি ফেনী পাইলট হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও চট্রগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে ম্যানেজমেন্টে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।

আপনার বাবা প্যারিসে কখন আসেন? তিনি ১৯৮৫ সালে প্যারিস আসেন এবং ধীরে ধীরে নিজেকে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তোলেন। প্যারিসের ১০ আরোন্দিসমো এলাকায় ২০০২ সালে গড়ে তোলেন “আমি ভয়াজ” নামে ট্রাভেল এজেন্সি যা ২০২২ সালের জুন মাসে ভ্রমণ সেবায় ২০ বছর অতিক্রম করবে।

তানজিম আপনার বাবা জনাব এস এইচ হায়দার ও মা আবরিনা হোসেন কত সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন? ১৯৮৯ সালে আমার বাবা মা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

আপনার মা আবরিনা হায়দার সম্পর্কে কিছু বলুন? আমার মায়ের বাবার বাড়ি লক্ষীপুর হলেও তিনি জন্মগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম। আমার নানা রেহান উদ্দীন পিডব্লিউ এর একজন প্রকৌশলী ছিলেন এবং নানীর নাম পেশোয়ারা বেগম।

জনাব এস এইচ হায়দারের কয় সন্তান অর্থাৎ আপনারা কয় ভাই বোন? আমরা দুই ভাই, আমি বড় তানজিম হায়দার হোসেন এবং আমার ছোট ভাই তাসিফ হায়দার হোসেন। আমাদের কোনো বোন নেই।

আপনার পড়াশোনা এবং কি করছেন? আমি ক্রেতাই ইউনিভার্সিটি থেকে অডিটে মাস্টার্স করেছি। এখন বাবার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান “আমি ভয়াজ” এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।

আপনার ছোট ভাই তাসিফ হায়দার হোসেনের পড়াশোনা সম্পর্কে বলুন? তাসিফ পড়াশোনা শেষ করে বিখ্যাত সুজ কোম্পানি কুরিয়েতে ডিজিটাল প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।

আপনার বাবা এস এইচ হায়দারের কমিউনিটি সেবা সম্পর্কে কিছু বলুন? উনি বাংলাদেশের মানুষ ও সংস্কৃতিকে খুব ভালবাসতেন। ২১শে ফেব্রুয়ারিসহ বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলো পালনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করতেন। এছাড়া উবারভিলিয়ে বাংলাদেশী জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠায় ওনার বড় কন্ট্রিবিউশান আছে। হোশের মসজিদে মুসল্লীদের কষ্ট লাঘব করতে এসি লাগিয়ে দেন। স্তা মসজিদে বাবা,মা ও আমাদের দুই ভাইয়ের নামে একটা কক্ষের সম্পূর্ণ খরচ দান করেন। এছাড়া বাবার অনেক ভালো কাজের কথা কমিউনিটির মানুষরা বলেন। আল্লাহ যেনো এসব ভালো কাজের বিনিময়ে আমার বাবাকে ক্ষমা করে জান্নাত নসিব করেন।

এছাড়া এস এইচ হায়দার দেশে কোন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন? জ্বি তিনি আমার দাদার বাড়ি ফেনী জেলার বটতলী এলাকায় মসজিদ এবং মাদ্রাসা(এতিমখানা) প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।

আমরা যতদূর জানি জনাব এস এইচ হায়দার দুরারোগ্য ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন, ওনার অসুস্থতার বিষয়ে বলুন? বাবা ২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যে একটি ব্যবসায়িক সভায় যোগ দিতে গেলে হঠাৎ লন্ডনে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা দ্রুত রয়াল লন্ডন হসপিটালে নিয়ে যাই, সেখানেই প্রথম বাবার ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে।আমরা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। নিশ্চিত হতে ফ্রান্সে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় ডাক্তাররা একই কথা বলেন ওনার ব্রেইন টিউমার। আরো নিশ্চিত হতে ভারতেও পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়, সেখানেও একই কথা বলেন ডাক্তাররা যে ওনার নিশ্চিত ব্রেইন টিউমার। তার অবশেষে ফ্রান্সের মঁ পলিয়ে শহরের একজন বিখ্যাত সার্জনের হাতে ওনার ব্রেইন টিউমার সার্জারি হয়। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিয়ে ভালো ছিলেন। হঠাৎ ২০১৮ সালে ওমরা হজ্জে গেলে সেখানে অসুস্থ হয়ে যান। ওমরা শেষে ফ্রান্সের আসার ১০ দিনের মাথায় আরও সিরিয়াস অসুস্থ হয়ে যান। এরপর কিছুটা সুস্থ হলেও আর খুব একটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। ২০২০ সালের অক্টোবরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফ্রান্সের ভিলজুইফের একটি মেজো হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।

মরহুম এস এইচ হায়দারকে কোথায় কবরস্থ করা হয়? ২০২০সালে ৫ অক্টোবর আমরা বাবার লাশ বুঝে পাই। উবারভিলিয়ে বাংলাদেশী জামে মসজিদে বাবার প্রথম নামাজে জানাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং স্তা মসজিদে ২য় জানাজা শেষে ভাল দো মার্ন জেলার “সিমেতিয়ার শোয়াজি” কবরস্থানে দাফন করা হয়। যদিও বাবার ইচ্ছা ছিলো দেশে কবরস্থ করার কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। তবে বাবার কবর এদেশে বাসার কাছে হওয়াতে প্রায় জুমার নামজ পড়ে কবর জিয়ারত করার সৌভাগ্য হয়।

জনাব তানজিম আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সময় দেয়ার জন্য, আপনি ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটির উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান? আপনাকেও ধন্যবাদ, কমিউনিটির উদ্দেশ্যে বলবো, আমার বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন, আল্লাহ যেনো তাঁর ভালো কাজগুলোর বিনিময়ে ক্ষমা করে জান্নাত নসিব করেন।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন ইউরোবিডি24নিউজ এর সম্পাদক ইমরান মাহমুদ।

Category: Community news 1st page, Scroll_Head_Line, ইউরোবিডি কমিউনিটি সংবাদ, এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ

About the Author ()

Leave a Reply