যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্বের জন্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে
আন্তর্জাতিক: অভিবাসন সংস্কার আইন পাস করার দাবিতে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ হয়েছে। প্রস্তাবিত অভিবাসন বিলটি অনুমোদনের জন্য কংগ্রেসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সমন্বিত এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ অংশ নেয়।
মার্কিন আইনপ্রণেতারা আশা করছেন, অভিবাসন বিলটি শিগগিরই কংগ্রেসে উত্থাপিত হবে। বিভক্ত কংগ্রেসে এটি অনুমোদনও পেতে পারে। এটি পাস হলে এক কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাবেন, যাঁদের বেশির ভাগই হিস্পানিক। তা ছাড়া এই আইনের আওতায় বৈধ অভিবাসীরাও বিশেষ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিপাবলিকানরা নীতিগতভাবে অভিবাসন আইনটির বিরোধিতা করলেও বিশালসংখ্যক হিস্পানিক ভোটারকে ভাগে টানতে তাঁরা এই বিলে সম্মতি জানাতে পারেন। এই হিস্পানিক জনগোষ্ঠীর একচেটিয়া ভোটেই পরপর দুবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন বারাক ওবামা।
অবশ্য এই আইনের বিরোধিতা করছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। আইনটির বিরোধিতাকারীরা বলছেন, বিলটি পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক সংকট দেখা দেবে। তা ছাড়া অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যাও দেশটিতে বেড়ে যাবে। বেসামরিক অধিকার সংগঠন ‘নাম্বারস ইউএসএ’র প্রেসিডেন্ট রায় বেক বুধবার এক বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যাঁরা পূর্ণকালীন চাকরি পাননি, সেই দুই কোটি মার্কিন নাগরিকেরও প্রতিবাদ সমাবেশ করা উচিত।’
অভিবাসন বিলটি অনুমোদনের লক্ষ্যে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের একটি অংশ সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। চারজন ডেমোক্র্যাট সিনেটর ও চারজন রিপাবলিকান সিনেটরকে নিয়ে গঠিত দলটি ‘গ্যাং অব এইট’ নামে পরিচিত।
গ্যাং অব এইটের অন্যতম সদস্য ডেমোক্র্যাট সিনেটর রবার্ট মেনেনদেজ ওয়াশিংটনের সমাবেশে বলেছেন, আগামী সোমবারের মধ্যে বিলটি কংগ্রেসে উত্থাপিত হতে পারে বলে তাঁরা আশা করছেন। এরপর মে মাসের শেষ দিকে এটির ওপর ভোটাভুটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, অভিবাসন আইন সংস্কার ওবামা প্রশাসনের অন্যতম প্রধান কাজে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে রিপাবলিকানরাও ২০১২ সালের নির্বাচনের পর বিষয়টি নিয়ে উদার মনোভাবের পরিচয় দিচ্ছেন। তাঁরা ভোটের বিবেচনায় বিশালসংখ্যক হিস্পানিক জনগোষ্ঠীকে খুশি করতে বিলটির পক্ষে রায় দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এ লক্ষ্যে গত ফেব্রুয়ারি থেকে টানা কাজ করে যাচ্ছে সিনেটর জন ম্যাককেইনসহ রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের একটি অংশ। গতকাল বৃহস্পতিবারই আইনটির ব্যাপারে রিপাবলিকানদের অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর কথা। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, ‘আমরা খুবই (দলীয় সিদ্ধান্তের) কাছাকাছি চলে এসেছি।’
সিনেটের জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ারম্যান প্যাট্রিক লিহাই বিলটির ওপর ১৭ এপ্রিল একটি বিতর্ক ডেকেছেন। অভিবাসন সংস্কার আইনটি চূড়ান্ত করতে আইনপ্রণেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে এ বিতর্ক ডাকা হয়েছে। সিনেটর মার্কো রুবিওর মুখপাত্র আলেক্স বারগস জানিয়েছেন, সিনেটের রিপাবলিকান পলিসি কমিটিও বিলটি উত্থাপনের পর এটি নিয়ে একটি সাধারণ বিতর্কের ওপর সম্মত হয়েছে।
রাজধানী ওয়াশিংটনের পাশাপাশি নিউইয়র্ক, সানফ্রান্সিসকো, আটলান্টাসহ অন্যান্য শহরে বুধবার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ‘নাগরিকত্বের জন্য সমাবেশ’ শীর্ষক এই সমাবেশে কারখানার শ্রমিক, গৃহকর্মী, অভিবাসী অধিকারকর্মী ও শ্রমিকনেতারা অংশ নেন। প্রায় ৪০০টি গাড়িতে করে ১০ হাজার অভিবাসী ওয়াশিংটনের কংগ্রেস ভবনের বাইরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সমবেত হন।
এর আগে ২০০৭ সালেও যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিভক্ত সিনেটে এটি অনুমোদন পায়নি। পরে ২০১০ সালে ‘ড্রিম অ্যাক্ট’ নামের একটি বিল নিয়েও কংগ্রেসে বিতর্ক হয়। কিন্তু সেটিও আলোর মুখ দেখেনি।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, আন্তর্জাতিক, শীর্ষ সংবাদ