• ২ জ্যৈষ্ঠ ,১৪৩১,17 May ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

ভারত-চীন ‘ভাই ভাই’-এই কূটনৈতিক মন্ত্রে এশিয়ার দুই পরাশক্তির নবযাত্রা

| মে 21, 2013 | 0 Comments

আন্তর্জাতিক: ভারত-চীন ‘ভাই ভাই’-এই নতুন কূটনৈতিক মন্ত্রে নবযাত্রা শুরু করেছে এশিয়ার দুই পরাশক্তি ভারত ও চীন। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং ভারত সফরে এসে এ নবযাত্রার সূচনা করলেন। কয়েক দিন আগেও সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক চরমে ছিল। কিন্তু আস্থা ও বিশ্বাসের বার্তা নিয়ে চীনা প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর আন্তর্জাতিক রাজনীতির বহু সমীকরণই পাল্টে দিচ্ছে।
এদিকে ভারত ও চীন দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত বিরোধ চূড়ান্ত মীমাংসার অঙ্গীকার করে বলেছে, উভয় দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বিশ্ব শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ভারত সফররত চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং বলেন, বেইজিং নয়াদিল্লির সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক স্থাপনে অঙ্গীকারবদ্ধ। রোববার তিন দিনের ভারত সফরে দিল্লিতে এসেছেন চীনের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং। মার্চ মাসে চীনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণের পর এটাই লি কেকিয়াংয়ের প্রথম বিদেশ সফর।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও এ অঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়নের জন্য দু’দেশের মধ্যে সুসম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছেন। ভারতের পশ্চিম সীমান্তবর্তী হিমালয় সংলগ্ন লাদাখ অঞ্চল নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। গত মাসের শুরুতে চীনা সৈন্যরা লাদাখ অঞ্চলের বিরোধপূর্ণ সীমানা অতিক্রম করলে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
চীনের সৈন্যরা ভারতের দাবিকৃত ভূখণ্ডের ২০ কিমি. ভেতরে ঢুকে পড়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। ভারতও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ঘাঁটি তৈরি করে একেবারে চীনা সৈন্যদের মুখোমুখি অবস্থান নেয়। পরে দু’দেশের মধ্যস্থতায় সেনা প্রত্যাহার করে বেইজিং। এ প্রেক্ষাপটে ভারতে চীনা প্রধানমন্ত্রীর সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চীন ও ভারতের মধ্যে বিরোধপূর্ণ সীমানা নিয়ে ১৯৬২ সালে একবার যুদ্ধ হয়েছিল। এরপর শান্তি বজায় রাখতে উভয় দেশ একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। তা সত্ত্বেও পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা চিহ্নিত হয়নি। লির সঙ্গে বৈঠকের পর নয়াদিল্লিতে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মনমোহন বলেন, ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানের জন্য উভয় দেশ আগ্রহ ব্যক্ত করেছে এবং এ ব্যাপারে একটি চুক্তিতে পৌঁছতে শিগগিরই একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্র“প প্রতিষ্ঠা করা হবে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সীমান্ত সমস্যা নিয়ে একটি যথাযথ, যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য সমাধানের রূপরেখা তৈরির আলাচনা এগিয়ে নিতে উভয় দেশের বিশেষ প্রতিনিধিদের শিগগিরই বৈঠকে বসার ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি।’ মনমোহন বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে।’ চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং বলেন, সীমান্ত সমস্যাটি ঐতিহাসিক। তবে সমস্যা মোকাবেলায় উভয় পক্ষ একমত। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পন্থা কাজে লাগাতে হবে এবং বিদ্যমান মতবিরোধ দূর করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সীমান্ত সমস্যা সমাধানে উভয় পক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাবে এবং সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যৌথভাবে কাজ করবে।’ এর আগে লি বলেন, ভারত ও চীনের মধ্যে সুসম্পর্ক এশিয়া ও বিশ্বের জন্য সত্যিকারের আশীর্বাদ বয়ে আনবে। তিনি বলেন, ভারত ও চীনের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক ছাড়া বিশ্বশান্তি সম্ভব নয়। এদিকে সোমবার মনমোহন সিং এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন, ভারত-চীন একে অপরের পরিপূরক। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর জোর দিতে চায় উভয় দেশই।
প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে বিরোধের যে ক্ষেত্রগুলো আছে তা যত দ্রুত সম্ভব আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে দূর করা হবে বলে দুই প্রধানমন্ত্রীই দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেছেন। উল্লেখ্য, মনমোহন সিং এবং লি কেকিয়াং ৮টি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এগুলোর মধ্যে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি প্রাধান্য পেয়েছে। লি কেকিয়াং বলেছেন, আগামী দিনে আরও আলোচনা হবে। সেই আলোচনার ভিত্তিতেই স্থির হবে পরবর্তী পদক্ষেপ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন, ভারত এবং চীনের আর্থিক সম্পর্কের উন্নয়নের ওপর আমরা জোর দেব। বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়নের সম্ভাবনা ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তবে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনায় বিতর্কিত প্রশ্নগুলোও ওঠে।

Category: 1stpage, আন্তর্জাতিক

About the Author ()

Leave a Reply