‘তারেক ইজ মোর পাওয়ারফুল দ্যান জয়’
দেশের খবর: ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। প্রথিতযশা আইনজীবী। দেশের সাবেক প্রধান আইন কর্মকর্তা। মানবজমিন অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সঙ্কট ও বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছেন। ঈদ পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে সে সম্পর্কেও তার মত তুলে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সঙ্কট দূরীকরণে সমাধানের পথও বাতলে দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তনয় সজীব ওয়াজেদ জয়ের রাজনৈতিক অভিষেক ও তার সঙ্গে তারেক রহমানের তূলনা করেছেন নিজস্ব ভাবনায়। ‘ঈদের পর কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে’ বিএনপি নেতাদের এমন ঘোষণা বড় কিছু নয় বলে মনে করেন তিনি। বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার জন্য অপেক্ষার কিছু নেই। উত্তপ্ত হয়েই রয়েছে। ঈদের আগেও যা হয়েছে পরেও তাই হবে। হাইকোর্টে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার পরে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন সহিংসতার পর্যায়ে চলে যাবে। এরপরে কাদের মোল্লার রায় হবে, সালাউদ্দিনের (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী) মামলার রায় হবে, আলীমের (আবদুল আলীম) মামলার রায় হবে। পরিস্থিতি মহাউত্তপ্ত হবে। এই পরিস্থিতিতে একটা সমাধান খুঁজতে হবে। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রধান দুই নেত্রীকেই তা করতে হবে। সেটা হতে পারে, ঈদ উপলক্ষে দুই নেত্রী এক সঙ্গে বসতে পারেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ইলেকশান, দেশ পরিচালনা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করবেন। তাতে ক্ষতিতো কিছু দেখি না। আমরাতো প্রাইম মিনিষ্টার শেখ হাসিনার সঙ্গেও বসি, বিরোধীদলীয় লিডার খালেদা জিয়ার সঙ্গেও বসি। তবে বসতে হবে খোলামন নিয়ে। আমাদের প্রাইম মিনিষ্টার এখন ‘নোবেল প্রাইজ’ বলতেও ভয় পান। এটাতো হতে পারে না। জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি চূড়ান্ত কোন বিষয় নয়। রায়ের সঙ্গে সঙ্গে বিচারকরা আপিলের সার্টিফিকেট দিয়েছেন। এখনো জাজমেন্টের কিছুই হয়নি। দেখলাম সবাই মাতোয়ারা। আওয়ামী লীগ মাতোয়ারা। ওদের আইনজীবীও (ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক) মাতোয়ারা। কিছু না বুঝেই রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জামায়াত দু’দিনের স্ট্রাইক দিয়ে দিল। এটা কি ঠিক হলো? এতে করে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের রাজনৈতিক অভিষেক ও লন্ডনে তারেক রহমানের রাজনীতিতে সরব হওয়া প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার রফিক- উল হক বলেন, এখন যুগ পাল্টেছে। নিউ জেনারেশন, নিউ থিঙ্কিং, নিউ আইডিয়া। ইয়াং জেনারেশন রাজনীতিতে আসলে আমরা খুশি। জয়ের বিষয়টিও তাই। তারেক ইজ মোর পাওয়ারফুল দ্যান জয়। দীর্ঘদিন ফিল্ড লেবেলে পলিটিক্স করেছে সে। জয়ের চেয়ে তার অভিজ্ঞতাও বেশি। তাছাড়া খালেদার ছেলে পার্টিতে সেকেন্ডম্যান (ভাইস চেয়ারম্যান)। সারাদেশের নেতাকর্মিদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে তার। এটি তার একটি সুবিধা। জয় রংপুরকে ডিফেন্স করতে পারলেও সারা দেশকে নয়। লন্ডনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারেকের প্রকাশ্যে আসা নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। আমার প্রশ্ন সে প্রকাশ্যে আসবেনা কেন? সে কি কনভিক্টেড (সাজাপ্রাপ্ত)? তার মামলার কথা বলেন। এই সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। এখনও কি কোন মামলায় তার কনভিকশন (সাজা) হয়েছে? সে দেশে আসতে পারবে না, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এগুলো পলিটিক্যাল ট্রিকস। পলিটিক্সে এরকম হয়। কিন্তু তারেক যদি পুরনো ধারায় রাজনীতি করে তাহলে সমর্থন হারাবে। আর উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে আসা প্রসঙ্গে বলতে চাই, যোগ্যতা থাকলে কোন আপত্তি নেই। ব্যারিস্টার রফিক- উল হকের ছেলে রাজনীতিতে আসলে শুধু পিতার পরিচয়ে রাজনীতি করবে তা হবে না। তাকে যোগ্যতার পরিচয় দিয়েই আসতে হবে। তবে যারা আসবে তারা একে অপরের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধাভরে কথা বলবে, সম্মান করবে এই আশা করতেই পারি। নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, বিএনপি বলেন কেয়ারটেকার, আওয়ামী লীগ বলে অন্তবর্তীকালীন গভমেন্ট। কিন্তু কি ধরনের হবে সেটা কিন্তু কেউই পরিস্কার করছে না। আবার ইলেকশান চায় দু’দলই। ইলেকশান আমরাও চাই। এখন যত মারামারি কাটাকাটি হোক ইলেকশানের আগেই সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে সেটা আশা করি। একটা সমাধান হবেই। নির্বাচনও হবে। তবে ওয়ান ইলেভেনের মত পরিস্থিতি আশা করি না। তার সম্ভাবনাও নেই। এ বিষয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে কঠোর শাস্তির বিধান করা হয়েছে। এই বিশ্বাস থেকেই বলছি, আবারও ওয়ান ইলেভেন জাতীয় ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। সম্প্রতি ৫টি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয় প্রসঙ্গে খ্যাতিমান এই আইনজীবী বলেন, আওয়ামী লীগ বলছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের মাপকাঠি নয়, তারা তা বলবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আজমত উল্লাহর মত লোক মান্নানের কাছে হেরে যায়! তাহলে বোঝা যায় সবকিছু এলোমেলো। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বলছি, সিটি নির্বাচন ‘আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণজোয়ার’।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনকাল যদি মূল্যায়ন করি তাহলে দেখা যাবে খুব একটা খারাপ ছিল না। অনেক কন্ট্রিবিউশন আছে। ভুলও আছে। যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ, কৃষক লীগ নামের অর্গানাইজেশনের চ্যালারা তাদের সেই সাফল্যকে সামনে আনতে পারেনি। বরং ডুবিয়েছে। দূর্নাম কামিয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে দ-প্রাপ্তদের সাজা এই সরকারের মেয়াদে কার্যকর হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার রফিক- উল হক পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, সরকারের মেয়াদ আর আছে কদিন? আইসিটিতে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) রায়ের পর অ্যাপিলেট ডিভিশনে কয়টা ফাইল হয়েছে। এখন পর্যন্ত কয়টা মামলার হেয়ারিং হয়েছে। ৬০ দিনে মামলা নিস্পত্তির কথা। আগামী ৬০ দিনে কয়টা মামলার নিস্পত্তি হবে?
Category: 1stpage, দেশের খবর, শীর্ষ সংবাদ