• ২১ বৈশাখ ,১৪৩১,04 May ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

আঙ্গেলা ম্যার্কেল, এক সফল চ্যান্সেলর ও রাজনীতিবিদ

| আগস্ট 13, 2013 | 0 Comments

ইউরো সংবাদ: রঙিন জ্যাকেটের আড়ালে এক সংযত মানুষ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ খুব একটা দেখা যায় না তাঁর মধ্যে৷ বিশ্বের শক্তিশালী এক দেশের কর্ণধার এই নারীকে ‘রাজনীতিক-তারকা’ বলা হয়৷

সহস্রাব্দের শুরু থেকেই দেখা দেয় বিশ্বব্যাপী সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক জগতে অস্থিরতা৷ সন্ত্রাস, অর্থনৈতিক মন্দা ও ইউরো সংকটের ঢেউ জার্মানদেরও ব্যতিব্যস্ত করে তোলে৷ হয়তো বা এ কারণেই নিরাপত্তা ও স্থিতির আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে এখানকার মানুষের মনে৷

বিভিন্ন জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, আঙ্গেলা ম্যার্কেলের শাসনামল, অর্থাৎ ২০০৫ সাল থেকে বেড়ে ওটা তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে এই আকাঙ্ক্ষাটা যেন প্রবল৷ পরিবার-পরিজন, চাকরি-বাকরি, বাড়ি-গাড়ি এইসব নিয়ে শান্তিতে থাকতে চায় তারা৷ পরিশ্রম, নিয়মানুবর্তিতা, বিশ্বস্ততা এই সব গুণাগুণ প্রাধান্য পায় তাদের কাছে৷

জার্মানির খ্যাতনামা ম্যাগাজিন ‘ডেয়ার স্পিগেল’-এর প্রবন্ধকার ডিয়র্ক কুরবিয়ুভাইট এই প্রসঙ্গে লেখেন, আট বছরের শাসনকালে চ্যান্সেলর ম্যার্কেল জার্মানদের মানসিকতার ওপরও প্রভাব বিস্তার করেছেন৷ গণতান্ত্রিক ঝগড়া বিবাদকে স্থবির করে দিয়েছেন৷ নিস্তরঙ্গ এক জীবনের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে এখন জার্মানির মানুষ৷

আড়ালে থেকেছে ব্যক্তিগত জীবন

‘‘নির্বাচনী প্রচারণায় সরব হলেও চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পারে না মানুষ,” বলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কার্ল রুডল্ফ কর্টে৷

স্বামীর সাথে আঙ্গেলা ম্যার্কেল

নিরাপত্তা ও দিক নির্দেশনার প্রতি জার্মানদের আকাঙ্ক্ষা অনেক ক্ষেত্রেই পূরণ করতে পেরেছেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷ বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকটের সময় তিনি দেশবাসীকে ভরসা দিয়েছিলেন যে, এই সংকট কাটিয়ে আবার উঠে দাঁড়াতে পারবে জার্মানি৷

বাস্তবিকই অর্থনীতির জগতে আবার সুবাতাস বইতে শুরু করেছে জার্মানিতে৷ হ্রাস পেয়েছে বেকারত্বের হার৷ বহির্বিশ্বেও জার্মানির অবস্থানের পক্ষে দৃঢ় পদক্ষেপ নেন ম্যার্কেল৷ বিশ্বের আটটি শিল্পোন্নত দেশের অর্থনৈতিক বলয় জি-এইট-এর বৈঠক বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলন – সর্ব ক্ষেত্রেই শক্ত হাতে জার্মানির স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা করেন তিনি৷ জার্মান অর্থসম্পদ ভালো হাতেই রয়েছে, এইরকম একটা ধারণাই তুলে ধরেন এই রাজনীতিবিদ৷ হয়তো সে জন্যই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নারী বলে পরিচিত আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷

একই ধরনের পোশাক পছন্দ

বাহ্যিক দিক দিয়েও স্থিতিশীল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই ফুটে ওঠে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের৷ বছরের পর বছর চুলের স্টাইলে পরিবর্তন হয়েছে খুব কমই৷ একই ধরনের জ্যাকেট তাঁর প্রিয়, শুধু রংয়েই যা তারতম্য৷ আর পছন্দ কালো ট্রাউজার৷

বাইরের বিশ্বে যতই ঝড়ঝাপটা বয়ে যাক না কেন, নিরুত্তাপ এক ম্যার্কেলকেই দেখা যায় টিভির পর্দায়৷ ভাবাবেগের প্রকাশ নেই৷ সিরিয়াস, নির্ভরযোগ্য, সর্বদা জনতার দেখভালে ব্যতিব্যস্ত, এই রকম এক চ্যান্সেলরকেই দেখতে অভ্যস্ত মানুষ৷

আঙ্গেলা ম্যার্কেল কেবিনেটে মন্ত্রীদের সাথে বৈঠকে

এর ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্যের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে৷ সেবার মনোবৃত্তি প্রোটেস্টান্ট যাজক পরিবার থেকে এসেছে৷ বলেন কর্টে৷ ম্যার্কেল নিজেও মনে করেন, প্রশান্তি, পূর্ণতা ও সংযম মা-বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন তিনি৷

জার্মানিতে খ্রিষ্টধর্মের ক্যাথলিক ধারার ডাবল স্ট্যান্ডার্ড-এর বিপরীতে উত্থান ঘটে প্রোটেস্টান্ট ধারার৷ আড়ম্বরের বিপরীতে সরলতা৷ বাহ্যিক ডামাডোলের পরিবর্তে অন্তরের আলো৷ এই হলো প্রোটেস্টান্ট গির্জার মূলমন্ত্র৷ বিনয়, ত্যাগ, পরিশ্রম, মিতব্যয়িতা – এই সব গুণাগুণের ওপর জোর দেওয়া হয় ক্যাথলিক গির্জার বিপরীতমুখী ধারাটিতে৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের শাসনামলের পুরোটা জুড়ে প্রোটেস্টান্ট ধারার ছাপ রাজনীতিতেও এসে পড়েছে৷ এ ক্ষেত্রে ম্যার্কেল-এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, লাভবানও হয়েছেন তিনি৷

প্রোটেস্টান্টদের জয়যাত্রা

১৯৯৯ সালে ক্যাথলিক অধ্যুষিত বন থেকে প্রোটেস্টান্ট বার্লিনে পুনরেকত্রিত জার্মানির রাজধানী স্থানান্তরিত করা হয়৷ রাজনৈতিক দলগুলিতে বিশেষ করে খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়নে প্রোটেস্টান্টদের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকে৷ শীর্ষপদ ও মন্ত্রিত্বের ক্ষেত্রে ক্যাথলিকদের সংখ্যা হ্রাস পায়৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক-ও একজন প্রোটেস্টান্ট ধর্মযাজক ও ম্যার্কেলের মতই সাবেক পূর্ব জার্মানির মানুষ৷

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম কলাকৌশল ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে চ্যান্সেলর ম্যার্কেল জার্মানি তথা ইউরোপের এক সফল রাজনীতিবিদে পরিণত হতে পেরেছেন৷ এখনকার জার্মানদের মানসিকতার সঙ্গে খাপ খেয়ে যায় বলেই চ্যান্সেলর হিসাবে তাঁর দায়িত্বও এতো ভালভাবে পালন করতে পারছেন তিনি৷ বিভিন্ন সময়ে নেওয়া সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যায়, জার্মানির অধিকাংশ মানুষের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা বহাল রয়েছে৷ এই প্রসঙ্গে কার্ল রুডল্ফ কর্টে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, এই পরিস্থিতিতে মানুষের মনে এক ‘ক্যারিশম্যাটিক’ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের আকাঙ্ক্ষা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে৷/DW

Category: 1stpage, ইউরো সংবাদ, ইউরো সংবাদ, ইউরো-সংবাদ - German

About the Author ()

Leave a Reply