মাদারীপুরের খেজুর গুড়ের চাহিদা বেড়েছে ইউরোপে
দেশের খবর: মাদারীপুর থেকে ফোরকান আহমেদ : মাদারীপুরের সুস্বাদু খেজুরের গুড়ের সুনাম এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি সহায়তা পেলে রপ্তানি করা সম্ভব। বিভিন্নভাবে জানা যায়, মাদারীপুরের প্রবাসীরা নব্বইয়ের দশক থেকে এখানকার খেজুরের গুড় নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে। এভাবেই সেখানে এ গুড়ের চাহিদা ব্যাপক তৈরি হয়েছে। তাই এই চহিদার কথা মাথায় রেখে এখন প্রবাসী অনেকেই মাদারীপুরের খেজুরের গুড় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিক্রির জন্যও নিচ্ছে বিভিন্ন দেশে। বিশেষ করে ইটালি, গ্রিস, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, কানাডা, কুয়েত, মালেশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে।
ইটালি প্রবাসী আবুল কাশেম ও গ্রিস প্রবাসী মোঃ আসাদ হাওলাদার জানান, গ্রিসসহ সারা ইউরোপে মাদারীপুরের খেজুরের গুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সরকার রপ্তানির উদ্যোগ নিলে খেজুরের গুড় রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে রাস্তার দুপাশে এবং অনাবাদি জমিতে খেজুর গাছ রোপণ করে তা থেকে গুড় উৎপাদন করা সম্ভব। খেজুর গাছ রোপণে পরিচর্যারও দরকার হয় না। তাই খরচও খুব কম।
মাদারীপুর বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় আগে প্রায় ১৫ লাখ খেজুর গাছ ছিল। ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ ব্যবহারের ফলে এখন তা কমে দাঁড়িছে মাত্র ৫ লাখে। বর্তমানে তিন সহাস্রাধিক গাছি খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরির কাজে ব্যস্ত। স্থানীয় ভাষায় খেজুরের গুড়কে বলা হয় মিঠা বা মিঠাই। আর যারা গাছ কাটে তাদের বলা হয় গাছি। মাদারীপুর জেলার স্থানীয় গাছিরা বাড়ি ও সড়কের আশপাশে অবহেলায় পড়ে থাকা খেজুর গাছগুলো কেটে প্রস্তুত করেন। এরপর গাছগুলো রস দেয়ার জন্য প্রস্তুত করে মাটির হাঁড়ি টানিয়ে রাখা হয় সারা রাত। পরদিন সকালে হাঁড়ি ভর্তি রস নামান গাছিরা। পরে সব রস একত্রিত করে খড়কুটা দিয়ে জ্বাল দিয়ে প্রস্তুত করা হয় সুস্বাদু খেজুর গুড়। সেই গুড় জেলার প্রত্যন্ত এলাকার হাটবাজারে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সদর থানার লক্ষ্মীগঞ্জ গ্রামের গাছি সোহরাব হোসেন জানান, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়ায় মাদারীপুরে খেজুরের গুড়ের দেশ-বিদেশে বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ঐতিহ্যগত কারণে মাদারীপুর জেলাসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শীত মৌসুমে পিঠা-পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে। এ কারণে খেজুরের গুড়েরও প্রচুর কদর রয়েছে এলাকায়। দেশের বিভিন্ন এলাকার ফেরিওয়ালারা হাটবাজার থেকে খেজুর গুড় কিনে নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। জেলার পাচখোলা এলাকার গাছি জালাল খান এ বছর অনেক গাছ কাটছেন। এতে তিনি প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ কেজি গুড় তৈরি করতে পারছেন। তিনি জানান, ফাল্গুন মাস পর্যন্ত তিনি গাছের রস সংগ্রহ করতে পারবেন।
জালাল খান জানান, একটি খেজুর গাছ থেকে দেড়-দুই মাস রস সংগ্রহ করা যায়। এতে যেমন প্রাকৃতিকভাবে তৈরি গুড়ের চাহিদা পূরণ হচ্ছে তেমনি তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর