• ৪ জ্যৈষ্ঠ ,১৪৩১,18 May ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

আদালতে যাননি খালেদা জিয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল

| মার্চ 4, 2015 | 0 Comments

 khaledaদেশের খবর: গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও গতকাল বুধবারও আদালতে হাজির হননি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রয়েছে। আগামী ৫ এপ্রিল মামলা দুটির পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির না হওয়ায় ওই দিন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদার। এরপর আট দিন পার হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বলছে, এখনো আদালতের আদেশ সংশ্লিষ্ট থানায় যায়নি।
পরোয়ানা তামিল করার বিষয়ে গতকাল আদালত জানতে চেয়েছেন কি না, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন  বলেন, পরোয়ানা তামিল করার জন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে হবে। এরপর গ্রেপ্তারের প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। মাত্র সাত দিন আগে পরোয়ানা জারির আদেশ হয়েছে। অস্বাভাবিক সময় বিলম্ব হলে আদালত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন চাইতে পারেন।
অবশ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানার চার দিন পর অপর একটি মামলায় আদালত খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশির পরোয়ানা জারি করেন। যা ওই দিন রাতেই গুলশান থানার পুলিশের কাছে পৌঁছায়। এ বিষয়েও পুলিশ গতকাল পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এর আগের দিন মঙ্গলবার বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ দুই শর্তে খালেদা জিয়া বুধবার ধার্য তারিখে আদালতে যেতে পারেন। এই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কিছু বলা হয়নি। খালেদা জিয়াও আদালতে যাননি।
এ বিষয়ে গতকাল জানতে চাইলে খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দুইটা শর্ত দিয়েছি, উনাকে নিরাপত্তা দিয়ে আদালতে নিতে হবে। আদালত যদি উনাকে জেলে পাঠান, আদালতের ব্যাপার। জামিন যদি দেন, আবার সেই নিরাপত্তা দিয়ে তাঁকে রাজনৈতিক কার্যালয়ে ফেরত পাঠাতে হবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের আশ্বাস সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়নি। তাই ইচ্ছা সত্ত্বেও নিরাপত্তার অভাবে খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হতে পারেননি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত রাতে  বলেন, সরকার র্যা ব, বিজিবি, পুলিশসহ সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেখেছিল, যা সবাই দেখেছে।
এই নিরাপত্তাব্যবস্থার কথা খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের জানানো হয়েছিল কি না, এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে বা কোনো চিঠি দিয়ে নিরাপত্তা চাননি। তাঁরা গণমাধ্যমে বলেছেন, তার পরও আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছি।’
এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে পৃথক চারটি আবেদন দাখিল করেন তাঁর আইনজীবীরা। আদালত বলেন, পলাতক আসামির ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো আবেদন করার আইনত সুযোগ নেই। তাই তা গ্রহণ করা হলো না। তবে আদালত দুদক ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনেন।
শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তা সঠিক হয়নি। আদালত অন্যায়ভাবে এই আদেশ দিয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রথমত আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে হাইকোর্টে যে আবেদন করা হয়েছে, তা শুনানির অপেক্ষায় আছে; দ্বিতীয়ত খালেদা জিয়া জামিনে ছিলেন; তৃতীয়ত জামিনে থাকা আসামির জামিন বাতিল করতে হলে, কেন বাতিল করা হবে না মর্মে আইনজীবীকে নোটিশ করতে হবে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে।
এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আদালতকে জানতে হবে, এ ক্ষেত্রে আইনের বিধান কী। আদালত প্রভাবিত হয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
এ সময় আদালত এই আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি অনেকবার বলেছেন, আদালতকে জানতে হবে। আপনার বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে, আমি আসামি, আপনি জজ। এটা আপনি ক্লাসরুম পাননি। আপনার কাছে জানতে চেয়েছি, আপনি যে আবেদন করেছেন, পলাতক আসামির ক্ষেত্রে তা করার আইনগত কোনো বিধান আছে কি না।’
জবাবে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘খালেদা জিয়া কী পরিস্থিতির কারণে আদালতে হাজির হতে পারেননি তা বলছি। গত ২৪ ডিসেম্বর তিনি আদালতে হাজির হয়েছিলেন, সেদিন তাঁর গাড়িবহরে হামলা হয়েছিল। তিনি নিরাপত্তাহীনতার কারণে আসতে পারেননি।’
এ পর্যায়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন বলেন, আইনের দৃষ্টিতে খালেদা জিয়া পলাতক আসামি। তিনি গ্রেপ্তার অথবা আত্মসমর্পণ করলে অথবা উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকলে আসামিপক্ষে তাঁর আইনজীবী কথা বলার সুযোগ পাবেন। কিন্তু একজন পলাতকের ক্ষেত্রে কোনো সুযোগ নেই। আসামিপক্ষ কোন আইনের বিধানে এই আবেদনগুলো করেছে, তা বলতে পারেনি।
এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। আদালত চাইলে পরোয়ানা প্রত্যাহার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ ধারায় রেখে বিচারকাজ চালিয়ে যেতে পারেন। হাইকোর্টে বিচারিক আদালত বদলির একটি আবেদন শুনানির অপেক্ষায় আছে। তাই আদালত পরোয়ানা প্রত্যাহার করতে পারেন।
জবাবে মোশাররফ হোসেন বলেন, আইনজীবীর ভুলের কারণে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছে। গত তারিখে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ ধারায় আবেদন করতে বলা হলেও তাঁরা করেননি। তাঁরা বলেছেন, খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত থেকে মোকাবিলা করবেন।
শুনানি শেষে আদালত মৌখিক আদেশে বলেন, আসামিপক্ষে যে আবেদনগুলো করা হয়েছে, তা আইনের দৃষ্টিতে অচল। তাই আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল থাকবে।
এর আগে আদালত আরেক আসামি তারেক রহমানকে গতকালের ধার্য তারিখে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবীকে। এ বিষয়ে তাঁর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া গতকাল আদালতকে বলেন, ‘তারেক রহমান বিদেশে চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তারেক রহমান সুস্থ হয়ে দেশে এলেই তাঁকে আদালতে হাজির করব।’ আইনজীবীর এই আবেদন বিবেচনায় আদালত তারেক রহমানের জামিন বহাল রাখেন।
বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর অস্থায়ী এজলাসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলা দুটির বিচারকাজ চলছে। গতকাল মামলার বাদীসহ নয়জন সাক্ষী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
বেলা দেড়টায় আদালত সাক্ষ্য কার্যক্রম মুলতবি রেখে ৫ এপ্রিল পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। বিচারকের এজলাস ত্যাগের পর হঠাৎ আদালত এলাকায় খবর বের হয় যে খালেদা জিয়া আত্মসমর্পণ করতে পারেন। এই খবরের ভিত্তিতে বিচারক, দুদকের আইনজীবী, আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ওই এলাকার নিরাপত্তায় থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
বিকেলে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন  বলেন, ‘ওপর মহলের একটা নির্দেশ ছিল যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন। তাই আমরা অপেক্ষা করেছি।’
পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আনিসুর রহমানও বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশমতো তাঁরা পাঁচটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন।
এর আগে দুপুরে মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, থাকবে ও কার্যকর হবে। হয় তাঁকে আদালতে আসতে হবে, অন্যথায় তাঁকে কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসবে। তিনি যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন, আবার যেকোনো সময় আত্মসমর্পণ করতে পারেন। সব সুযোগ রাখা হয়েছে।

Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর, ব্রেকিং নিউজ, শীর্ষ সংবাদ

About the Author ()

Leave a Reply