গ্রিসে না ভোটের জয় হয়েছে। ৬১ ভাগ ‘না’ ভোট ও ৩৯ ভাগ ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছে।
ইউরো সংবাদ: গ্রিসে গণভোটে ফলাফলে দেখা গেছে ভোটাররা আন্তর্জাতিক বেইলআউট প্রত্যাখ্যান করেছেন। অর্থাৎ গ্রিসে না ভোটের জয় হয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত সর্বশেষ ফলাফলে দেখা গেছে, ৬১ ভাগ ‘না’ ভোট ও ৩৯ ভাগ ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছে।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, গণভোটের ফলাফল ‘হ্যাঁ’ হোক আর ‘না’ হোক, গ্রিসের রাজনৈতিক ইতিহাসের চরম এ সংকটজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা কম। এ যেন সিংহের মুখ থেকে নেকড়ের মুখে পড়ার অবস্থা।
এদিকে গ্রিসের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে আজ সোমবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। খবর বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সের।
‘না’ ভোট এগিয়ে থাকায় গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাসের জয় হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ জয়েও তিনি আসল সংকট কীভাবে মোকাবিলা করবেন, সে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। গতকাল রাতে খুদে বার্তা লেখার ওয়েবসাইট টুইটারে দেওয়া বার্তায় গ্রিসের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পানোস কামেনোস বলেন, জনগণ প্রমাণ করেছে, তারা কারও ব্ল্যাকমেইলে নতি স্বীকার করেনি। গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
সকালে শুরু হয়ে গ্রিসের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা) ভোট শেষ হয়। ঋণদাতাদের দেওয়া কঠোর কৃচ্ছ্রসাধনের শর্তসংবলিত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রস্তাব (বেইল আউট) গ্রহণ করা হবে কি না, গণভোটে বিবেচ্য ছিল সেটিই। ‘না’-এর উত্তর সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান। তবে সেই প্রত্যাখ্যানের ফল হয়তো ইউরোজোন (অর্থাৎ যেসব দেশে ইউরো প্রচলিত) থেকেই গ্রিসের বিদায়। এর ফলাফল এখন একেবারেই অজানা।
তবে ভোটের ফলাফল ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ হলে এর প্রভাব কী হবে—গ্রিসের ক্ষমতাসীন সরকার আর প্রতিপক্ষ ঋণদাতা ইউরোপীয় নেতাদের তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত। তাঁদের মতভিন্নতার বহিঃপ্রকাশ ভোটদাতাদের মধ্যেও।
রাজধানী এথেন্সের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটার সারির একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে ৮০ বছর বয়সী মিশেলিস বলছিলেন, ‘আমি “না”তে ভোট দিয়েছি। কারণ আমি মনে করি, আমার দেশের জন্য সেটাই ভালো।’ তবে গ্রিসবাসী অনেকেরই ভাবনা, ‘না’ ভোট আবার তাঁদের মুদ্রা দ্রাকমাতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ২০০১ সালে ইউরো গ্রহণ করার আগে এটিই ছিল দেশটির মুদ্রা। অবসরপ্রাপ্ত সাংবাদিক থিওডোরা বলছিলেন, ‘আমি হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করেছি “হ্যাঁ” জয়ী হোক। কারণ “না” জয়ী হলে ধ্বংস শুরু হবে।’
‘না’ ভোট দিতে গ্রিসের জনগণের কাছে ভোটের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যান প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাস। বলেন, ‘ভালোভাবে আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার জনগণের ইচ্ছাকে কেউ উপেক্ষা করতে পারবে না।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ‘না’ ভোট আলোচনার টেবিলে তাঁর হাতকে শক্তিশালী করবে। তবে এর বিপরীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা বারবারই বলে এসেছেন, গ্রিস যদি ইউরোজোনে থাকতে চায় তাহলে ‘হ্যাঁ’ ভোটের বিকল্প নেই।
বিশ্লেষকেরা বলেছেন, গত কয়েক মাসের নিষ্ফলা আলোচনার পর বেইল আউট কর্মসূচি নিয়ে নিজেদের মত দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রিসের আশপাশের দেশসহ সমস্ত ইউরোপীয় দেশেই বড় প্রভাব ফেলেছে।
জার্মান কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনসের জুলিয়ান রাপল্ড বলেন, ‘বেইল আউট কর্মসূচি নিয়ে ঋণদাতাদের সঙ্গে গ্রিসের ভবিষ্যৎ আলোচনার ওপর এ নির্বাচনের প্রভাব ব্যাপক।’ তিনি বলেন, গ্রিস যদি ইউরোজোন ছেড়ে যায় তবে সংকট নিরসনে ইইউর প্রচেষ্টার এক ব্যর্থতাই হবে সেটি।
আর ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী ইমানুয়েল ম্যাক্রোন বলেছেন, একটা সমঝোতায় পৌঁছার জন্য গ্রিস এবং আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের চেষ্টা চালাতেই হবে।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, ইউরো সংবাদ, ইউরো সংবাদ, ইউরো-সংবাদ - Greece, ব্রেকিং নিউজ, শীর্ষ সংবাদ