‘মুহাম্মদ (স) মুভি ইসলাম সম্পর্কে পাশ্চাত্যের বিভ্রান্তি দূর করবে’
আন্তর্জাতিক: ইরানে নির্মিত ‘মুহাম্মদ (স)’ মুভিটি পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে পাশ্চাত্যের ভ্রান্ত ধারণা দূর করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন খ্যাতনামা ইরানি চলচ্চিত্র পরিচালক মাজিদ মাজিদি।
তেহরানে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে ‘মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (স)’ এর পরিচালক ৫৬ বছর বয়সী মাজিদ মাজিদি বলেন, পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পবিত্র দ্বীন ইসলামের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
সাক্ষাৎকারে মুসলিম বিশ্বে মহানবীর জীবন আলেখ্যের ভিত্তিতে নির্মিত ছায়াছবির চাহিদার কথাও তুলে ধরেন তিনি। মাজিদ মাজিদি বলেন, সৌদি আরবের মতো হাতেগোণা কয়েকটি দেশে এ চলচ্চিত্র নিয়ে সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশই এ ছবির বিষয়ে প্রচণ্ড আগ্রহ দেখিয়েছে।
মহানবীর জীবনীভিত্তিক প্রথম ছায়াছবি নির্মাণ করেছিলেন সিরিয়-আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা আক্কাদ। ওই ছায়াছবির নাম ‘দ্য ম্যাসেজ’। ১৯৭৬ সালে তা মুক্তি পাওয়ার পর মুসলমান বিশ্বের কোনো কোনো মহল তার কঠোর সমালোচনা করেছিল। দ্বীনের নবীর জীবনীভিত্তিক ছবি নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিশ্বের কোনো কোনো মুসলমানের উদ্বেগের বিষয়টি অনুধাবন করে মাজিদ মাজিদি বলেন, ছবিতে বিকল্পভাবে মহান নবীকে উপস্থাপন করা হয়েছে। চলচ্চিত্রে মহানবী ক্যামেরার দিকে পেছন ফিরে ছিলেন। তাঁর অবয়ব দেখা গেছে। কিন্তু তার চেহারা মোবারক দেখানো হয়নি।
হাসিমুখে বিশ্ববরেণ্য এ চিত্রনির্মাতা বলেন, ‘পুরো ছবিতে নায়কের দুর্দান্ত উপস্থিতি রয়েছে কিন্তু তাঁর চেহারা দেখানো হয় নি- সত্যিই এটা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল।‘ এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশেষ পদ্ধতির আশ্রয় নেন মাজিদি এবং তিন তিনবার অস্কার বিজয়ী ইতালির সিনেমাটোগ্রাফার ভিত্তেরিও স্তোরারো।
মাজিদি বলেন, ছায়াছবিতে মহানবীকে তুলে ধরার জন্য বিশেষভাবে তৈরি স্টেডিক্যাম ব্যবহার করা হয়। চলচ্চিত্রটির যে দৃশ্যেই রাসূল (স)-কে দেখানো হয়েছে সেখানেই দৃশ্যটি নবীর দৃষ্টিভঙ্গি অর্থাৎ চলচ্চিত্রের ভাষায় ক্যারেক্টারস পয়েন্ট অব ভিউ বা পিওভি থেকে দেখানো হয়েছে। এমনকি নবীজির শৈশবের দৃশ্যও এ ভাবে চিত্রায়িত হয়েছে বলে জানান তিনি।
মাজিদি বলেন, চলচ্চিত্রটিতে সবাই মুহাম্মদ (স)কে দেখার জন্য উদগ্রীব থাকবে কিন্তু কেউ তাঁর পবিত্র মুখমন্ডল দেখতে পাবেন না। তাঁর অবয়ব দেখা যাবে বা ক্যামেরার দিকে পেছন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন- এমন দৃশ্যই কেবল দেখা যাবে।
এ ছাড়া, মুহাম্মদ (স) বাকি দুই খণ্ড নির্মাণের ক্ষেত্রে কি সমস্যায় পড়তে হবে তাও তুলে ধরেন তিনি। মাজিদ মাজিদি বলেন, নবুয়ত লাভের পর মহানবীর সংলাপ নিয়েও বেশ সমস্যা দেখা দেবে। অবশ্য এ সমস্যা উৎরানো যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি ।
ব্যয়বহুল ছবি
৩৯ বছর আগে ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)- কে নিয়ে নির্মিত আরেকটি চলচ্চিত্র ইসলামি বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছিল৷ ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া সেই ছবির নাম ছিল, ‘মুহাম্মদ, মেসেঞ্জার অফ গড’৷ সিরীয়-অ্যামেরিকান পরিচালক মুস্তাফা আক্কাদ সেই ছবির জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছিলেন তার ২০ গুন খরচ করে এবার নির্মাণ করা হয়েছে ‘মুহাম্মদ’৷ ১৭১ মিনিটের এ ছবির নির্মাণ ব্যয় ৩৬ মিলিয়ন ইউরো বা ৪০ মিলিয়ন ডলার!
আছে এ আর রহমানের সুরের জাদু
শুধু বড় বাজেটের ছবিই নয়, বড় বড় শিল্পী, কলা-কুশলীদের ছবিও ‘মুহাম্মদ’ (সা.)৷ পরিচালক মাজিদ মাজিদি সিনেমাটোগ্রাফির দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনবারের অস্কার বিজয়ী সিনেমাটোগ্রাফার ভিত্তোরিও স্তোরারোকে৷ সংগীত পরিচালনার কাজটি করেছেন ভারতের এ আর রহমান৷ দুবারের অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড জয়ী রহমানের সংগীত দর্শকদের স্বপ্নাবিষ্ট করে রাখায় বড় ভূমিকা রাখছে৷
মহানবির মর্যাদা রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ
মুসলমানদের সবচেয়ে প্রিয় নবির মর্যাদা রক্ষার্থে ছবিটি ইরানের ‘ফজর উৎসব’-এর প্রতিযোগিতার অংশ হয়নি৷ প্রতিযোগিতার বাইরে রেখে দেখানো হয় ছবিটি৷
সমালোচনা, নিষিদ্ধ করার দাবি
‘মুহাম্মদ’ শিয়া মুসলমানদের মাঝেই সমাদৃত হচ্ছে৷ সুন্নিরা এ ছবি নিষিদ্ধ করার দাবিও করেছেন৷ ‘‘শরিয়তে নবিদের যে কোনো ধরনের উপস্থাপন নিষিদ্ধ’’ -এই যুক্তিতে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে মিশরের আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়৷ তবে পরিচালক মাজিদ মাজিদির পরিকল্পনা জানিয়েছেন, এই ছবি আসলে তাঁর ‘ট্রিলজি’-র অংশ, অর্থাৎ মুসলমানদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে আরো চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছা আছে তাঁর৷
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, আন্তর্জাতিক