‘সংসদ পুতুল নাচের নাট্যশালা, কোরাম সংকটে অপচয় ৩২ কোটি টাকা’
দেশের খবর: দশম জাতীয় সংসদ অধিবেশনে কোরাম সংকটের ফলে ৩২ কোটি ৪২ লাখ ৩১ হাজার টাকার অপচয় হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
(রোববার) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘পার্লামেন্টওয়াচ’ বিষয়ক এক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, দশম সংসদের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশনের (৫টি অধিবেশন) ১১২ কার্যদিবসে সময় ব্যয় হয়েছে ৩৮৮ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। প্রতি কার্যদিবসে গড়ে বৈঠক হয়েছে ৩ ঘণ্টা ২৮ মিনিট। ৫টি অধিবেশনে মোট কোরাম সংকট ছিল প্রতি কার্যদিবসে গড়ে ২৬ মিনিট। যার অর্থমূল্য প্রায় ২৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা (সংসদ অধিবেশন পরিচালনা করতে প্রতি মিনিটে গড় ব্যয় প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার টাকা)। মোট কোরাম সংকট হয় ৪৮ ঘণ্টা ৪১ মিনিট। অর্থাৎ ৫টি অধিবেশনে কোরাম সংকটে ৩২ কোটি ৪২ লাখ ৩১ হাজার টাকার অপচয় হয়েছে।
জাতীয় সংসদকে পুতুল নাচের নাট্যশালা মন্তব্য করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সার্বিকভাবে সংসদের কার্যক্রমে আমরা হাতাশ। সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য নয়। সংসদীয় আচরণ থেকে ব্যাপক বিচ্যুতি হয়েছে। একটি দল বা জোট যাদের সংসদে উপস্থিত নেই, তাদের নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। প্রতিপক্ষের সমালোনা আগের সংসদের চেয়ে ১২ গুণ বেড়েছে।’
ড. জামান বলেন, ‘মূলত ক্ষমতাসীন দলের একছত্র ভূবন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সংসদ। এ ছাড়া সংসদ বিরোধী দলের সমালোনা ও ক্ষমতাসীন দলের প্রশংসার স্থান হিসেবে পরিণত হয়েছে। নিয়ম রক্ষার্থে এক ধরনের সংসদ চলছে।’
তিনি বলেন, ‘সংসদীয় কমিটির মূল দায়িত্ব পালনের প্রতি অনিহা, ও সংসদ সদস্যদের অবহেলা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। নবম সংসদে বিরোধী দলের উপস্থিতর হার চার শতাংশ। এবার বিরোধী দলের উপস্থিতি ৫৩ শতাংশ। সেদিক থেকে সংসদে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে বিরোধী দল কতটুকু বিরোধী তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।’
বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর থেকে প্রশ্নবিদ্ধ ‘প্রধান বিরোধী দল’ এর জোরালো ভূমিকার ঘাটতিসহ নানা কারণে সংসদ প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দশম সংসদের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশন পর্যন্ত সময়ে আইন পাসের জন্য বিল প্রতি ব্যয়িত গড় সময় ও প্রতি কার্যদিবসের সদস্যদের গড় উপস্থিতর হার তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি ও গড় কোরাম সংকট হ্রাস পাওয়ার মতো কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর থেকে প্রশ্নবিদ্ধ প্রধান বিরোধী দলের প্রত্যাশিত জোরালো ভূমিকার ঘাটতি; সংসদের বাইরের রাজনৈতিক জোট নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক সমালোচনা ও অশালীন ভাষার প্রাধান্য; অসংসদীয় আচরণ ও ভাষার ব্যবহার বন্ধে স্পিকারের শক্তিশালী ভূমিকার অনুপস্থিততি; বিধান থাকলেও আন্তর্জাতিক চুক্তি বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত না হওয়া; আইন প্রণয়ন; প্রশ্নোত্তর ও জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশের আলোচনায় সদস্যদের কম অংশগ্রহণ; কমিটির সদস্যদের ব্যবসায়িক সংশ্লিষ্টতাসহ স্বার্থের দ্বন্দ্ব; সংসদীয় কার্যক্রমে তথ্যের উন্মুক্ততা ও অভিগম্যতার ঘাটতি ইত্যাদি কারণে সংসদ প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর হয়নি।
পর্যবেক্ষণাধীন অধিবেশনগুলোতে সংসদীয় আলোচনার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো সরকারি দল ও ‘প্রধান বিরোধী দল’ সম্মিলিত সুরে সংসদের বাইরে রাজনৈতিক দলের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। সরকারের মন্ত্রিসভার অংশবিশেষ এই কথিত ‘প্রধান বিরোধী দলের’ সরকারের লেজুড়বৃত্তি ছিলো পরিস্কার। তদুপরি সরকার দলের পক্ষ থেকেও এই লেজুড়বৃত্তিকে বিভিন্নভাবে দশম সংসদের ইতিবাচক অর্জন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা অব্যাহত ছিল।
প্রতিবদনটি ‘পার্লামেন্টওয়াচ’ ধারাবাহিকের ১২তম ও দশম জাতীয় সংসদের ওপর দ্বিতীয় প্রতিবেদন। ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে ২০১৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সময়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী উপ-নির্বাচহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান, রিসার্চ এ্যান্ড পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফাতেমা আফরোজ, মোরশেদ আক্তার, প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুলিয়েট রোজেটিসহ আরও অনেকেই এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর, শীর্ষ সংবাদ