নূর হোসেন কারাগারে, রিমান্ড চান নিহত নজরুল স্ত্রী-শ্বশুর
দেশের খবর: নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার প্রধান আসামি, বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেনকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
(শুক্রবার) দুপুর আড়াইটার দিকে নারায়ণগঞ্জের মুখ্য বিচারিক হাকিম শহিদুল ইসলাম তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে বেলা ২টা ২০ মিনিটে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নূর হোসেনকে জেলা পুলিশ লাইনস থেকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় নূর হোসেনের বিরুদ্ধে ১৩ মামলার ১১টিতে গ্রেফতার দেখানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
নূর হোসেনকে হাজির করার খবরে আদালত চত্বরে সমায়েত হন নিহতদের স্বজনরা। এ সময় বিভিন্ন স্লোগানে নূর হোসেনের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দাবি করেন তারা।
এদিকে, নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়েছেন নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ও তাঁদের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেনও একই দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা কারা আছে, তা জানা যাবে।
বিউটি বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রিমান্ডে নিয়ে তাঁর (নূর হোসেন) মুখ থেকে জানা হোক, আসল পরিকল্পনাকারী ও একা নাকি ওর সাথে কারা কারা সম্পৃক্ত আছে এবং অর্থের জোগানদাতা কে। আমরা চাই, রিমান্ডে নেওয়ার পরে আবার যাতে তদন্ত করে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয়া হয়।’
শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদ করলে জাতি, পৃথিবী, মানুষ জানতে পারব যে ওর পেছনে কে কে আছে। নূর হোসেনের সাথে কে কে থাইকা এ হত্যা করছে।’
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে নূর হোসেনকে ফেরত দিয়েছে ভারত। ভোরে ঢাকার উত্তরায় র্যাব-১-এর কার্যালয়ে আনা হয় তাঁকে। সেখান থেকে সকালে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনে নেয়া হয় নূর হোসেনকে।
গত বছরের ২৭ এপ্রিল সাত খুনের পরে ভারতে পালিয়ে যান নূর হোসেন। ওই বছরের ১৪ জুন কলকাতার বাগুইআটিতে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে অবস্থানের মামলা হয়। গত মাসে ভারত সরকার সেই মামলা প্রত্যাহার করে নিলে নূর হোসেনের দেশে ফেরার পথ সুগম হয়। এরপর ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (আলফা) সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়াকে নয়া দিল্লির কাছে হস্তান্তরের একদিনের মধ্যেই গতকাল নূর হোসেনকে ফেরত পাঠায় ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ।
গত বছরের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে দুটি গাড়িতে থাকা সাতজনকে অপহরণ করা হয়। এর মধ্যে একটি গাড়িতে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং তাঁর সহযোগীরা। অন্য একটি গাড়িতে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক। তিন দিন পরে অপহৃত ব্যক্তিদের লাশ ভেসে ওঠে নারায়ণগঞ্জের উপকণ্ঠে শীতলক্ষ্যা নদীতে। এ ঘটনা সারা দেশে হইচই ফেলে দেয়।
অপহরণের পরদিন অপহৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ফতুল্লা থানায় নূর হোসেনসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার এজাহারে র্যাবকে দিয়ে অপহরণের অভিযোগ করা হয়। তিন দিন পরে লাশ উদ্ধার হলে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। পরে আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে আরেকটি হত্যা মামলা করেন।
কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম প্রথমে র্যাবের বিরুদ্ধে ‘ছয় কোটি টাকা নিয়ে’ অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ করেন। অর্থায়নকারী হিসেবে তিনি নূর হোসেনকে অভিযুক্ত করেন। পরে তদন্তে এ ঘটনার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে র্যাব-১১-এর কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা বের হয়ে আসে। র্যাব-১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার এম এম রানাসহ অন্য সদস্যরা মিলে ওই সাতজনকে অপহরণের পর হত্যা করে পেট চিরে লাশ নদীতে ফেলে দেন বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে। প্রায় এক বছর তদন্তের পরে গত এপ্রিলে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এতে র্যাবের ওই তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
নূর হোসেন হলেন অভিযোগপত্রভুক্ত ১ নম্বর আসামি। অভিযুক্ত ৩৫ জনের মধ্যে বর্তমানে র্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ ২২ জন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। ২২ জনই ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। পলাতক আসামিদের মধ্যে র্যাবের আট সদস্য রয়েছেন।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর, শীর্ষ সংবাদ