৬ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন, ছোট্ট তাহেরার জন্য সুস্থ হতে চান বৃক্ষমানব
দেশের খবর// দেশে এই প্রথম অজানা এক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন আবুল বাজানদার (২৫)। অনেকে যাকে বৃক্ষমানব বলছেন। আর চিকিৎসকরা এখনো নির্ণয় করতে পারেননি রোগটির নাম। তবে রোগীর প্রাথমিক লক্ষণ দেখে চিকিৎসকরা মনে করছেন হিউম্যান পারপোরিয়াস ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন তিনি। কঠিন এই রোগে ভোগা আবুল বাজানদার তার ছোট্ট মেয়ে তাহেরার জন্য সুস্থ হতে চান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোববার দুপুরে তার সঙ্গে কথা হয়।
সত্যিই যদি আবুল বাজানদার হিউম্যান পারপোরিয়াস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে পৃথিবীতে মাত্র তিনজন আক্রান্তের মধ্যে তিনি একজন। এখন পর্যন্ত এই রোগের স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই বলেও ডাক্তাররা জানিয়েছেন।
খুলনা জেলার পাইকগাছার এলাকার বাসিন্দা আবুল বাজানদার। গত দশ বছর ধরে তিনি এই রোগে আক্রান্ত। গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ৫১৫ নাম্বার কেবিনে ভর্তি হয়েছেন। এই রোগের কারণে তার হাত ও পায়ে গাছের শেকড়ের মতো মাংস পেশি গজিয়েছে।
তার এই অজানা রোগের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনকে প্রধান করে ৬ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে আছেন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম, ক্লিনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ডা. মো. সাজ্জাদ খোন্দকার, অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়াল, অধ্যাপক ডা. মো. খান আবুল কালাম আজাদ ( ডিএমসিএইচ), সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. ইমদাদুল হক (ডিএমসিএইচ)। ডা. সামন্ত লাল সেন রোববার দুপুরে বলেন, তারা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি রোগটি সম্পর্কে। তাদের বিশেষজ্ঞ দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। তবে রোগীর লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে তিনি হিউম্যান পারপোরিয়াস ভাইরাসে আক্রান্ত। তবে এর সঙ্গে ক্যান্সার বা অন্য কোনো রোগের সম্পর্ক আছে কিনা তাও তারা খতিয়ে দেখছেন। চিকিৎসা সম্পর্কে ডা. সামন্ত লাল বলেন, সামনের সপ্তাহে তার হাতে সার্জারি করার চিন্তা রয়েছে। সবকিছু নিশ্চিত হওয়ার পরই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে আবুল বাজানদার বলেন, দশ বছর আগে অাঁচিলের মতো দেখা দেয়। তখন তেমন গুরুত্ব দেননি। কিন্তু দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থেকে অাঁচিল। ক্রমেই এগুলো বড় হতে থাকলে তিনি একাই কাঁচি দিয়ে কাটতেন। পাঁচ বছর আগে এগুলো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে থাকে। পরে স্থানীয় হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করেন। পরে তার কাছে কোনো ফল না পেয়ে কলকাতায় যান। ওইখানেও ডাক্তাররা কিছু করতে পারেননি। তিনি বলেন, তিনি ভ্যান চালিয়ে জীবনযাপন করতেন। এখন অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় ডাক্তাররা বলেন, ওষুধে কাজ হবে না সার্জারি করাতে হবে। সার্জারি করতে এখন দুই লাখ টাকা লাগবে। তিনি এত টাকা কোথায় পাবেন। সবাই মিলে তাকে সহযোগিতা করলে তিনি হয়তো আগের মতো হয়ে যেতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, তাহেরা নামে একটি তিন বছরের একটি মেয়ে আছে তার। তিনি তাকে পড়ালেখা করাতে চান। তিনি সুস্থ না হলে তার কী হবে। তিনি ছোট্ট তাহেরার জন্য সুস্থ হতে চান। আবুল বাজানদারের মা আমেনা বেগম বলেন, তারা ছেলের চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত দুই লাখ টাকা খরচ করেছেন। আর খরচ করার মতো টাকা নেই। এখন যদি সবাই তার ছেলেকে সাহায্য না করে তা হলে তাকে তিনি আর ভালো করতে পারবেন না।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর