• ১৩ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,27 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

দ্বৈত নাগরিকত্ব আইনে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

| ফেব্রুয়ারী 16, 2016 | 0 Comments

imagesবিশ্বজুড়ে বাংলা: দ্বৈত নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন করে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের দাবি জানিয়েছে প্রবাসী বাঙ্গালী কল্যান সমিতি (প্রবাকস)।নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়। স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় (বাংলাদেশ সময় রবিবার সকাল ৬টা) অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সন্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক দেওয়ান বজলু চৌধুরী। এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মোশাররফ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আখলাকুল আম্বিয়া চৌধুরী, সহ সাধারন সম্পাদক সাইদুর রহমান, একজিকিউটিভ মেম্বার সাহাবুদ্দীন এবং কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিগন উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে দেওয়ান বজলু চৌধুরী বলেন, সদ্য অনুমোদিত ওই আইনে দ্বৈত নাগরিকরা ভোটে দাঁড়াতে পারবেননা তা স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন কি না তা স্পষ্ট উল্লেখ নেই। আমরা আশংকা করছি- যেহেতু দ্বৈত নাগরিকরা ভোটে দাঁড়াতে পারবেননা তাহলে তারা ভোটও দিতে পারবেননা। এই অস্পষ্টতার কারণে আমরা দ্বিধাগ্রস্থ বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, প্রবাসী বাঙ্গালি কল্যাণ সমিতি (প্রবাকস) দীর্ঘদিন যাবৎ প্রবাসীদের ভোটাধিকারের দাবিতে নিয়মতান্ত্রিক সামাজিক আন্দোলন করে আসছে। প্রবাসীদের ভোটাধিকার বিষয়ে এর আগের মেয়াদে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সংসদে আইন পাস করেন এবং ওই আইনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেয়া হয়। ওই আইন কার্যকর করতে ইতোমধ্যে প্রবাসীরা বিভিন্ন দেশ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে অনেকে বাংলাদেশে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহন করেছেন এবং ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকেই ভোটের সময় বাংলাদেশে গিয়ে অনেকেই ভোট দিচ্ছেন। সদ্য সমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচনেও বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা অনেকেই ভোট দিতে বাংলাদেশে গেছেন। আবার কেউ কেউ নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছেন। তারা বলেন, দ্বৈত নাগরিকত্ব আইনের ফলে আমরা যারা বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়েছি, বাংলাদেশে জন্ম নেয়ার পরও আমাদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই আইনের ফলে প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হবেন। ইতোমধ্যে যারা বিনিয়োগ করেছেন তারাও বিনিয়োগের টাকা ফেরৎ নিয়ে আসতে পারেন বলে সংবাদ সম্মেলনে আশংকা প্রকাশ করা হয়।

দেওয়ান বজলু চৌধুরী বলেন, দ্বৈত নাগরিকত্ব আইনে ভোটাধিকার ও ভোটে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি বাদ দিলে আরো একটি আত্মঘাতি বিষয় জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাহলো-দ্বৈত নাগরিকরা বাংলাদেশ সরকারের কোনো চাকরি করতে পারবেননা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতিসংঘের সদ্য বিদায়ী সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ডঃ এ কে আবদুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় দুই যুগ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সূত্রে আমেরিকার নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন। তার সুদীর্ঘ প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতাকে উজাড় করে দিয়ে জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনে কাজ করেছেন। শান্তি মিশনে বাংলাদেশের সর্বাধিক সৈন্য সরবরাহের পাশাপাশি হেলিকাপ্টার ভাড়া দিয়েও এখন কোটি কোটি ডলার বাংলাদেশের আয় হচ্ছে। বাংলাদেশের সমূদ্র বিজয়সহ জাতিসংঘে বিভিন্ন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের পিছনে সক্রিয়ভাবে দিনরাত কাজ করেছেন ডঃ আবদুল মোমেন। বজলু চৌধুরী বলেন, বিশ্বজুড়ে ড. মোমেনের মতো আরো অনেক বিশিষ্টজন আছেন। কাজ করার সুযোগ পেলে সকলেই দেশের জন্য কাজ করতে রাজি আছেন। কিন্তু নতুন এই আইনে আমাদের দেশে ফিরে যাবার পথ বন্ধ হয়ে গেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।

বজলু চৌধুরী নতুন এই বিষয়ে আগামী প্রজন্মের বিষয়ে বলেন, প্রবাসে জন্মগ্রহনকারী নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এমনিতেই বাংলাদেশে যেতে চায়না। তারা উচ্চ শিক্ষা শেষ করে অনেকেই বিদেশে থাকছে। বিদেশে উচ্চ শিক্ষিত প্রজন্মকে দেশের প্রতি আকৃষ্ট করতে বছরে অন্তত একবার আমরা বাংলাদেশে নিয়ে যেতে চেষ্টা করি। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের যদি কোনো অধিকার না থাকে তবে তারা বাংলাদেশে যাবে কেনো?

সংবাদ সম্মেলনে রেমিটেন্স বিষয়ে দেওয়ান বজলু চৌধুরী বলেন, নতুন এই আইনের ফলে আগামী কয়েক বছর পর ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়াসহ যেসব দেশে বাংলাদেশিরা দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েছেন ওইসব দেশ থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাবে। তিনি বলেন, আমাদের পরের প্রজন্ম যদি বাংলাদেশ বিমুখ হয়ে যায়, বাংলাদেশে তাদের যদি কাজ করার সুযোগ না থাকে তাহলে তারা বাংলাদেশে যাবে কেনো? বাংলাদেশে না গেলে বিনিয়োগ বাড়বে কীভাবে? আর তারা যদি বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক চুটিয়ে ফেলে তাহলে বাংলাদেশে টাকা পাঠাবে কে? যদি সত্যিই সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে আগামী ১০-২০ বছর পর ইউরোপ-আমেরিকা থেকে প্রবাসীদের রেমিটেন্স অর্ধেকে নেমে আসবে। তারপর একসময় হয়তো শূণ্যে নেমে যাবে। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বলে প্রশ্ন তোলেন।

দেওয়ান বজলু চৌধুরী বলেন, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তিনজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক নির্বাচিত হয়েছেন। আগামীতে অন্যান্য দেশেও মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় হবে বাংলাদেশিরা।কিন্তু দ্বৈত নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক ঢিলে হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আমাদের আগামী প্রজন্মকেও ওই আইনে অস্বীকার করা হয়েছে। বাংলাদেশ যে আমাদের সন্তানদের সাত পুরুষের দেশ প্রবাসে বেড়ে ওঠা আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যদি তা ভুলে যায় তাহলে বাংলাদেশের কী অবস্থা হবে? বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলার মতো বিদেশে কোনো লোক খুঁজে পাওয়া যাবেনা বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন সংস্কার করে প্রবাসী বাঙ্গালী কল্যাণ সমিতির (প্রবাকস) পক্ষ থেকে ১১ দফা দাবি পেশ করা হয়। সেখানে দ্বৈত নাগরিকদের ভোটাধিকার, বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখার জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়ানোর সুযোগ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যাতে স্থানীয় সরকারে ৪০ভাগ এবং জাতীয় সংসদে ২০ ভাগ প্রবাসী প্রার্থী দেয় সেজন্য কোটা সংরক্ষণ. জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পীকার, মন্ত্রীসভার সদস্য, হুইপ এবং সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদ সংরক্ষণের দাবি জানানো হয়। এছাড়া দ্বৈত নাগরিকদের শিক্ষকতা, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যাংকিং, গবেষণা, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বাংলাদেশ সরকারের সকল চাকরিতে উচ্চ পর্যায়ে নিয়োগ, বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা, উচ্চ শিক্ষা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, মেডিকেল, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, ইলেকশন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো, বিনিয়োগ বোর্ড, ইপিজেড, বিচার বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদ সচিবালয়, বিসিএসসহ সকল চাকরিতে প্রবাসীদের জন্য কোটা সংরক্ষণ, জাতীয় সংসদে বিদ্যমান ৩০০ আসনের বাইরে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনের মতো দ্বৈত নাগরিকদের জন্য ৫০টি আসন সংরক্ষন, বিদেশি পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি/দ্বৈত নাগরিকদের বাংলাদেশের প্রতিটি বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, ডুয়েল সিটিজেন অ্যাওয়ার্ড প্রবর্তন, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীনে ডুয়েল সিটিজেন ডিপার্টমেন্ট খুলে দ্বৈত নাগরিকদের বিনিয়োগ ও বাংলাদেশে অবস্থানকালীন পুলিশি নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে রাষ্ট্রদূত, উপরাষ্ট্রদূত, কনসাল জেনারেল, কাউন্সিলর, ১ম সেক্রেটারিসহ শীর্ষপদ গুলোতে নিয়োগ দিতে দ্বৈত নাগরিকদের জন্য কোটা সংরক্ষণের দাবি জানানো হয়।

Category: Scroll_Head_Line, বিশ্বজুড়ে বাংলা

About the Author ()

Leave a Reply