প্রধানমন্ত্রীর জিজ্ঞাসা, ‘ডিজিএফআইএ’র সঙ্গে মাহফুজ আনামের কী সখ্য ছিল?
রাশিদ রিয়াজ/দীপক চৌধুরী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের যেমন বিচার হচ্ছে সেইভাবে সংবিধান হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদেরও বিচার হবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সোমবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় ডিজিএফআইয়ের পাঠানো সংবাদ ছেপেছেন ভয়ে, তা জাতির কাছে স্বীকার করুন। তিনি বলেন, হয় ভয়ে লিখেছেন, তাহলে আর নির্ভীক সাংবাদিকতা থাকে না। আর যদি তাদের কাছে বিক্রি হয়ে থাকেন, সখ্যতা থাকে সেখানে আমার কিছু বলার নেই। আর যদি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকেন, গণতন্ত্রকে হত্যা করে ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করা করেছিল, এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল, এদেশের মানুষকে এইভাবে নির্যাতনের শিকার করেছিল, যুদ্ধাপরাধীদের যেমন বিচার হচ্ছে ঠিক সেইভাবে একদিন এদের সংবিধান হত্যা করার বিচার হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের দুটি পত্রিকা গত বিশ বছর ধরে আওয়ামী লীগ এবং আমার নামে কুৎসা রটনা করেছে। তাদের মুখোশ আজ উন্মোচিত। দেশের দুই শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের দুই সম্পাদকের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের এক স্বীকারোক্তির পরিপ্রেক্ষিতে এমন কড়া মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
এক এগারোর পরিস্থিতি উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময় ডিজিএফআই শক্তিশালী হতে চেয়েছিল। ব্রিগেডিয়ার আমিন ও বারী তারাই দেশ চালাতো। ব্যবসায়ীদের ধরে টাকা নেয়া, হয়রানি করা এসব তারা করতো। তারা যেসব পাঠাতো ওই সম্পাদক তা ছেপে দিতেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের পত্রিকায় লেখা থাকে নির্ভিক সাংবাদিকতা। নির্ভিক সাংবাদিকতা কাকে বলে? ডিজিএফআই’র তথ্য উনি ছেপে দিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের সাথে ওনার কী সখ্যতা ছিল। তিনি এদের হাতে বিক্রি হয়েছিলেন, অথবা মাইনাস টু ষড়যন্ত্রের সাথে ওই সম্পাদকদ্বয় জড়িত ছিলেন? যদি ভয়ে লিখে থাকেন তাহলে তো নির্ভিক থাকলো না। তারা যদি ভুল স্বীকার করেন তাহলে কিছু করার নেই। আর যদি ষড়যন্ত্র করে থাকেন তাহলে দেশের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ধ্বংসকারী, ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার হয়েছে সংবিধান অনুযায়ী এদেরও তেমনি বিচার হবে। কোন পথ বেছে নিবেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা এমনভাবে লেখে যেন আমাকে দুর্নীতিবাজ বানিয়েই ছাড়বে। আমরা আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে চেষ্টা করেছেন। মাহফুজ আনাম, বিশ্বব্যাংক আপনার পিতৃস্বরূপ তারাও আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে পারেনি। তার বিরুদ্ধে বহু মামলা হয়েছে সেটা নিয়ে বহু হা-হুতাশ দুঃখ। আমি তখন এ কথা বলেছিলাম গাইয়ের বাছুর নাকি বাছুরের গাই। এখন যেন সবাই বাছুরের গাই হয়ে গেছে। মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাবেক সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে মাইনাস টু ফর্মুলার মাধ্যমে তাকে ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে দুই পত্রিকার সম্পাদক জড়িত ছিলেন কি-না, এ প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম আমাকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণে বার বার মিথ্যা সংবাদ ছাপছিলেন। এখন ভুল স্বীকার করায় তাকে সাংবাদিকতা ছেড়ে দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, দু’টি পত্রিকা ডিজিএফআইয়ের লিখে দেওয়া মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে সে সময় রাজনীতি থেকে আমাকে এবং খালেদাকে চিরদিনের জন্য সরিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়েছে। আর ডেইলি সম্পাদক মাহফুজ আনাম দুর্নীতিবাজ বানানোর জন্য আমাকে বহু চেষ্টা করেছিলেন। তিনি স্বীকারও করেছেন, ডিজিএফআইয়ের চাপে তিনি সেসব নিউজ ছেপেছিলেন। এখন ভুল স্বীকার করায় তার পদত্যাগ করে সাংবাদিকতা থেকে সরে আসা উচিৎ। বিশ বছর ধরে ওই দু’টি পত্রিকা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা লিখে চলেছে বলেও অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর।
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সেনা গোয়েন্দা সংস্থা জিডিএফআই সরবরাহ করা সংবাদ প্রকাশের জেরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে করা মামলার সমালোচনাকারীদেরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কয়টা মামলাতেই ঘাবড়ে গেলেন?’//আমাদের সময়.কম
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর, শীর্ষ সংবাদ