মাসিক বাংলা নিউজ’র প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন
বিশ্বজুড়ে বাংলা: যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে প্রকাশিত মাসিক বাংলা নিউজ’র প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, সমাজ-দেশ-জাতি গঠনে মিডিয়া তথা সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সর্বত্রই দ্বিধা-বিভক্তির যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে সবাই উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে দ্বিধা-বিভক্তির রাজনীতি দেশ, দেশের মানুষকে বিভক্ত করে ফেলছে। বক্তারা দেশ ও প্রবাসের সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে যথাযথ দায়িত্ব পালন করলেই অনেক জাতীয় সমস্যার সমাধান সম্ভব হতে পারে মন্তব্য করেন। উল্লেখ্য, ভাষার মাস ফেব্রুয়ারীতে গত বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী মাসিক বাংলা নিউজ প্রকাশিত হয়।
সিটির এস্টোরিয়াস্থ টাইম টেলিভিশন ও সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র নিউজ কক্ষে গত ২৭ ফেব্রুয়ারী শনিবার অপরাহ্নে আয়োজিত বাংলা নিউজ-এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টাইম টেলিভিশন-এর সিইও এবং সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক আবু তাহের। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক, অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি বিশিষ্ট সাংবাদিক মঈনুদ্দীন নাসের, বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সাবেক এমপি লিয়াকত আলী, চট্টগ্রাম এসোসিয়েশন অব ইউএসএ’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুর রহিম এবং আইটিভি’র সিইও মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ-এর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা নিউজ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ খোরশান। অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ ছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র বার্তা সম্পাদক হাবিব রহমান, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ সিরাজুল ইসলাম, মেহেরুন্নেসা জোবায়দা মেরী, টাইম টিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি শিবলী চৌধুরী কায়েস ও কমিউনিটি আউটরীচ ডিরেক্টর সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ও উপস্থাপক জি এইচ আরজু, ডা. উম্মে রশীদ লুনা, ডা. নাহিদ খান ও শিল্পী শম্পা জামান। অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিবৃন্দ কেক কেটে মাসিক বাংলা নিউজ’র বর্ষপূর্তীতে শুভ কামনা করেন। সবশেষে অনুষ্ঠিত বিশেষ দোয়া মুনাজাত পরিচালনা করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে শেখ মোহাম্মদ খোরশান বলেন, ফিলাফেলডিয়াসহ নিউজার্সী, কাকেটিকাট, পেনসিলভেনিয়া, দেলোয়ার, ম্যারিল্যান্ড, ভার্জিনিয়ায় বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীদের কথা বিবেচনা করেই তাদের মুখপত্র হিসেবে মাসিক বাংলা নিউজ প্রকাশিত হচ্ছে। প্রকাশনার এক বছরে বাংলা নিউজ’র পৃষ্ঠপোষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি পত্রিকাটির অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেন। সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বাংলা নিউজ’র সাফল্য কামনা করে বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকতার প্রেক্ষাপটে উত্তর আমেরিকার বাংলা সাংবাদিকতা বিবেচনা করলে ফিলাডেলফিয়া একটি মফস্বল এলাকা। সেখান থেকে বাংলা ভাষায় পত্রিকা প্রকাশনা দু:সাহসিক কাজই বটে। তিনি বলেন, উত্তর আমেরিকায় এখন বাংলাদেশী কমিউনিটি অনেক বড়। এখন ঢাকার নিউজ তথা বাংলাদেশের নিউজের চেয়ে স্থানীয় কমিউনিটির নিউজ প্রাধান্য দেয়া উচিৎ। কেননা, দেশের খবর এখন মূহুর্তেই বিভিন্ন টিভি, ইন্টারনেট, ফেসবুক প্রভৃতির মাধ্যমে জানতে পারছি। তিনি বলেন, প্রবাসে আঞ্চলিকতা আর দেশীয় রাজনীতির প্রাধান্য না দিয়ে ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি গড়ার পাশাপাশি মূলধারার রাজনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সম্পৃক্ততা জরুরী। এক্ষেত্রে বাংলা মিডিয়াগুলো বিশেষ ভ’মিকা রাখতে পারে।
মঈনুদ্দীন নাসের বলেন, দেশ-জাতি আর প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটিকে সঠিক পথ দেখাতে সঠিক আর বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার বিকল্প নেই। আমার বিশ্বাস শত সমস্যার মধ্যেও বাংলা নিউজ সততার সাথে কমিউনিটির সেবায় অবদান রাখবে। লিয়াকত আলী বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি নষ্ট হয়ে গেছে। এই নষ্ট রাজনীতি থেকে একমাত্র মিডিয়াই জাতিকে রক্ষা করতে পারে। এজন্য সকল মিডিয়া আর সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে পেশাগত মর্যাদাকে প্রাধান্য দিয়ে দলকানা সাংবাদিকতার উর্ধ্বে উঠতে হবে।
আব্দুর রহিম বলেন, আমার জীবনের চারভাগের তিন ভাগ সময়ই প্রবাসে কাটছে। যুক্তরাজ্যের পর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছি। একসময় বাংলা ভাষায় পত্রিকা পড়ার সুযোগ ছিলো না, বাংলা ভাষার টেলিভিশন ছিলো না। আর এখন সপ্তাহে একাধিক বাংলা ভাষার পত্রিকা হাতে পাচ্ছি, ঘরে বসেই বাংলা টিভি দেখতে পাচ্ছি। প্রবাসী জীবনে এটি আমাদের বড় অর্জন। তিনি বাংলা নিউজসহ নিউইয়র্কের সকল মিডিয়ার সাফল্য কামনার পাশাপাশি সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা উপহার দেয়ার জন্য মিডিয়াকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
হাবিব রহমান বলেন, ফিলাডেলফিয়ার মতো অঙ্গরাজ্য থেকে নিয়মিত পত্রিকা প্রকাশনা সহজ কাজ নয়, দু:সাহসিক কাজ। আর সেই কাজটিই করছেন বাংলা নিউজ’র সম্পাদক/প্রকাশক শেখ মোহাম্মদ খোরশান। তিনি বাংলা নিউজ’র উত্তোরত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন। শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে বিশেষ করে নিত্যদিন হত্যা, খুন, গুম, বিরোধী মতের বিরুদ্ধে সরকারী নিপীড়ন-নির্যাতন, হামলা-মামলা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, মিডিয়ার স্বাধীনতা প্রভৃতি ঘটনা ঘটছে সেখানে প্রবাসের মিডিয়াগুলোর বিশেষ ভূমিকা রাখার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, দলকানা সাংবাদিকতার পরিবর্তে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছে।
শিবলী চৌধুরী কায়েস বলেন, পেশাদারিত্বপূর্ণ সাংবাদিকতাই একটি পত্রিকাকে পাঠক প্রিয় করে তুলতে পারে। জি এইচ আরজু বলেন, সাংবাদিকতা মহান পেশা, মহৎ পেশা। দেশ ও প্রবাসের সাংবাদিকদের বিভক্তি এই পেশাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ফলে দেশ-জাতি, দেশের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই বিভক্তি থেকে সাংবাদিকদের বেড়িয়ে এসে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরী বলে তিনি মন্তব্য করেন।
Category: Scroll_Head_Line, বিশ্বজুড়ে বাংলা