টোকিও নগরীতে নতুন চ্যান্সারী ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
বিশ্বজুড়ে বাংলা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ এখানে বাংলাদেশের নবনির্মিত চ্যান্সারী ভবন উদ্বোধনকালে আশা প্রকাশ করেছেন যে, বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার জাপানের সঙ্গে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক দিনে দিনে আরো জোরদার হবে। তিনি বলেন, জাপান হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর অন্যতম এবং বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার। তাই, আমরা ঐতিহাসিক টোকিও নগরীর কেন্দ্রস্থলে আমাদের নিজস্ব একটি ঠিকানা পেয়ে নিঃসন্দেহে গর্বিত। প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭১৪ বর্গমিটার এলাকায় টোকিও’র কেন্দ্রস্থলে কিওইচো, ছিওদা-কু এলাকায় বাংলাদেশের দূতাবাসের নতুন ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা স্বাগত বক্তৃতা করেন। জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারী ফ্রেন্ডশীপ লীগের মহাসচিব ইচিরো তাসুকাদা এমপি এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সেইজি কিহারা বক্তৃতা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাপান সফরকারী প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মধ্যে একমাত্র বেঁচে থাকা ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর কণিষ্ঠ বোন শেখ রেহানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর সফরের মধ্য দিয়ে জাপানের সঙ্গে বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল। প্রতিনিধি দলের আরেক সদস্য শেখ রাসেল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দুর্ভাগ্যের রজনীতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নৃশংসভাবে নিহত হন। শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে জাপানের অবদান বিশেষ করে আমাদেরকে সহায়তা দেয়ার জন্য টিফিনের অর্থ বাঁচিয়ে জাপানী শিশুদের অর্থ সংগ্রহের কথা স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর জাপান যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠনে সব ধরনের সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছিল। তিনি বলেন, জাপান সরকার এবং জাপানের প্রতিটি লোক আমাদের জন্য তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।
আর্থ-সামাজিক ও উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুটি দেশের মধ্যে বিদ্যমান দীর্ঘ দিনের সম্পর্কের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সম্পর্ক জোরদার রাখার লক্ষ্যে সবসময় সচেষ্ট। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সবসময় দেশের সকল উন্নয়ন কর্মকা-ে জাপানের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, হোটেল সোনারগাঁও, যমুনা সেতু, রূপসা সেতু এবং পদ্মা সেতু নির্মাণে জাপানের ব্যাপক অবদান রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাপান আমাদের কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাতারবাড়িতে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে। তারা (জাপান) আমাদের মেট্রোরেল প্রকল্পসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পেও সহযোগিতা করছে।
তিনি বলেন, কাজেই জাপানের সঙ্গে বন্ধুত্বকে আমরা সবসময়ই গুরুত্ব দিয়ে থাকি এবং আমরা তাদের সহযোগিতার কথা কখনও ভুলে যাব না।’শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ’৯৬ মেয়াদে সরকার গঠনের পর থেকেই নিজস্ব চ্যান্সেরি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। নতুন ভবন নির্মাণের ফলে দূতাবাসের কাজে আরো গতিশীলতা আসবে এবং জাপানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁকে জি-৭ বেঠকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই আমন্ত্রণের ফলে পুনরায় জাপান সফর করার পাশাপাশি টোকিওতে নিজস্ব দূতাবাস ভবনও উদ্বোধন করার সুযোগ হলো। ২০১০ সালে যে ভবন নির্মাণের জন্য তিনি নিজেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসানোর জন্যই এই উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।জনগণের রায় তাঁর সরকারকে জনগণের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিয়ে দেশের পরিকল্পিত উন্নয়ন সম্ভবপর করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বড় আকারের বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন এবং নিজস্ব সম্পদ দ্বারাই এর বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জন করেছে।তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য নিজের পায়ে দাঁড়ানো, যেন আমরা বিশ্বসমাজে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলতে পারি- আমরা বাংলাদেশকে সেভাবেই গড়ে তুলতে চাই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
Category: Scroll_Head_Line, বিশ্বজুড়ে বাংলা