তুরস্কে ‘সেনা অভ্যুত্থান’ চেষ্টা! ৪২ জন নিহত, ইস্তাম্বুল ফিরলেন এরদোগান
আন্তর্জাতিক: তুরস্কে ক্ষমতা দখলে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করছে সেনাবাহিনী। সরকারের তরফ থেকে এটাকে বলা হচ্ছে ‘সেনাবাহিনীর একটি অংশের ক্ষমতা দখল চেষ্টা’। তবে, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তারা রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্ব দখলে নিয়েছে।দেশটির বড় বড় শহরে সংঘর্ষ চলছে। এ পর্যন্ত ৪২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (১৫ জুলাই) স্থানীয় সময় এশার নামাজের পর থেকে এ তৎপরতা শুরু হয়েছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ বিষয়ে খবর দিচ্ছে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, সেনাবাহিনী ইস্তাম্বুলের বসফরাস প্রণালীকেন্দ্রিক দু’টি প্রধান যোগাযোগ সেতু বন্ধ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে ইস্তাম্বুল ও রাজধানী আঙ্কারার আকাশে যুদ্ধবিমান দিয়ে চক্কর দিচ্ছে।
সামরিক বাহিনীর চলমান অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার মধ্যেই শনিবার (জুলাই ১৬) ভোরে ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে অবতরণ করলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসিপ তাইয়েপ এরদোগান।
বিমানবন্দরে নেমেই তিনি মুখোমুখি হন সাংবাদিকদের। এ সময় অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে এর হোতাদের কঠোর পরিণতির মুখোমুখি করার হুঁশিয়ারি দেন এরদোগান।
তবে অভ্যুত্থান প্রতিরোধে দ্রুত পাল্টা ব্যবস্থা নেয় তুরস্কের একে পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার। সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন সরকার সমর্থকরা। অনেক স্থানেই অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন সরকার সমর্থিত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
অাঙ্কারায় তুর্কি পুলিশের বিশেষ বাহিনীর হেডকোয়ার্টারে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে হামলা চালায় অভ্যুত্থান সমর্থকরা। এ সময় নিহত হন ১৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা। সরকার সমর্থক এফ-১৬ জঙ্গি বিমানের পাল্টা হামলায় ভূপাতিত হয় অভ্যুত্থান সমর্থক একটি হেলিকপ্টার। এর মধ্যেই সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দেয় তুরস্কের ক্ষমতাশালী জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এমআইটি। এ পরিস্থিতিতে শুক্রবার গভীর রাতে এক বিবৃতিতে অভ্যুত্থানকারীদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বেনআলি ইলদিরিম।
এদিকে অভ্যুত্থানের সময় প্রেসিডেন্ট এরদোগান ছুটি কাটাচ্ছিলেন অবকাশ যাপন কেন্দ্র মারমারিসে। সেখান থেকে দ্রুত তিনি প্রধান নগরী ইস্তাম্বুলে ফিরে আসেন। এছাড়া রাস্তায় নেমে এই অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ জানাতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এই ডাকে সাড়া দিয়ে শনিবার ভোরে ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাতে জড়ো হয় হাজার হাজার সমর্থক। সমর্থক পরিবেষ্টিত এরদোগান আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তিনি ইস্তাম্বুল ছেড়ে কোথাও যাবেন না। অভ্যুত্থানের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত বিতর্কিত ধর্মগুরু ফেতুল্লাহ গুলেন সমর্থিত গুলেন নেটওয়ার্ককে দায়ী করেন। পাশাপাশি যে বা যারা এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত তাদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইস্তাম্বুল ও রাজধানী আঙ্কারার বিভিন্ন স্থানে রাজপথে নেমে এসেছেন এরদোগান সমর্থকরা। তবে এখনও বিভিন্ন স্থান থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। এছাড়া বেশ কিছু জায়গায় অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর অভ্যুত্থান সমর্থক সেনারা গুলি চালিয়েছে বলেও জানা গেছে।
আত্মসমর্পণ করছেন অভ্যুত্থানকারী তুর্কি সেনারা
আত্মসমর্পণ করতে শুরু করেছে তুরস্কের সরকার উৎখাতের চেষ্টাকারী সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।
শনিবার (১৬ জুলাই) সকাল থেকে আত্মসমর্পণ করতে শুরু করেন তারা।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, দেশটির একটি সেতুতে অবস্থান নেয়া অভ্যুত্থানকারী সেনারা তাদের সাঁজোয়া যান থেকে একে একে হাত তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে বেরিয়ে আসছেন।
এর আগে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার শুরুতে শুক্রবার (১৫ জুলাই) রাতে ওই সেতু দখল করেছিলো তারা।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, আন্তর্জাতিক, শীর্ষ সংবাদ