নিউইয়র্কে ট্রেন লাইনে ঝাঁপ দিয়ে বাংলাদেশী সামিয়ার আত্মহত্যা
বিশ্বজুড়ে বাংলা: স্বপ্ন পূরণের আগেই স্বপ্নের সলীল সমাধি। বাংলাদেশী আমেরিকান চতুর্থ বর্ষের কলেজ ছাত্রী সামিয়া খান। বয়স মাত্র ২৩ বছর। বাবা- মার একমাত্র সন্তান। সামিয়া খানের জন্ম নিউইয়র্কেই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য সামিয়া খানের জন্ম হয়েছিলো এলমহার্স্ট হাসপাতালে, আবার তার মৃত্যুও হয়েছে সেই এলমহার্স্ট হাসপাতালে। জন্ম ১৯৯৩ সালে আর মৃত্যু ২০১৬ সালে। সামিয়া খানের স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, গত ২ নভেম্বর রাতে সামিয়া খান বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটসের ৭৪ স্ট্রীট সাবওয়েতে ৭ ট্রেনের লাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।
একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে জানা যায়, সামিয়া খান বাসায় যাবার জন্য সাবওয়েতে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি দেখতে পান যে, তিনি যে দিকে যাবেন সেই দিকের ট্রেন আসছে। এমন সময়ই তিনি তার গায়ের জ্যাকেট খুলে ফেলে ট্রেনের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এমন সময় ঝাঁপ দিয়েছিলেন যে, ট্রেন সেই মূহর্তে থামানোর কোন সুযোগ ছিলো না। যে কারণে মুহূর্তের মধ্যেই সামিয়া খান ট্রেনের নিচে চলে যান। ট্রেনের নিচে পড়ে সামিয়া খানের দুটো পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং মাথায় প্রচন্ড আঘাত পান। সামিয়ার খানের রক্তে লাল হয়ে যায় ট্রেন লাইন ও নীচের রাস্তা রক্তে লাল হয়ে যায় আর এক পায়ের কালো জুতা পরে দেখতে দেখাযায়। বেশ কিছুক্ষণের পুলিশ ও উদ্ধারকর্মীদের সহযোগিতায় গুরুতর আহত অবস্থায় সামিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রায় এক ঘন্টার জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ ও এ্যাম্বুলেন্স এসে সামিয়া খানকে সাথে সাথেই এলেমহার্স্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে ভর্তি করার কয়েক ঘন্টা পর সামিয়া খান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
জানা গেছে, সামিয়া খানের বাসা উডসাইডের ৪৪ এভিন্যুতে হলেও তিনি তার খালার সাথে এস্টোরিয়াতে থাকতেন। উডসাইডে সামিয়া খানের বাবা মিজানুর রহমান খান এবং মা সানু খান থাকেন। সামিয়া খান ছিলেন এই দম্পত্তির একমাত্র সন্তান। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এর আগেও সামিয়া খান ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। মেয়েকে ধর্মীয় অনুশাসনে রাখতে গিয়ে পারিবারিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। বাবা- মা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। যখন বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। অনেকেই বলেছেন, বাবা- মা যদি তাদের সন্তানদের শৈশব থেকেই সময় দিতেন এবং ধর্মীয় অনুশাসনে বা শিক্ষায় গড়ে তুলতেন তাহলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। আবার সামিয়া খানের বন্ধুরা ফেইস বুকে অন্য রকম অভিযোগ করে বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। সমস্যা তৈরি হলে সামিয়া খান এর আগেও একবার ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। সেই সময় হাসপাতালে নিয়ে তাকে বাঁচানো হয়েছিলো। ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার পর সামিয়া খানের এক খালা যিনি এস্টোরিয়ায় থাকেন, তিনি সামিয়াকে নিজের বাসায় নিয়ে যান। এই বাসায় সামিয়ার এক খালাতো বোন রয়েছে। বয়সে তার বড় হলে সামিয়ার সাথে তার ছিলো সুন্দর সম্পর্ক এবং বোঝাপড়া। সেই খালাতো বোনই ছিলো তার বন্ধু, তার বড় বোন। ৭ ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেয়ার পূর্ব মুহূর্তেও সামিয়া খান তার খালাতো বোনকে ফোন করেছিলো। এবং বলেছিলো, ’নাও আই এ্যাম গোয়িং টু বি ঢুয়িং সাম স্টুপিড় থিং।’ এটাই ছিলো খালাতো বোনের সাথে তার শেষ কথা। এই কথা বলতে না বলতেই ঝাঁপ দিয়েছিলো সামিয়া খান। যে দিন সামিয়া খান ট্রেনের নিচে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলো সেই দিন ঝাঁপ দেয়ার পূর্বে সে রোড টেস্ট দিয়েছিলো। রোড টেস্ট শেষ করেই বাসায় ফিরছিলো। আরো ট্রেজেডি ছিলো যখন সামিয়া খান ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেয় তখন তার বাবা মিজানুর রহমান খানও জ্যাকসন হাইটসে ছিলো। তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন। নিয়তির কি নির্মম পরিহাস, এত কাছে থেকেও প্রিয় সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ পাননি। তিনি খবর পেয়েছিলেন অনেক পরে।
আরো জানা যায়, পারিবারিক সমস্যার কারণে সামিয়া খান দীর্ঘ দিন ধরেই মানসিক রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসা চলছিলো এবং নিয়মিত ওষধও খাচ্ছেন। ডিপ্রেশনের কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে অনেকে মনে করেন।
এদিকে নিউইয়র্ক পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। সামিয়াদের পরিবারে এখন শোকের মাতম। বাবা মিজানুর রহমান খান এবং মা সানু খান এখন বাকহারা। শোকে অনেকটা পাথর। এভাবে তারা তাদের একমাত্র সন্তানকে হারাবেন তা কল্পনাও করতে পারেননি।
সামিয়া খানের নামাজে জানাজা গত ৪ নভেম্বর বাদ মাগরিব এস্টোরিয়ার বায়তুল মোকাররম ও ইসলামিক সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় এবং ৫ নভেম্বর তাকে লংআইল্যান্ডের মুসলিম গোরস্তানে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, সামিয়ার বাবা এবং মা ১৯৯৩ সালে আমেরিকায় এসেছিলেন। তাদের দেশের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জে।
Category: Scroll_Head_Line, বিশ্বজুড়ে বাংলা