২০১৭ সালের জাতীয় নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের দলীয় প্রার্থী ফ্রঁসোয়া ফিলো।
ইউরোবিডি ডেস্ক :২০১৭ সালের জাতীয় নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান দলের দলীয় প্রার্থী নির্বাচনের ২য় ও চূড়ান্ত ধাপের ভোটে ২৭ নভেম্বর রবিবার ব্যাপক ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন ফ্রঁসোয়া ফিলো। প্রতিদ্বন্দ্বী আঁলা জোপে ফ্রঁসোয়া ফিলোকে স্বাগত জানিয়েছেন। আগামী বছর মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে রিপাবলিকানদের হয়ে লড়বেন ফ্রঁসো ফিলো।উল্লেখ্য, সারকোজির ২০০৭- ২০১২ শাসনামলে ফ্রঁসোয়া ফিলো প্রধান মন্ত্রী ছিলেন। এর আগে তিনি ২০০৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। তারও আগে ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ফিলো উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রী ছিলেন।
ফ্রঁসোয়া ফিলোর উল্লেখ যোগ্য ৮টি নির্বাচনী অঙ্গীকার নিচে দেয়া হল, যা তিনি ২০১৭ সালের ফ্রান্সের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হলে বাস্তবায়ন করবেন বলে তার নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করেছেন।
১) ৫ বছরে সরকারী ব্যয় থেকে ১০০ বিলিয়ন ইউরো সাশ্রয় করা।
২) সাপ্তাহিক কাজের সময় সীমা সরকারী ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে ৩৫ ঘন্টা থেকে ৩৯ ঘন্টায় ফিরিয়ে আনা।
৩) অবসরের বয়স সীমা ৬২ থেকে ৬৫ করা।
৪) সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ফ্রান্সের কৃষিখাতকে আগের মত ইউরোপের মধ্যে প্রথম স্থানে ফিরিয়ে আনা।
৫) নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা ও বিচার ব্যবস্থায় ১২ বিলিয়ন ইউরো অধিক বরাদ্দ করা।
৬) যে সকল ফরাসি নাগরিক বিদেশী কোন রাষ্ট্রের সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে যোগ দিতে সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রিত কোন এলাকায় যাবে, তাদের ফ্রান্সের ভৌগলিক সীমা রেখার ভেতর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা।
৭) অভিবাসীর সংখ্যা কমাতে কোটা পদ্ধতি চালু করা এবং বৈধ অভিবাসীদের প্রথম দু বছর কোন ধরণের রাষ্ট্রীয় অর্থ প্রদান না করা।
৮) প্রাথমিক শিক্ষার বাধ্যতামূলক বয়স ৬বছর থেকে নামিয়ে ৫ বছরে নিয়ে আসা।
ফ্রঁসোয়া ফিলোর অভিবাসন সংক্রান্ত নির্বাচনী অঙ্গীকার : তার মতে, ২০১২ সাল থেকে সমাজবাদী সরকার অভিবাসী স্রোত কমিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং ২০১৭ সালে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় বিষয় যে ফ্রান্স এই শিথিলতা থেকে বেরিয়ে আসবে এবং নিম্নোক্ত ৫টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ফ্রান্স একটি যুগোপযোগী অভিবাসন আইন প্রণয়ন করবে।
১)বৈধ অভিবাসীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ: ২০০৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশ গুলো থেকে আসা প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার বিদেশীকে ফ্রান্সে বসবাসের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।২০১৩ সালে এই সংখ্যা ২ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। এবং এটি ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।
২) অভিবাসন যাতে বোঝা না হতে পারে সেটা নিশ্চিত করা: আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইউরোপের মধ্যে অন্যতম। এই কারণে ফ্রান্সের সাথে ভৌগলিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক নেই এমন দেশ গুলো থেকে অভিবাসী আসার প্রবণতা প্রভাবিত হচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ, ৩ লক্ষ বিদেশীর স্বাস্থ্য সেবা মেটাতে ফ্রান্সকে প্রতি বছর এইড মেডিকেল বাবত ১ বিলিয়ন ইউরো ব্যয় করতে হচ্ছে।
৩) রাজনৈতিক আশ্রয় প্রক্রিয়ার সংস্কার: ২০০৭ সালে ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন প্রায় ৩০ হাজার এবং ২০১৪ সালে প্রায় ৭০ হাজার। যাই হোক, এর মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ৮০ শতাংশ আবেদন নাকোচ হলেও, শুধু মাত্র তাদের ৫ শতাংশই সত্যিকার অর্থে ফ্রান্স ত্যাগ করেছেন।বাকিরা বৈধ হওয়ার আশায় কোন না কোন ভাবে ফ্রান্সে থেকে যায়। এই সমস্যা আমাদের সামাজিক সুযোগ সুবিধা গুলোকে পঙ্গু করে দিচ্ছে এবং বিশেষ করে আমাদের আবাসন সুবিধা আজ হুমকির মুখে।
৪) একটি নতুন সেনজেন নীতি প্রণয়ন: ইউরোপের অন্যান্য দেশ গুলোর মত ফরাসিরাও গোটা ইউরোপে অবাধে চলাফেরায় অভ্যস্ত।কিন্তু তাই বলে অবাধ যাতায়াত সুবিধার কারণে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে হুমকির মুখে তা ভুললে চলবে না।
৫) ফরাসি নাগরিকত্ব অর্জন প্রক্রিয়া হতে হবে বিদেশীদের জন্য একটি আত্মীকরণ প্রক্রিয়া: আত্মীকরণ ছাড়া শুধু মাত্র বিদেশীদের সুবিধা ভোগের জন্য ফরাসি নাগরিকত্ব অর্জনের কোন ধরণের প্রক্রিয়া থাকতে পারে না।
– সুতরাং আমি প্রস্তাব করছি,কোন ফরাসির স্বামী /স্ত্রী এর নাগরিকত্ব অর্জন প্রক্রিয়া সাধারণ নিয়মে নাগরিকত্ব অর্জনের মতই হতে হবে।
– আমি প্রস্তাব করছি যে, ফ্রান্সে জন্ম নেয়া কোন বিদেশী বাবা-মার সন্তান কেবল তার বয়স ১৮ হলেই ফরাসি নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারবে।
ফ্রান্স একটি মহান জাতি। অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা এবং অভিবাসী গ্রহণের ক্ষমতা বিবেচনা করে কানাডার মমত সসময়োপযোগী একটি অভিবাসন আইন প্রণয়ন করতে হবে। প্রত্যেক বছর সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান গুলো যাচাই বাছাই করে অভিবাসন কোটা নির্ধারণ করতে হবে এবং সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রিফেক্সারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই সাথে বিদেশীদের সামাজিক সুবিধা, এমনকি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের সুযোগ সুবিধা এবং সেনজেন কর্তৃক নির্ধারিত নিয়ম গুলোর ব্যাপক সংস্কার করা হবে।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, ইউরো সংবাদ, ইউরো সংবাদ, ইউরো-সংবাদ - France, ব্রেকিং নিউজ, শীর্ষ সংবাদ