• ৭ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,21 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

যুবশক্তির সৃজনশীলতা বিকাশে বাংলাদেশ বৈশ্বিক জ্ঞানকে স্বাগত জানাবে : প্রধানমন্ত্রী

| জানুয়ারী 19, 2017 | 0 Comments

01192017_07_SHEIKH_HASINA_AT_WEF-800x521 আন্তর্জাতিক:

 ডাভোস (সুইজারল্যান্ড) :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের লাখ লাখ যুবশক্তির সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশে বাংলাদেশ বৈশ্বিক জ্ঞান এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগকে স্বাগত জানাবে।শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নিজেকে উদীয়মান বৈশ্বিক জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনীতির এমন অবস্থানে তুলে এনেছে যেখান থেকে উন্নয়নের পথে নানামুখী প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমাদের সরকার দেশকে ডিজিটালাইজেশনের পথে চালিত করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের লাখ লাখ যুবকের সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশে আমরা যেকোন প্রকার বৈশ্বিক জ্ঞান এবং ব্যবসা-বাণিজ্যকে স্বাগত জানাব। নিশ্চিতভাবেই এতে করে উভয় পক্ষই লাভবান হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সন্ধ্যায় সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’র (ডব্লিউইএফ) ‘ডিজিটাল লিডারস’ পলিসি মিটিং অন জব’ শীর্ষক সেশনে বিশেষ অতিথির ভাষণে একথা বলেন। স্থানীয় শেরাটন হোটেলে এই সেশনটি অনুষ্ঠিত হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের সাফল্যগাঁথা সকলের সামনে উপস্থাপনের জন্য এবছর ডব্লিউইএফ তাদের বিশেষ অতিথি এবং প্যানেল আলোচক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মনোনীত করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের কারণে বাংলাদেশ তাঁর যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটাতে চায়।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সমাজ এবং বহি:বিশ্বের সঙ্গে জ্ঞান ও প্রযুক্তির সেতুবন্ধন করাই আমাদের লক্ষ্য।তিনি বলেন, বর্তমান সময় থেকে অন্তত আগামী ৩ দশক পর্যন্ত আমরা জনসংখ্যার একটি বড়ো অংশ হিসেবে পাবো যুব সমাজ, দেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বয়স ১০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে।শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জনগণ যেকোন প্রযুক্তি বিশেষ করে বর্তমানকালের তথ্য প্রযুক্তি যেন দ্রুত গ্রহণ করতে পারে তেমনি এর সঙ্গে খাপ খাওয়াতেও পারে।তিনি বলেন, বিশ্বে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম স্থানে। ৬ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। যার অধিকাংশই স্মার্টফোনের সাহায্যে।

শেখ হাসিনা বলেন, এই সপ্তাহজুড়ে ডাভোসের আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে আগামীর উৎপাদন, কর্মকান্ড, প্রযুক্তি এবং এ সম্পর্কিত নানা বিষয়। ডব্লিউইএফ নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়াব ব্যাখ্যা করেছেন পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে এখন বিশ্বের কর্মপন্থা এবং উৎপাদন ব্যবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে।তিনি বলেন, হ্যাঁ, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তি আমাদের জীবন এবং জীবনমানকে উন্নত করেছে। সকলে যেন এই পরিবর্তনের ছোঁয়া পায় তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যে প্রযুক্তি আমাদের উন্নয়নের জন্য তা যেন কোনভাবেইবিঘœ সৃষ্টির কারণ না হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ তার রাজনৈতিক লক্ষ্য স্থির করে- ‘রূপকল্প ২০২১’ (এই সময়ের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা) এবং ‘রূপকল্প ২০৪১’ (উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ)।তিনি বলেন, এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তিকে শিক্ষা খাতে সম্পৃক্ত করে রোডম্যাপ প্রণয়ন করে। আইসিটিকে কেন্দ্র করে শুধু শিক্ষা খাতেই নয়, আমরা আমাদের শিশুদের ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার মানে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করি।

উদাহরণ স্বরূপ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোতে ২৩ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম রয়েছে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে আরো ১৪ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম তৈরীর কাজ চলছে।তিনি বলেন, প্রায় দেড় লাখ মাধ্যমিক ও হাইস্কুলের শিক্ষকদের সমন্বয়ে ‘টিচার্স পোর্টাল’ নামের একটি ওয়েব পোর্টাল গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষা উপকরণ সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পোর্টালে ২০২১ সাল নাগাদ দেশের প্রায় ৯ লাখ শিক্ষককে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি বৃহৎ ই লার্নিং প্লাটফর্ম ডেভেলপ করছে যার নাম মুক্তপথ। এ প্লাটফর্মটির মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকে বাংলাদেশিরা তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে কর্মসংস্থান তৈরি করে নিতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা হলো আমাদের তারুণ্যকে এ কর্মমুখী বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা।অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নয়নের সর্বক্ষেত্রেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে।দেশে সার্বিক জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে কারিগরি শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার টেকনিক্যাল এন্ড ভকেশনাল এডুকেশন ট্রেনিং (টিভিইটি) কে শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ‘থ্রি সিক্সটি ডিগ্রী হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া প্লাটফর্ম’ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বিশ্বজুড়ে কাজ করা আইটি ফ্রিল্যান্সারদের অন্যতম বড় ক্ষেত্র বাংলাদেশ। আমরা এখন নারী ফ্রিল্যান্সার গড়ে তোলার ওপর জোর দিচ্ছি। জোর দিচ্ছি দুর্গম ও সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় ফ্রিল্যান্সার তৈরিতেও। সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ আইট ফ্রিল্যান্সার রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

দেশব্যাপী সাড়ে ৪ হাজার ডিজিটাল সেন্টার থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে বাংলাদেশের প্রতিটি অলি-গলি এখন একটি অপরটির সঙ্গে সংযুক্ত। সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। মানুষের অর্থ-শ্রম দু’টোই বাঁচছে, কাজের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।তৃণমূলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্বনির্ভর ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস’কে উৎসাহিত করছি। এতে দেশব্যাপী ১০ হাজারেরও বেশি উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে, যাদের মধ্যে অর্ধেকই নারী।এভাবেই বাংলাদেশ এখন উদীয়মান বৈশ্বিক জ্ঞানের অর্থনীতিতে নিজের জায়গা করে নিচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, আন্তর্জাতিক, দেশের খবর, শীর্ষ সংবাদ

About the Author ()

Leave a Reply