নারী কেলেংকারী ও অপ্রীতিকর ঘটনায় অভিযুক্ত ৬ ক্রিকেটার
আজাদ হোসেন সুমন: গত বছরে নানা কেলেংকারী ও অপ্রীতিকর ঘটনায় ৬ ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এর মধ্যে ৩ জনকে গ্রেফতার ১ জনকে ৫ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা অপর ২ জনকে ২৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযুক্তরা সবাই জাতীয় দলের ক্রিকেটার। ক্রিকেট বিশ্বের তারাকা হিসেবেও এদের আলাদা খ্যাতি রয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন রুবেল হোসেন, শাহাদাত হোসেন, আরাফাত সানি। নিষিদ্ধ ক্রিকেটার একমাত্র আশরাফুল ও অর্থদন্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন সাব্বির ও আল আমিন হোসেন। জানা গেছে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি বাংলাদেশ জাতীয় দলের উদীয়মান তারকা ক্রিকেটার রুবেল হোসেন নারী কেলেংকারীতে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ২ মাস আগে ধর্ষণ মামলায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নাজনীন আক্তার হ্যাপী একজন উঠতি মডেল। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। সে সময় হ্যাপী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, রুবেল বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কিন্তু বিশ্বকাপ সফরের জন্য জামিন পেয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গে বিশ্বকাপ খেলতে যান রুবেল। বিশ্বকাপে তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ভর করেই সেবার বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে। মডেল হ্যাপীও শেষ পর্যন্ত মামলা প্রত্যাহার করে নেন।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে আরেক ক্রিকেটারের বাসা থেকে তাদের শিশু গৃহকর্মীকে মারাত্মক জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। অভিযোগে জানা যায়, ক্রিকেটার শাহাদাত এবং তার স্ত্রী জেসমিন জাহান শিশুটিকে প্রতিদিন নির্যাতন করত। ক্রিকেটার শাহাদাত তাকে রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে পেটাতেন। পল্লবী থানা পুলিশ শাহাদত হোসেন ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে শিশুটির পক্ষ থেকে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। যার ফলে এই দম্পতি মুক্তি পান।
সবশেষ বোলিং অ্যাকশনের জন্য নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফেরার অপেক্ষায় থাকা স্পিনার আরাফাত সানিকে গ্রেফতারের পর একদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সাবেক বান্ধবীর করা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় এই তারকা ক্রিকেটারকে গ্রেফতার করা হয়। থানায় দায়েরকৃত মামলায় ওই তরুণী দাবি করেন, সাত বছর আগে পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরে ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর উভয়ের পরিবারকে অবহিত না করেই সানির সঙ্গে তিনি গোপনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু বিয়ের পরে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ বাড়িতে তুলে না নিয়ে আরাফাত সানি সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।
এরপর গত ১২ জুন রাত ১টা ৩৫ মিনিটে সানি তার নাম ব্যবহার করে নিজের মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে একটি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলেন এবং ওই আইডি দিয়ে তরুণীর নিজস্ব অ্যাকাউন্টে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি ও একক ছবি ফেসবুক মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে তাকে নানারকম হুমকি দিতে থাকেন। এরপর তার ফেসবুক আইডিতে নগ্ন ছবি পাঠিয়ে তাকে আরও উত্যক্ত করতে থাকেন সানি এবং তাকে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলে হুমকি দিতে থাকেন।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় আসরে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের দায়ে ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন ‘বিস্ময় বালক’ মোহাম্মদ আশরাফুল। ২০১৪ সালের ১৮ জুন থেকে তাঁর উপর আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে এর আগের বছর, ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট থেকে ক্রিকেটে সাময়িক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন আশরাফুল। এরপর গত বছর ট্রাইব্যুনাল তাকে ৮ বছরের জন্য ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা দেন। পরে উচ্চ আদালত আশরাফুলের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩ বছরের নিষধাজ্ঞা মওকুফ করে। চলতি বছরের মাঝামাঝি তার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এবারের বিপিএল এ হোটেলে নারী নিয়ে অবস্থান করার দায়ে জাতীয় দলের মারকুটে ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান রুম্মন ও আলআমিন হোসেনকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। যদিও বিসিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মাঠের বাইরে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২ জনকে শাস্তি দেয়ার কথা বলা হয়। এ ব্যাপারে ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন সুজন বলেন, ক্রিকেটের বাইরে ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত জীবন আছে। সেই জীবন নিয়ে সাধারণত ক্রিকেটবোর্ড মাথা ঘামায় না। কারণ ব্যক্তির অপরাধের দায় দল বা বোর্ড বহন করবে না। তিনি বলেন, সানির বিষয়টি আমরা জেনেছি। ঘটনাটি সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত। এটা তাকে ব্যক্তিগতভাবেই মোকাবেলা করতে হবে। ঘটনাটি ক্রিকেটবোর্ড থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। সানি কতটা দোষি-সেটা দেখে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে ক্রিকেটবোর্ড।//আমাদের সময়
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর, স্পোর্টস