ফ্রান্সে বাংলাদেশী পরিচালনাধীন কোন কোন এ্যাসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ
কমিউনিটি সংবাদ: ফ্রান্সে বাংলাদেশী পরিচালনাধীন কোন কোন এ্যাসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রথমে ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশীদের ফরাসী ভাষা শেখানোর কথা বলে শুরু হলেও পরে অনুবাদ, আইনি সহায়তা ও খাবারের দোকানের মত বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করে বাংলাদেশী পরিচালনাধীন কোন কোন এ্যাসোসিয়েশন এবং সম্প্রতি ড্রাইভিং শেখানোর ব্যবসাও শুরু করেছে কোন কোন প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিষ্ঠান গুলোর বিরুদ্ধে আইনি সহায়তার নামে মধ্য স্বত্ব ভোগের অভিযোগ রয়েছে ফ্রান্সের সাধারণ প্রবাসীদের মাঝে। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে এ্যাসোসিয়েশন গুলোর এ সব বিতর্কিত কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ প্রবাসীরা। বিষয়টি এখন অনেকটাই ওপেন সিক্রেট।
সম্প্রতি কোন কোন এ্যাসোসিয়েশন ফ্রান্সে ড্রাইভিং শেখানোর thewritingessay.com নামে নতুন ব্যবসা শুরু করেছে। ওখানেও মোটা অংকের অর্থ লেনদেন ও অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রথমত তারা ড্রইভিং এর প্রথম ধাপ “কোদ দো লা রুত” কোর্সটির অনুবাদ ফি নিচ্ছে প্রায় ৫০০ ইউরো। যেখানে ফ্রান্সের ড্রাইভিং স্কুল ( Auto ecole) গুলো ২০ ঘন্টার ড্রাইভিং প্যাকেজ ৯০০ ইউরোতে কিনলে ঐ “কোদ দো লদ রুত” এর কোর্সটি ১ বছরের জন্য বিনা পয়সায় অফার করে থাকে। তাও আবার ঐ ৯০০ ইউরো শিক্ষার্থীদের একবারে দিতে হয়না। তিনটি সহজ ও দীর্ঘ মেয়াদী কিস্তিতে এই কোর্স ফি পরিশোধ করা যায়। প্রথম কিস্তি(৩০০ ইউরো) ভর্তির সময়, ২য় কিস্তি (৩০০ইউরো) কোদ দো লা রুত পাস করার পর( ১ বছরের মধ্যে যে কোন সময়) এবং ৩য় কিস্তি(৩০০ইউরো) ১০ ঘন্টা ড্রাইভিং করার পর।
অথচ তারা ভুল তথ্য দিয়ে কোদ দো লা রুত ও ড্রাইভিং একসাথে করানোর কথা বলে তাদের কোড অনুবাদের প্রায় ৫০০ ইউরো এবং Auto ecole এর ৯০০ ইউরো অনেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একসাথে নিয়ে নিচ্ছে। নির্দিষ্ট Auto ecole এর সাথে তাদের চুক্তি আছে অর্থাৎ তারা একসাথে কাজ করছে মর্মে আশ্বস্ত করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই অর্থ নিচ্ছে বলে একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছে।
কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও শিক্ষার্থীরা ড্রাইভিং না পেয়ে হতাশ হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেয়ে ঐ নির্দিষ্ট Auto ecole এ খোজ নিয়ে জানা যায়, কোন এ্যাসোসিয়েশনের সাথে তাদের লিখিত কিংবা মৌখিক কোন ধরণের কোন চুক্তি নেই। তারা Auto ecole কর্তৃপক্ষকে বলে, ওদেরকে প্রচুর বাংলাদেশী স্টুডেন্টস দেবে যারা ভাষা সমস্যায় ভুগছে ; বিনিময়ে তাদের কোডের ভিডিও এবং শিক্ষার্থী প্রতি তাকে কিছু কমিশন দিতে হবে। অতিরিক্ত শিক্ষার্থী লাভের আশায় Auto ecole কোদ দো লা রুতের ভিডিও দিলেও কমিশন দিতে রাজি হয়নি। আর সেই ফাও পাওয়া কোডের সিডির অনুবাদ দেখিয়েই তারা ফরাসী ভাষায় কিছুটা দুর্বল প্রবাসী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে জনপ্রতি প্রায় ৫০০ ইউরো।
কোর্স ফির বিষয়ে অটো ইকোল বলেন, যেখানে একজন শিক্ষার্থী চাইলে দীর্ঘ মেয়াদী তিনটি সহজ কিস্তিতে কোর্স ফি পরিশোধ করতে পারে, সেখানে কেন তারা ভুল তথ্য দিয়ে সব অর্থ একবারে নিয়ে নিচ্ছে তাও আমাদের বোধগম্য নয়। আর আমরা কোড এবং ড্রাইভিং একসাথে করাকে উৎসাহিত করিনা। একজন শিক্ষার্থী কোড পাশ করবে তারপর ড্রাইভিং করবে এটাই সঠিক নিয়ম।
তারা বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থী আমাদের নিকট সমান, সে কোন এ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে আসুক বা একা আসুক।
কোড অনুবাদের জন্য প্রায় ৫০০ ইউরো নিচ্ছে শুনে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেন, এটি কোন অবস্থাতেই স্বাভাবিক নয়, এই অর্থের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই; সেটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যাপার। আমরা শুধু আমাদের নির্দিষ্ট কোর্স ফি টি নিয়ে থাকি যা সকলের জন্য সমান।
যদিও এ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনুবাদের ৫০০ ইউরো থেকে তারা ২০০ ইউরো Auto ecole কে দিয়ে থাকে; কিন্তু অটো স্কুল বলল, এ্যাসোসিয়েশন থেকে অর্থ নেয়ার প্রশ্নই আসেনা বরং উল্টো এ্যাসোসিয়েশন তাদের নিকট শিক্ষার্থী প্রতি কমিশন দাবী করেছে, যাতে তারা রাজি হয়নি।
Auto ecole কর্তৃপক্ষ বলেছে,যে সকল শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে বিভিন্ন এ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে তাদের স্কুলে ভর্তি হয়েছে, তারা যেন সবাই ঐ স্কুলের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে তাদের ফাইলের অবস্থা সম্পর্কে অবগত হয় এবং নিয়মিত ওখানে গিয়ে ক্লাস করে। তারা আরও বলেন, ফ্রান্স একটি অবাদ তথ্য প্রবাহের দেশ, কোন ধরণের ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত না হয়ে সরাসরি স্কুলে তাদের (নিউমেরো দো প্রিফেক্টোরাল) প্রিফেক্সার নাম্বার এসেছে কিনা তা যেন শিক্ষার্থীরা যাচাই করেন।
এদিকে ড্রাইভিং এর কোড অনুবাদের জন্য শিক্ষার্থী প্রতি প্রায় ৫০০ ইউরো নেয়ায় এ্যাসোসিয়েশনের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, যেখানে একটি এ্যাসোসিয়েশন ফ্রি অথবা নাম মাত্র মূল্যে সেবা দিয়ে থাকে, সেখানে ড্রাইভিং এর কোড অনুবাদ করে ৫০০ ইউরো নেয়া শুধু ভাষা কম জানা প্রবাসীদের প্রতি জুলুমই নয় বরং রীতিমতো ফ্রান্সের এ্যাসোসিয়েশনের নিয়ম কানুনের সাথে প্রতারণা।
তারা আরও বলেন, প্রবাসে প্রতিটি ইউরো অনেক কষ্ট করে উপার্জন করতে হয়, তাই প্রবাসীদের স্বার্থে সেবার নামে এই জুলুম ও প্রতারণা বন্ধ হওয়া উচিত।
এদিকে বাংলাদেশী পরিচালনাধীন এ্যাসোসিয়েশন গুলো তাদের প্রচার কাজের অংশ হিসেবে প্যারিসে বিভিন্ন ইভেন্টের স্পন্সর হচ্ছেন। জনমনে প্রশ্ন, ভাষা কম জানা এবং কাগজ পত্রের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সেবার নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে সাধারণ প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রক্ত-ঘামের অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন ইভেন্টের স্পন্সর হওয়া কতটা যুক্তি সঙ্গত,নৈতিক?
এছাড়া কিছু কিছু এ্যাসোসিয়েশন চ্যারিটির নামে দেশে অর্থ পাচার করে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ক্রয় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ্যাসোসিয়েশনের অর্থ যাচ্ছে তা ভাবে খরচে বিধি নিষেধ থাকলেও অনেকে বিয়ে, হানিমুন, সুন্নতে খতনা ও জন্মদিনের মত ব্যক্তিগত বিভিন্ন ইভেন্টে এই অর্থ খরচ সহ দেশ ভ্রমনের টিকিট খরচও নাকি চালিয়ে দিচ্ছেন এ্যাসোসিয়েশনের নামে।
অন্যদিকে বাংলায় ফরাসী ভাষা শিক্ষার সাধারণ একটি তিন মাসের কোর্স ফি বাংলাদেশী পরিচালনাধীন কোন কোন এ্যাসোসিয়েশন বর্তমানে প্রায় ১৫০ ইউরো নিচ্ছে। যা একটি এ্যাসোসিয়েশনের জন্য কোন ভাবেই যুক্তি সংঘত নয় বলে মনে করছেন সোসাইটি বিশেষজ্ঞরা। ফ্রান্সে অন্য কমিউনিটির এ্যাসোসিয়েশন গুলোতে( চাইনিজ, ভারতীয়, শ্রীলঙ্কান) খোজ নিয়ে জানা যায়, তারা নাম মাত্র ১৫/২০ ইউরোতে তাদের নিজ নিজ দেশের ভাষায় ফরাসী ভাষা শিক্ষার কোর্সটি করিয়ে থাকেন। আর সেখানে বাংলাদেশী পরিচালনাধীন কোন কোন এ্যাসোসিয়েশন ১৫০ ইউরো নেয়াতে এ্যাসোসিয়েশনের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে কমিউনিটির সাধারণ প্রবাসীদের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এদিকে দেশীয় খাবারের স্বাদ দেয়ার নামে কোন কোন এ্যাসোসিয়েশন খুলে বসেছেন খাবারের দোকান। সেগুলোও চলে সম্পূর্ণ ব্যবসায়ীক কায়দায়। যা এ্যাসোসিয়েশনের মূল স্ট্যাটাসকে মারাত্মক ভাবে লঙ্ঘন করছে।
অন্যদিকে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান দেশীয় ছবির(চলচ্চিত্র) বাণিজ্যিক প্রচার করার সময় বলছে, বিদেশের মাটিতে দেশের সংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে কাজ করছে, কিন্তু তারাই আবার হিন্দি ছবির প্রচারেও জোর প্রচারণা চালাচ্ছে। তাই দেখে সাধারণ প্রবাসীরা বলছে, এটাকি সংস্কৃতি প্রসার নাকি ব্যবসা আভেক দেশী-বিদেশী সংস্কৃতি?
এমন বিভিন্ন ধরণের ব্যবসায়ীক কৌশলের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের চোখে ধূলা দিয়ে ও ফ্রান্সে এ্যাসোসিয়েশন আইন ফাঁকি দিয়ে এরা একদিকে যেমন হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ ইউরো তেমনি বনে যাচ্ছে কমিউনিটি দরদী।
একই ছাদের নিচে হরেক রকম বাহারী ব্যবসার পশরা দেখে ফ্রান্স প্রবাসী সাধারণ বাংলাদেশীদের মনে প্রশ্ন- এগুলো কি শুধুই এ্যাসোসিয়েশন? না কি ব্যবসা আভেক এ্যাসোসিয়েশন?
Category: ইউরোবিডি কমিউনিটি সংবাদ