ফ্রান্স থেকে প্রবাসীদের অপমানের প্রতিবাদ ও দাবী দাওয়া আদায়ে “প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯” এর ডাক
গত ২৭ জানুয়ারি রবিবার ফ্রান্সের একটি হলে, গত ২২ জানুয়ারি তারিখে বাংলাদেশের ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার ওসি এমএম মোর্শেদের প্রবাসীদের নিয়ে চরম অপমান ও হেয় প্রতিপন্ন বক্তব্যের প্রতিবাদে এবং প্রবাসীদের দীর্ঘ দিনের চলমান বিভিন্ন যৌক্তিক দাবী দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে এক প্রতিবাদ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মূলত এই সভা থেকে ওসি মোর্শেদের প্রবাসীদের নিয়ে এই কুরুচিপূর্ণ ও আপত্তিকর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সভায় উপস্থিত প্রবাসীরা ওসি মোর্শেদের উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
ফ্রান্সের প্রবাসী সাংবাদিক, ফ্রান্স বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফারুক নওয়াজ খাঁনের সভাপতিত্বে এবং ফ্রান্সের প্রবাসী সাংবাদিক, ফ্রান্স বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান মাহমুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত তাৎক্ষণিক এই প্রতিবাদ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপিয়ান জুম্মা ইন্ডিজিনাস কাউন্সিলের সভাপতি সুদর্শন চাকমা।
সভাপতি ফারুক নওয়াজ খাঁনের অনুমতিক্রমে প্রতিবাদ সভায় “বাংলাদেশে প্রবাসীদের অবদান” শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক ইমরান মাহমুদ।
প্রবন্ধে বলা হয়, ৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর আইনজীবী নিয়োগ থেকে শুরু করে, ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও আজকের অর্থনৈতিক মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের সক্রিয় অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে প্রবাসীদের সীমাহীন অবদান ও দেশপ্রম।
স্বাধিকার আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কৌশলী নিয়োগে তৎকালীন ১০ হাজার পাউন্ড অর্থ জোগান দেন এই প্রবাসীরাই।
১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার “প্রবাসী মুজিব নগর সরকার”। সে সরকারের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান,উপরাষ্ট্রপতি (পরে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধান মন্ত্রী ছিলেন তাজ উদ্দীন আহমদ।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল প্রায় শূন্য। সেই কঠিন সময়ে প্রথম রিজার্ভ ফান্ড দিয়ে মৃতপ্রায় অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার করেছিল এই হতভাগা প্রবাসীরাই।
আমেরিকার আইন ফাঁকি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় তৎকালীন মূল্যে প্রায় ৮২ হাজার ৯৫০ ডলারের সরঞ্জাম পাঠান প্রবাসীরা।
এছাড়া বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তির জন্য ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই প্রবাসীরাই।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ১ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। আর সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে সৌদি আরব থেকে।
বাংলাদেশ পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম দেশ, যে দেশের এত বিপুলসংখ্যক প্রবাসী রয়েছে।বাংলাদেশের রেমিটেন্স আয়ের প্রধান ভরসা প্রবাসী অদক্ষ ও স্বল্প দক্ষ শ্রমিক।
ফের রেকর্ড ভেঙ্গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এবার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন (৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার) মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ রিজার্ভ। এ রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ৯ মাসের আমাদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর, সভাপতি ফারুক নওয়াজ খাঁন প্রবাসীদের দাবী দাওয়া আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের লক্ষ্যে সারা বিশ্বের বাংলাদেশী প্রবাসীদের নিকট “প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯” নামে একটি প্রতীকী আন্দোলনের ডাক দেন।
তিনি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সকল প্রবাসীদেরকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
এরপর সভায় গৃহীত নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত সমূহ তিনি সারা বিশ্বের প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন:
১. আগামী রবিবার (৩ফেব্রুয়ারি) আরও বৃহত্তর পরিসরে ফ্রান্সের প্যারিসে প্রতিবাদ ও আলোচনা সভার কর্মসূচি গৃহীত।
২. “প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯” নামে একটি ফেইসবুক পেইজ খোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত। যার মাধ্যমে সরা বিশ্বের প্রবাসীদের একত্রিত করা ও কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে।
৩. সারা বিশ্বে “প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯” আন্দোলনের প্রতিনিধি দল নির্বাচন করা।
৪. ইউটিউব, টুইটার ও ফেইসবুক সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রতিবাদ ও দাবী দাওয়া আদায়ের কর্মসূচি সমূহ প্রচার অব্যাহত রাখা।
৫. সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সলক দেশে অবস্থান করা প্রবাসীদের যৌক্তিক দাবি দাওয়া সমূহ চূড়ান্ত করা।
৬. প্রতিটি দেশে “প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯” এর প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে সকলকে সংগঠিত করা।
সর্বশেষে, সারা বিশ্বে প্রবাসীরা যে সকল একক স্লোগান গুলোর মাধ্যমে “প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯” আন্দোলন কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন, তার নমুনা সভাপতি ফারুক নওয়াজ সকলের সামনে তুলে ধরেন।
একক স্লোগান গুলো:
“আগরতলার হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেক বার”
“ঊনসত্তরের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেক বার”
“একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেক বার”
“একবিংশের রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়”
“ওসি মোর্শেদ, তুই রাজাকার তুই রাজাকার”
“রেমিটেন্স যোদ্ধার হাতিয়ার, গর্জে উঠবে এবার”
“দিয়েছিতো রেমিটেন্স, আরো দেবো রেমিটেন্স।
রেমিটেন্সের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়”
“অর্থনৈতিক মুক্তিযোদ্ধার হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেক বার”
সভা থেকে আগামী রবিবার(৩ ফেব্রুয়ারি) ফ্রান্সের প্যারিসে আরও বৃহত্তর পরিসরে “প্রবাসী বিপ্লব-২০১৯” এর পরবর্তী প্রতিবাদ ও আলোচনা সভার কর্মসূচী গৃহীত হয়।
Category: 1stpage, Community Belgium, Community France, Community German, Community Greece, Community Italy, Community news 1st page, Scroll_Head_Line, প্রচ্ছদ, ব্রেকিং নিউজ, শীর্ষ সংবাদ