ইউরো ২০২০: ফ্রান্স জিতল জার্মানির হামেলসের গোলে
নাকি দুর্ভাগা বলবেন ফ্রান্সকে? শেষ পর্যন্ত মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় জার্মানিকে ১-০ গোলে হারিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছেন এমবাপ্পে-বেনজেমা-গ্রিজমানরা। কিন্তু অফসাইডে করিম বেনজেমা ও কিলিয়ান এমবাপ্পের দুটি গোল বাতিল না হলে, একবার পোস্টে লেগে বল না ফিরলে ব্যবধান আরও বড়ই হতে পারত।
তাদের ডিফেন্ডার আত্মঘাতী গোল করেছে, তাতে ইউরোর প্রথম ম্যাচে হেরে টুর্নামেন্টটা শুরু করতে হয়েছে। এ কারণে জার্মানিকে দুর্ভাগা বলবেন?
হয়নি, তবে কাগজে-কলমে টুর্নামেন্টের প্রথম হেভিওয়েট ম্যাচে জয়ের পথে ফ্রান্স বুঝিয়ে দিল, এবারের ইউরো তাদের হতে না দিলে অন্য দলগুলোকে নিজের সেরা দেওয়ার পাশাপাশি ভাগ্যেরও সহায়তা চাইতে হবে!
ঠিক আহামরি খেলেছে ফ্রান্স, এমন নয়। পরিসংখ্যান বরং বলবে, বলের দখলে, গোলে শট নেওয়ায়…সব দিকেই এগিয়ে ছিল জার্মানি। কিন্তু ম্যাচ শেষে পেছনে ফিরে দেখলে চোখে ভাসবে, জার্মানি শেষদিকে দারুণ খেললেও ফ্রান্সের প্রতিভাই তাদের হয়ে কথা বলেছে।
প্রথম ম্যাচকেই বিধিলিপি মানলে, ভাগ্যও কথা বলেছে ফ্রান্সের হয়ে। না হলে এভাবে আত্মঘাতী গোল করেন জার্মানির ডিফেন্ডার ম্যাটস হামেলস! এমনিতেই ম্যাচজুড়ে এমবাপ্পের সঙ্গে তাঁর অসম গতির লড়াই দেখে মনে হচ্ছিল, জার্মানি কোচ ইওয়াখিম ল্যুভের বুঝি হামেলসের প্রতি কোনো ক্ষোভ-টোভ আছে। না হলে এই ৩২ বছর বয়সী হামেলসকে সময়ের ফুটবলে সবচেয়ে গতিশীল ফরোয়ার্ডের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার মানে কী!
হামেলস ম্যাচে একেবারে আলো না ছড়ালেও দু-একটা দারুণ ট্যাকল করেছেন বটে। একবার তো গতিতে তাঁকে ছিটকে বেরিয়ে যেতে থাকা এমবাপ্পেকেই বক্সে দারুণ ট্যাকল করে বল কেড়ে নিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্যও গড়ে দিয়েছে তাঁর এক দুর্ভাগ্যপ্রসূত আত্মঘাতী গোল। এমবাপ্পের পায়ে যাতে বল না যেতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে গিয়েই আত্মঘাতী গোলটা।
ম্যাচজুড়ে এনগোলো কন্তের পাশাপাশি দারুণ খেলা পল পগবা ২০ মিনিটে ডান পায়ের বাইরের দিকের অংশের ব্যবহার দেখানো দারুণ পাস দেন জার্মানি বক্সের বাঁ দিকে। পাসটা খুঁজে নেয় ফরাসি লেফটব্যাক হার্নান্দেজকে। তাঁর গতিময় ক্রসের উদ্দেশ্য ছিল পোস্টের ৪-৫ গজ সামনে ছুটে আসতে থাকা এমবাপ্পের দিকে। কিন্তু হামেলস তা হতে দিতে চাননি। পা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু হলো উল্টো! তাঁর পায়ে লেগে বল ঢুকে যায় জার্মানিরই জালে!
মাঠজুড়ে এত তারকা, এত সৃষ্টিশীল খেলোয়াড়, এত গোল করার মতো নাম…কিন্তু ৯০ মিনিটের দারুণ লড়াই শেষে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে এই গোলটাই!
জার্মানি এই গোলের সুযোগ অনেক পেয়েছে ম্যাচে ফেরার। গোল খাওয়ার পরের মিনিটেই জার্মান প্লেমেকার টমাস মুলারের হেড বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। কিছুক্ষণ পর ইলকায় গুন্দোয়ানকে বক্সের বাইরে ফেলে দেন ফরাসি এক ডিফেন্ডার। এক মিনিট পর লাফাতে থাকা বলে গুন্দোয়ানের শট বাইরে দিয়ে চলে যায়, জার্মানির কাই হাভার্টজের শট আটকে দেন ফ্রান্সের রাফায়েল ভারান। গোল পাচ্ছিল না, কিন্তু জার্মানি সুযোগও কম পায়নি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ফ্রান্সের এমবাপ্পের চোখধাঁধানো পাস ধরে মিডফিল্ডার রাবিওর শট লাগে পোস্টে। কিন্তু এরপর আবার মিনিট বিশেক জার্মানির দাপট। আগ্রাসী, আরও গতিময় জার্মানির দেখা মিলেছে তখন। সার্জ নাব্রি একটা ভলি পোস্টে রাখতে পারেননি। ইয়োশুয়া কিমিখের একটা ক্রসে পা ছোঁয়াতে গিয়ে জার্মান লেফটব্যাক রবিন গোসেনস প্রথমে আহত করেছেন ফ্রান্সের রাইটব্যাক বেঞ্জামিন পাভারকে, কিন্তু নিজেও পড়ে যান তখন। পরে বক্সের মধ্যে বল পেয়ে জার্মান মিডফিল্ডার টস ক্রুস যখন শট নেন, সেটি আবার গোসেনসেরই গায়ে লেগে পোস্টে যায়নি!
এতকিছুর মধ্যে ফ্রান্স পথ হারায়নি। দুবার দুর্ভাগ্য তাদের হতাশ করল। প্রথমে ৬৭ মিনিটে এমবাপ্পের গোল বাতিল। পগবার দারুণ পাস ধরে বক্সে ঢুকে বলের ওপর পায়ের দারুণ নাচনে দুই ডিফেন্ডারকে ঘোল খাইয়ে শট নেন এমবাপ্পে। কিন্তু তাঁর দারুণ বাঁকানো শটটা জার্মান গোলকিপার মানুয়েল নয়্যারকে ফাঁকি দিয়ে পোস্টে ঢুকতেই রেফারির বাঁশি জানিয়ে দেয়, পগবার পাসের সময়ই এমবাপ্পে অফসাইডে ছিলেন।
ম্যাচজুড়ে গতির ঝড় তোলা বেশ কয়েকটি দৌড়ে মুগ্ধতা ছড়ানো এমবাপ্পের এমনই এক দৌড় থেকে ফ্রান্স দ্বিতীয় গোলটি পেয়েই গিয়েছিল। কিন্তু ৮৫ মিনিটে করিম বেনজেমার সে গোলও বাতিল হলো অফসাইডে। পাল্টা আক্রমণে ওঠা ফ্রান্সের মাঝমাঠ থেকে পগবার পাস খুঁজে নিয়েছিল ডানদিকে দৌড়াতে থাকা এমবাপ্পেকে। তাঁর থ্রু ধরে বেনজেমা ফাঁকা পোস্টে বল জালে জড়ান। কিন্তু যখনই মনে হচ্ছিল, সাত বছর পর ফ্রান্সের জার্সিতে কোনো বড় টুর্নামেন্টে ফিরেই প্রথম ম্যাচে গোল করে ফেলেছেন বেনজেমা, আবার অফসাইডের বাঁশি। বেনজেমা নন, এবারও অফসাইড ছিলেন এমবাপ্পে!
শেষ পর্যন্ত এমবাপ্পে-বেনজেমাদের গোল ছাড়াই তো জিতে গেল ফ্রান্স!
Category: 1stpage, ইউরো সংবাদ, ইউরো সংবাদ, ইউরো-সংবাদ - France, প্রচ্ছদ, ব্রেকিং নিউজ, শীর্ষ সংবাদ, স্পোর্টস