• ৮ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,22 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

আজ ভয়াল ১৯ ডিসেম্বর, কোম্পানীগঞ্জের ছাত্রনেতা বিপ্লবের মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ানোর দিন।

| ডিসেম্বর 19, 2022 | 0 Comments

ইউরোবিডি24নিউজ ডেস্কঃ যুগে যুগে মানব রাজনীতির ইতিহাসে কিছু কিছু ত্যাগী মানুষ থাকে, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে সমাজে-রাষ্ট্রে মানবিকতা ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ধরনের মানুষ কোন স্বার্থ নিয়ে রাজনীতিতে আসে না, মানবতার মুক্তিই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ নিয়েই নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক ত্যাগী ও সফল সভাপতি শওকত হায়াত খাঁন বিপ্লব। যিনি বর্তমানে ফ্রান্স আওয়ামিলীগের একজন বর্ষীয়ান নেতা ও সাংগঠনিক সম্পাদক।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তিনি শত আঘাত বঞ্চনা সহ্য করে মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়েও আদর্শ থেকে এতটুকু বিচ্যুত হননি। এখনও মুজিব আদর্শের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন প্রাবাসেও। ফ্রান্স আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়ে যেমন প্রবাসে মুজিব আদর্শের একজন বলিষ্ঠ কন্ঠ তেমনি তার রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য মানবতার সেবা অব্যাহত রেখেছেন জন্মস্থান কোম্পানীগঞ্জেও। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে এলাকার অসহায় ও দুঃস্থ মানুষদের প্রতি মানবিক সেবার হাত সর্বদা অব্যাহত রেখেছেন এ ত্যাগী ও মানবিক রাজনীতিবিদ।

শওকত হায়াত খান বিপ্লবের পিতা মরহুম এমদাদুল হক। মাতা নুরজাহান বেগম। বসুরহাটের খান সাহেব মৌলভী আমিন উল্লাহ এম এল এ ছিলেন তার দাদা। নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানার বসুরহাট পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের মৌলভী আমিন উল্লাহ এম এল এ এর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন শওকত হায়াত খান বিপ্লব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমদাদুল হককে খুবই স্নেহ করতেন। তিনি নোয়াখালী জেলা বাকশালের সেক্রেটারি ছিলেন।১৯৭৪ সালে গণবাহিনী ইমদাদুল হককে ৩২ রাউন্ড গুলিবিদ্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে নোয়াখালী জেলা থেকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় সংসদের একটি কক্ষে মরহুম এমদাদুল হকের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। মহরুম এমদাদুল হক দীর্ঘদিন কোম্পানিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

নোয়াখালীর অহংকার বাংলাদেশ আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক সেতু মন্ত্রীর আপন কাজিন ব্রাদার হয়েও কোন ধরনের রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণ না করে আওয়ামিলীগের একজন একনিষ্ঠ ত্যাগী কর্মী হিসেবে প্রবাসে থেকেও মুজিব আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন শওকত হায়াত খাঁন বিপ্লব।

আজকে তার কাছে শুনবো মুজিব আদর্শ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ২০০৪ সালে সেই ভয়াল ১৯ ডিসেম্বরে কি ঘটেছিলো নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক এই ত্যাগী সভাপতি শওকত হায়াত খাঁন বিপ্লবের জীবনে।

শওকত হায়াত খাঁন বিপ্লব, সাংগঠনিক সম্পাদক -ফ্রান্স আওয়ামী। সাবেক সভাপতি, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগঃ ——————প্যারিসে আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ও সেই ভয়াল বিভীষিকাময় স্মৃতি নিয়ে লিখাটা লিখতে বসেছি । কারণ আজ থেকে ১৭ বছর আগে বিভীষিকাময় ২০০৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর আমি নির্মম আঘাতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়েছি। আমার বাড়ির পাশেই এই সভ্য জগতে, আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অকল্পনীয় এক নারকীয় হামলা চালানো হয়। ১৯ ডিম্বের ২০০৪, দিনটি ছিল শনিবার। তখন বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায়। ২০০৪ সালে আমি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। বিকেলে কে.জি স্কুল রোডের খান মার্কেটে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা কর্মীর সাথে দেখা করতে যাই। সময় তখন আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিট। আমি বুঝতে পারলাম কিছু ছেলে আমাকে টার্গেট করে এদিক সেদিক পায়চারি করছে । এরপর আমি সাধারণ কর্মী সমর্থকদের বিপদ চিন্তা করে তাদের কে বিদায় করে দিয়ে আমিও চলে যাওয়ার চিন্তা করলাম।

এশারের নামাজের একটু পরেই শুরু হলো আমার উপর নারকীয় হামলা। ধারালো কিরিচের ২৮ টি এলোপাতাড়ি কোপ দিয়ে এবং একটি পায়ের রগ কেটে আমার মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত করে জামাত-শিবিরের দলীয় কর্মীরা পালিয়ে গেল। আমার অপরাধ ছিল শুধু একটাই, আমি ছাত্রলীগ করি। মুহূর্তেই রক্ত-মাংসের স্তুপে পরিণত হই আমি । রক্তে ভিজে লাল হয়ে যায় বসুরহাটের কেজি স্কুল রোডের পিচঢালা কালো পথ। যখন আমাকে ড্রেনে ফেলে দেয় তখন চারপাশে রক্তের আল্পনা, বেঁচে থাকার জন্য, প্রাণ বাঁচানোর জন্য সে কি আকুতি, কাতর আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য।

এশার আজানের একটু পরে আমাকে ওরা আঘাতের পর আঘাত করছিল। আমি তখন নিশ্চিত মৃত্যু জেনে কালেমা পড়ছিলাম। আমার কালেমা পড়ার আওয়াজ শুনে ওরা আমার মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে চলে যায়। আমি যখন কালেমা পড়ছিলাম, তখন কালেমা পড়ার শব্দ আমার মাথার ভিতরে যেন ধ্বনি প্রতিধ্বনি হচ্ছিলো। হঠাৎ আমি এত ব্যাথা আর কষ্টের মাঝেও হাঁসতে শুরু করলাম। আমার কাছে মনে হচ্ছিল আমি চলে যাচ্ছি মহান আল্লার কাছে।

প্রায় ১৫/২০ মিনিট আমি ড্রেনের ময়লা পানির নীচে ডুবে ছিলাম। পথচারি রাজিব ,নরেশ বাবুর ছেলে আমাকে টেনে ড্রেন থেকে আমার মাথাকে উপরের দিকে উঠায়। তখন আমি নিশ্বাস নিতে শুরু করি। এরপর আমার প্রিয় এলাকার সর্বস্তরের মানুষ ছুটে আসলে আমাকে কোম্পানীগঞ্জ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সদর নোয়াখালী হাসপাতালে নিয়ে যায়। যাওয়ার পথে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হয়,তাই রক্তের প্রয়োজন হয়। এ সময় আমার সহপাঠী জাহিদুল হক কচি ভাই ও নোয়াখালী আওয়ামীলীগের নেতা পিন্টু ভাই, আমাকে রক্তদান করে।

বর্তমান সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে একরামুল করিম ভাই অপারেশান রুমে উপস্থিত ছিলেন। তারপর আমাকে নিয়ে ঢাকার পথে রওয়না হয়। কিছুক্ষন পরে আমার জ্ঞান ফিরে আসে। যাত্রাবাড়ীতে শুরু হয় রক্ত বুমি, গাড়ীতে সবাই তখন কাঁদতে শুরু করে। সেদিন ভোর ৫ টায় বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে আমার প্রিয় ওবায়দুল কাদের ভাই সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। তখন আমার এক মাত্র বোন কান্না করছিল।কাদের ভাই বলেছিল কান্না করনা আমি আমার ভাই বিপ্লবকে ভিক্ষা করে হলেও চিকিৎসা করাবো। আমদের পারিবারিক ও রাজনৈতিক অভিভাবক আমার পরম শ্রদ্ধেয় বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরের এমন ভরসার কথা আজও প্রতি ১৯ ডিসেম্বর আসলে আমার কানে বাজে আর চোখ ভিজে যায় ভরসার অশ্রুতে। প্রার্থনা করি মহান আল্লাহ ভাইকে নেক হায়াত দান করুন, যেনো তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে দেশের মানুষের সেবা করে যেতে পারেন।

আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি নতুন জীবন ফিরে ফেলাম। আমার অনেক আশা স্বপ্ন জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ঠিকই, কিন্ত আজও ছাত্রলীগের প্রতি ভালোবাসা একটুও হারায়নি। মুজিব আদর্শ ধারণ করে এখনও বেঁচে আছি, আজীবন দুঃখী ও মেহনতি মানুষের পাশে থাকতে চাই।

Category: 1stpage, Community France, Community news 1st page, Scroll_Head_Line, ইউরোবিডি কমিউনিটি সংবাদ

About the Author ()

Leave a Reply