বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি
০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ক্যাম্প বতসোয়ানা।
প্যারিস: বাংলাদেশের রিক্সাচিত্র ইউনেস্কো অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করল। আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানার কাসানে শহরে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ বিষয়ক ২০০৩ কনভেনশনের চলমান ১৮তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পরিষদের সভায় আজ এই বৈশ্বিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। জামদানি বুনন, শীতল পাটি, বাউল গান ও মঙ্গল শোভাযাত্রার পর প্রায় ৬ বছরের বিরতিতে বাংলাদেশের পঞ্চম অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ‘ঢাকার রিক্সা ও রিক্সাচিত্র’ শিরোনামে এই নিবন্ধন প্রদান করা হয়।
আন্তঃরাষ্ট্রীয় পরিষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্তটি গৃহীত হওয়ার পর তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় ইউনেস্কোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি খন্দকার এম তালহা এই স্বীকৃতিকে বাংলাদেশের সকল রিস্কাচিত্র শিল্পীদের স্বীকৃতি হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি আরও বলেন, ‘আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা বিনির্মাণ ও যানবাহনের যান্ত্রিকীকরণের ফলে বড় শহরগুলোতে রিক্সা চলাচলে সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়। এতে ধীরে ধীরে রিক্সা ও এর নান্দনিক চিত্রকর্ম হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই চিত্রকর্মটি বাঁচিয়ে রাখার জন্য বাংলাদেশ এই নথিটি প্রস্তুত করে। এই নিবন্ধনের ফলে বিগত আট দশক ধরে চলমান এই চিত্রকর্ম একটি বৈশ্বিক ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভ করল।’ তিনি এই অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উৎসাহ ও সানুগ্রহ দিকনির্দেশনার কথা তুলে ধরেন। এই স্বীকৃতির ফলে রিক্সাচিত্রের সংরক্ষণ ও বিশ্বব্যাপি এই চিত্রকর্মকে তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশের দায়বদ্ধতার কথাও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।
বিগত ছয় বছর যাবত এই চিত্রকর্মটি নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটি চলমান থাকলেও প্রথম চেষ্টায় তা ব্যর্থ হয়। তবে, ২০২২ সালে পুনরায় নথিটি জমাদানের সুযোগ প্রদান করা হলে প্যারিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ নথিটি নতুনভাবে প্রস্তুত করা হয়। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব খলিল আহমেদ এই অর্জনকে বাংলাদেশের জন্য বিরল সম্মান হিসেবে অভিহিত করেন। এছাড়াও নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্যারিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এবং বাংলা একাডেমিকে অভিনন্দন জানান।
বাংলাদেশের রিক্সাচিত্র নিবন্ধিত হওয়ার পর সভায় উপস্থিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় পরিষদের সদস্যবৃন্দ, উপস্থিত মন্ত্রীবর্গ, রাষ্ট্রদূতসহ শতাধিক দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে অভিনন্দন জানান এবং এই চিত্রকর্মের বৈচিত্রপূর্ণ বহিঃপ্রকাশে তাদের সন্তুষ্টি ব্যক্ত করেন। গত ২০২২ সালের জুলাই মাসে ইউনেস্কো সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত তীব্র প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তঃরাষ্ট্রীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়। এ অর্জনের মাধ্যমে ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের ধারাবাহিক সাফল্যের মকুটে আরও একটি পালক যুক্ত হল। গত ১৫ নভেম্বর ৪২তম সাধারণ পরিষদের সময়ে বাংলাদেশ ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়। এছাড়াও রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি নিয়ে এক দশক ধরে চলমান জটিলতার নিরসনে গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ দরকষাকষিতে অংশ নেয় এবং সফলতার সাথে সকল অপপ্রচারকে ভুল প্রমাণিত করে সুন্দরবনের বিশ্বে ঐতিহ্য নিবন্ধনকে সুরক্ষিত রাখে। ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের এই ধারাবাহিক সাফল্যকে সংশ্লিষ্ট মহল বাংলাদেশের কূটনৈতিক অগ্রযাত্রা হিসেবে অভিহিত করেন।
এরআগে জামদানি বয়ন শিল্প, শীতল পাটি বয়ন শিল্প, বাউল গান ও মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল ইউনেস্কো। এবার স্বীকৃতি পেল রিকশা ও রিকশাচিত্র। গত ছয় বছর ধরে এই শিল্পকর্মটির স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা চালছিল।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২২ সালে এই শিল্পকর্মের নথি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ও প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় নতুনভাবে প্রস্তুত করা হয়।
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও সচিব খলিল আহমদ এ অর্জনকে বাংলাদেশের জন্য বিরল সম্মান হিসাবে অভিহিত করেছেন। এছাড়াও নিবন্ধন ও স্বীকৃতি প্রক্রিয়ায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তাঁরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর ও প্যারিসস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসকে অভিনন্দন জানান।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর, বিশ্বজুড়ে বাংলা, ব্রেকিং নিউজ, শীর্ষ সংবাদ