কোরীয় উপদ্বীপে ‘যুদ্ধাবস্থা’ বিরাজ করছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ: দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ‘যুদ্ধাবস্থা’ বিরাজ করছে উল্লেখ করে উত্তর কোরিয়া বলেছে, আন্তঃকোরীয় প্রতিটি বিষয় পর্যায়ক্রমে মোকাবেলা করা হবে।
শনিবার উত্তর কোরিয়ার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এখন দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে এবং দুই কোরিয়ার মধ্যকার সকল বিষয় যুদ্ধকালীন সময় অনুযায়ী মোকাবেলা করা হবে।”
সরকারি সংবাদ সংস্থা কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সিতে (কেসিএনএ) প্রকাশিত বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “কোরীয় উপদ্বীপে দীর্ঘদিন ধরে চলা ‘যুদ্ধও নয়, শান্তিও নয়’ পরিস্থিতি এখন আর নেই। এখন সেখানে ‘যুদ্ধাবস্থা’ বিরাজ করছে।”
বিৃবতিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, “উত্তর-দক্ষিণ সীমান্ত বা সমুদ্র সীমার কাছে যে কোনও সামরিক উস্কানি ‘পুরোপুরি সংঘাত ও পারমাণবিক যুদ্ধ’ ডেকে আনবে। উত্তর কোরিয়া যে কোনও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের দাঁতভাঙা জবাব দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।”
উত্তর কোরিয়া গত ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয় পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই দক্ষিণ কোরিয়ায় হামলার হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। দেশটি যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার বার্ষিক যৌথ সামরিক মহড়ারও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
মার্কিন বাহিনীর অপরিণামদর্শী উস্কানির জবাব দিতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। কোরীয় উপদ্বীপের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে রাতভর মিটিংয়ের পর এ নির্দেশ দেন তিনি। সূত্র জানায়, সামরিক বাহিনীকে যেকোনো মুহূর্তে মার্কিন উস্কানির জবাব দেয়ার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটকে লিখিত নির্দেশে সই করেছেন উন। উত্তর কোরিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা কোরিয়া সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি বা কেসিএনএ এ খবর দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতের বৈঠকে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের সেনা কমান্ডাররা উপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র দু’টি পরমাণু বোমাবাহী স্টিলথ বিমান বি-২ দক্ষিণ কোরিয়ার আকাশে মহড়া দেয়ার পর এ নির্দেশ দিলেন তিনি। কিম জং বৈঠকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে সাফল্যের সঙ্গে লড়াই করার সময় এসে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অপরিণামদর্শী উস্কানির জবাবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন তিনি। কিম জং সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, বি-২ বিমানের শক্তি প্রদর্শনের পর একে আর নিতান্ত সামরিক মহড়া বলা যাবে না বরং যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো মূল্যে পরমাণু যুদ্ধ করতে চাইছে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখ-, গুয়াম ও হাওয়ায় দ্বীপসহ প্রশান্ত মহাসাগরের সামরিক ঘাঁটি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে কিম তার সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে, দক্ষিণ কেরিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা ইয়োনহ্যাপ বলেছে, উত্তর কোরিয়ার মধ্যম ও দূর পাল¬ার ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটের চলাচল বেড়ে গেছে বলে শনাক্ত করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী। সে ক্ষেত্রে যুদ্ধের আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে গেছে। এদিকে উত্তর কোরিয়ার সরকারি সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রেও বি-৫২ বোমারু বিমানের আকাশ সীমালঙ্ঘন উত্তর কোরিয়ার কাছে চরম হুমকির শামিল। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই বিমান বিধ্বংসী এবং দূরপাল¬ার রকেট মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার কোরিয়ান অঞ্চলের আকাশসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের দুইটি বি-৫২ স্টিলথ বোমারু বিমান প্রবেশ করে। পারমাণবিক অস্ত্র বহন এবং নিক্ষেপে সক্ষম এই বোমারু বিমানগুলো রাডার ফাঁকি দিয়ে প্রায় অদৃশ্য হয়ে উড়তে সক্ষম। পিয়ংইয়ং বোমারু বিমানের ঘটনাকে আগ্রাসী বলে উলে¬øখ করলেও যুক্তরাষ্ট্র একে মহড়ার নিয়মিত অংশ বলে উল্লে¬খ করেছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া একটি নতুন সামরিক চুক্তি করেছে যেখানে মহড়া ও নিরাপত্তা প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ের উলে¬øখ আছে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্র করে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই দুই কোরিয়ার একে অপরকে পাল্টাপাল্টি হামলার হুমকিকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দক্ষিণ কোরিয়াকে সামরিক সহায়তা দিয়ে উত্তর কোরিয়াকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এরই ফলে, উত্তর কোরিয়ার রকেট মোতায়েন করা হযেছে।
কোরিয়া উপদ্বীপে চরম উত্তেজনার মধ্যে বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক হটলাইন ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দু’দেশের মধ্যে এটিই সরাসরি যোগাযোগের সর্বশেষ চ্যানেল। উত্তর কোরিয়ার অংশে দু’দেশের যৌথ শিল্প এলাকা কায়েসং এ দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মীদের ভ্রমণের জন্য এ সামরিক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হয়। উত্তর কোরিয়া এর আগে দক্ষিণের সঙ্গে আরো দুটি হটলাইট ছিন্ন করার পর এবার এটিও ছিন্ন করার ঘোষণা দিল। যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে কয়েকদিন ধরে ক্রমাগত পরমাণু হামলার হুমকি দিয়ে আসার পর উত্তর কোরিয়া বুধবার বলেছে, ‘ যে কোনো সময়’ যুদ্ধ শুরু হতে পারে। এ কারণে হটলাইন ছিন্ন করছে তারা। ১২ ফেব্রুয়ারিতে পরমাণু পরীক্ষা চালানোর পর নতুন করে আরোপিত জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা এবং যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়ায় ক্ষুব্ধ উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে কয়েকবার হামলার হুমকি দিয়েছে। গত মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়া তাদের গোলন্দাজ এবং রকেট ইউনিটগুলোকে প্রথম শ্রেণীর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশও দেয়।
Category: 1stpage, আন্তর্জাতিক, ব্রেকিং নিউজ, শীর্ষ সংবাদ