• ১০ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,24 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

স্বাগত বাংলা নববর্ষ ১৪২০

| এপ্রিল 14, 2013 | 0 Comments

দেশের খবর: ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ সকল না পাওয়ার বেদনাকে ধুয়ে মুছে, আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে সূচি করে তুলতেই আবার এসেছে পহেলা বৈশাখ।

আজ নতুন বাংলা সালের শুরু। শুভ নববর্ষ। স্বাগত ১৪২০।

নতুন বছরের প্রথম দিনটি চিরায়ত আনন্দ-উদ্দীপনা আর বর্ণাঢ্য উৎসবেরর মধ্য দিয়ে হাজির হবে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে।

আজ রোববার নতুন স্বপ্ন, উদ্যম আর প্রত্যাশার আবির ছড়ানো বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় উৎসব পহেলা বৈশাখ।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের ভাষায়- ’এসো, এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।’

গ্রীষ্মের দাবদাহ এড়িয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাঠ-ঘাট, পথে-প্রান্তরে ঢল নামবে লাখো উচ্ছসিত জনতার।

স্বাধীনতার চার দশকেরও পরে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় হতে শুরু করায় এবার বর্ষবরণের উৎসব তরুণ প্রজন্মের কাছে ভিন্ন মাত্রা পাবে। সকল বয়সি বাঙালিকে আবার একবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাকে ফিরে পাবার আশায় ঘর থেকে বের করে আনবে। আনন্দ- উচ্ছাসে ভেসে যাবে গোটা দেশ ও জাতি।এবারে নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল বক্তব্যও(থিম) যেন সেই সুরেই গাঁথা- ”রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ,মুক্তিযুদ্ধ অনি:শেষ।”

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকবে ৬৫ ফুট দীর্ঘ ভিনদেশি এক সরিসৃপ। অশুভ শক্তিকে তাড়ানোর জন্য দানবীয় এই প্রাণীকে ‘রূপক’ হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হবে বাঙালির ঐতিহ্যের দিনটিতে।

দিবসটিকে কেন্দ্র করে নববর্ষকে স্বাগত এবং দেশবাসিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে অস্থায়ি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জাতির উদ্দেশ্যে বাণী দিয়েছেন।

এছাড়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়েছে।

আমাদের জাতিসত্তার মৌলিক ও অনন্য পরিচয় এবং বাঙালির প্রভূত রূপায়ণ ও রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের অমোঘ উপাদান এই পয়লা বৈশাখ। দেশের মূল স্তম্ভ কৃষক সমাজ আজও বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে,ফসল রোপন ও ঘরে তোলার পালাও চলে সেই পঞ্জিকা অনুসারে। ফসলি সাল গণনার জন্য একদা যে বাংলা সনের উৎপত্তি তা সুদীর্ঘকাল ধরে শহর-বন্দর, গ্রাম থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এদেশের মানুষের হৃদয়ে নিজস্ব সংস্কৃতি হিসেবে শক্ত আসন গেড়ে বসেছে। বাংলা নববর্ষে ব্যবসায়ীদের ‘হালখাতা’ রীতি এখনও এদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির আমেজ নিয়ে টিকে রয়েছে। খেরোখাতায় পুরাতন হিসেব মিটিয়ে নতুন বছরে নতুন করে সবকিছু শুরু করার জন্য এদিন ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্টদের দাওয়াত দিয়ে এখনও মিষ্টিমুখ করান।

আজ সরকারি ছুটির দিন। উৎসবে মেতে ওঠার উপসর্গ খুঁজে ফেরা বাঙালিদের জন্য নারী-পুরুষ-শিশু,ধর্ম,বর্ণ,গোত্র নির্বিশেষে জাতীয়ভাবে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠার দিন। শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা এবং রং-বেরঙের নারী-পুরুষের পোষাক এবং সজ্জায় বর্ণিল হয়ে উঠবে রাজধানীসহ গোটা দেশ। প্রাণ চাঞ্চল্যে মুখরিত হয়ে রাজধানী ঢাকার দৃশ্যপটও বদলে যাবে । কাকডাকা ভোর থেকেই নগরীর পথে পথে বাঙালি সংস্কৃতি লালনকারী আনন্দপিপাসু নগরবাসীর ঢল নামবে । পরিধেয় বস্ত্রেও থাকবে বৈশাখী উৎসবের লাল-সাদার বাহারি নক্সার পোশাক।

শাড়ি, সালোয়ারÑ কামিজ ও ফতুয়া পরে, পায়ে আলতা, হাতে মেহেদী আর খোঁপায় তাজা ফুলের মালা জড়িয়ে বঙ্গ ললনারা রাজপথে নেমে আসবেন। পুরুষের পরিধানে থাকবে পাঞ্জাবী ও ফতুয়াসহ চিরায়ত বাঙালি পোশাক। শিশুরাও এদিন বাবাÑমা’র হাত ধরে আসবে পুরো বাঙালি সাজে সেজে। প্রায় সকলের, বিশেষ করে শিশু, তরুণÑ তরুণীদের কপালে, গালে, বাহুতে আঁকা থাকবে বাঙালী সংস্কৃতির আলপনা। রঙ-বেরঙের মুখোশ পরে ঢাক, ঢোল, একতারা হাতে নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাস্তায় নেমে পড়বেন অধিকাংশ রাজধানীবাসী।

রমনার বিভিন্ন বৈশাখি মেলার খাবার স্টলে ইলিশ পান্তা খাবার ধুম পড়বে। নগরীর অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো থেকে শুরু করে রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশেপাশে ভ্রাম্যমাণ রেস্টুরেন্টে থাকবে ইলিশ-পান্তার আয়োজন। বাসাবাড়িতে তৈরি হবে বাঙালি খাবার-ইলিশ মাছ ভাজা, শুটকি, বেগুন, ডাল, নানা পদের ভর্তা, ইলিশ ভাজা ও ষর্ষে ইলিশসহ আরো কত কি।

বিভিন্ন এতিমখানা, কারাগার, সংশোধন কেন্দ্র, হোষ্টেল এবং হাসপাতালে উন্নত খাবার পরিবেশন ছাড়াও রেডিও টিভিতে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা, সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে নববর্ষকে ঘিরে।

প্রতি বছরই বর্ষবরণ উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। শুক্রবার থেকেই চৈত্র সংক্রান্তি উদযাপনের মাধ্যমে চারুকলার বকুলতলায় উৎসবের শুরু হয়েছে। প্রতিবছরের মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকে বিশেষ কোন এক প্রতীক। এরই ধারাবাহিকতায় এবার অশুভ শক্তি তাড়ানোর দানবীয় সরিসৃপের ধারণা।

চারুকলা চত্বরে দিনরাত কাজ করে চারুকলার শিক্ষার্থীসহ তরুণ-তরুণীরা স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি করে চলেছেন রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ এবং অশুভ শক্তি বিতাড়নের নানা অনুসঙ্গ।

চারুকলার লিচুতলায় আরেকটি দল কাঠ, বাঁশ, মাটিসহ বিভিন্ন উপকরণে গড়ে তুলছেন ভিন্ন ভিন্ন কাঠামো। কেউ কেউ সেগুলোতে রংয়ের আঁচড়ে বর্ণিল করে তুলছেন।

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি কাজের সমন্বয়ক মানবেন্দ্র ঘোষ জানান, “তরুণ প্রজন্মসহ সবার দাবি যুদ্ধাপরাধীরে ফাঁসি, রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ। সেই দাবিকেই শোভাযাত্রায় ফুঁটিয়ে তোলা হচ্ছে রূপকের মাধ্যমে।”

তিনি বলেন, আমরা বাঙালির ঐতিহ্যকে যুগ যুগ বাঁচিয়ে রাখতে চাই। কিন্তু অশুভ শক্তি তা বাধাগ্রস্ত করছে প্রতিনিয়ত। বাঙালির শিল্প-সাহিত্য-ঐতিহ্য নিয়েই মঙ্গল শোভাযাত্রায় রূপকের মাধ্যমে অশুভ শক্তিকে তাড়াবে এই দানব।

নববর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্তে শুধু রাজধানীতেই নয়, অশুভ শক্তি বিতাড়ণের পহেলা বৈশাখ উদযাপন কমিটির টি-শার্ট এবং পোস্টারে প্রতীকী অর্থে মোটিভ তৈরি করে সারা দেশে পাঠানো হবে ।

আজ সকাল ১১ টায় চারুকলা অনুষদ থেকে নববর্ষের অন্যতম আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে শাহবাগ, হোটেল রুপসী বাংলা, টিএসসি ঘুরে চারুকলাতে এসেই শেষ হবে। এছাড়া দু’দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ছাড়াও ২ বৈশাখ চারুকলা অনুষদে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালা ‘নাচমহল’ প্রদর্শিত হবে।

আসলে প্রতিক্রিয়াশিল গোষ্ঠী ২০০১ সালে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা মেরে মানুষ হত্যার পর থেকে অশুভ শক্তিকে তাড়াতে বাঙালির বর্ষবরণে জনতার ঢল বহুগুণে বেড়ে গেছে।

বাংলা ১৪১৯ সালকে বিদায় এবং নববর্ষ ১৪২০কে বরণে ইতোমধ্যেই পার্বত্য তিনজেলা- খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবনে তিন দিনব্যাপী ’বৈসাবি’ উৎসব শুরু হয়েছে।

অনুষ্ঠানমালা: বাংলা বর্ষবরণ মানেই রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজন। আড়াই ঘণ্টার এই আয়োজন শুরু হবে কাল সকাল সোয়া ছয়টায়। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি, মাছরাঙা টেলিভিশন, দেশ টিভি ও বৈশাখী টিভি।

গতকাল বছরের শেষ দিন চৈত্রসংক্রান্তির আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ এবং সুরের ধারা । একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পূর্তি উদযাপনও করবে প্রতিষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানটির শিরোনাম ‘ফিরে দেখা’। ঢাকা শিশুপার্কের সামনে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হবে আজ সকাল থেকেই। সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়কে সীমান্ত স্কয়ারের বিপরীতে লেকের ধারে গান করবে রবিরাগ। আড়াই ঘণ্টার এই আয়োজন সরাসরি দেখাবে একুশে টিভি।

পাপিয়া সারোয়ারের গীতসুধা রবীন্দ্রসংগীত অনুশীলন কেন্দ্র বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করবে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে লেকের ধারে।

এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগ সকাল সকাল সাড়ে ৭টায় নগরীতে শোভাযাত্রা বের করবে। শোভাযাত্রাটি বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধু এ্যাভেনিউয়ের পার্টি অফিসে গিয়ে শেষহবে।

এছাড়া দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শাখা ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বৈশাখি মেলা,র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

নিরাপত্তা: আসন্ন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাজধানীতে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের মাধ্যমে নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হবে।

শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা বিষয়ক ব্রিফিং অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ এসব কথা বলেন।

আসন্ন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রমনার বটমূলে আগতদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিকাল ৫টার মধ্যে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।

নববর্ষ উপলক্ষ্যে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র সরোবরসহ বিভিন্নস্থানে বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এসব অনুষ্ঠান সুষ্ঠু, সুন্দর, স্বাভাবিকভাবে উদযাপনের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের নিদের্শনা মানতে নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়।

চট্টগ্রামে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন ’পহেলা বৈশাখ’ উদযাপনে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের একটি সূত্র জানায়, যেসব স্থানে নববর্ষের অনুষ্ঠান হবে তেমন ১৫টি পয়েন্টে মহানগর পুলিশের একহাজার ৫০ জন সদস্যকে নিয়োজিত করা হয়েছে। এছাড়া জেলার সার্বিক নিরাপত্তাবিধানে প্রায় সাড়ে ১২শ’ পুলিশ ও আনাসারসহ বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে বিপুল সংখ্যক সাদা পোশাকাধারী পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশের একটি উর্ধ্বতন সূত্র জানায়, দেশের সকল বিভাগীয় শহর ও জেলা উপজেলা পর্যায়ে বর্ষবরণকে নির্বিঘœ করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ প্রশাসন।

Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর, প্রচ্ছদ

About the Author ()

Leave a Reply