সাংবাদিক পেটালেন সাংসদ রনি, হত্যাচেষ্টার মামলা
দেশের খবর : রাজধানীর তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজায় আওয়ামী লীগের সাংসদ গোলাম মাওলা রনির কার্যালয়। সেখানে অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি টেলিভিশন ইনডিপেন্ডেন্টের দুই সাংবাদিক। তাঁদের হাতে ছিল ক্যামেরা। এ সময় কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসেন সাংসদ গোলাম মাওলা। এসেই তিনি সাংবাদিকদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘এখানে কেন?’ উত্তরে সাংবাদিকেরা জানান, ‘বসে আছি।’ সাংসদ পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কেন?’ সাংবাদিকেরা আবার বলেন, ‘কেন, বসে থাকা যাবে না?’ এ সময় সাংসদ বলেন, ‘এটা একটা প্রাইভেট অফিস।’ বলতে বলতেই তিনি সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। শুরু করেন লাথি, কিল, ঘুষি ও এলোপাতাড়ি মারধর। একপর্যায়ে সাংসদ গোলাম মাওলার সঙ্গে যোগ দেন তাঁর সহযোগীরাও। ভেঙে ফেলা হয় সাংবাদিকদের ক্যামেরা।
আজ শনিবার দুপুর পৌনে একটার দিকে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে ঘটে এ ঘটনা। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের অপরাধবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘তালাশ’-এর প্রতিবেদক ইমতিয়াজ মমিন ও ক্যামেরাম্যান মোহসিন মুকুলকে বেধড়ক পেটান সাংসদ গোলাম মাওলা। মারধরের পর আহত মোহসিন মুকুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সাংসদ গোলাম মাওলা দুঃখ প্রকাশ করলে প্রথমে ঘটনার মীমাংসা হয়। তবে পরে গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টার মামলা করা হয়েছে।
ঘটনা সম্পর্কে প্রথম আলো ডটকমকে দেওয়া সাংবাদিক ইমতিয়াজ মমিনের ভাষ্য, ন্যাম ভবনে সাংসদদের জন্য বরাদ্দ করা ফ্ল্যাটে কারা থাকেন, তা নিয়ে ‘তালাশ’ একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করছে। দেখা গেছে, ন্যাম ভবনের ২ নম্বর ফ্ল্যাটে সাংসদ গোলাম মাওলার জন্য বরাদ্দ করা বাসায় তাঁর গাড়িচালক সপরিবারে বাস করছেন। এ বিষয়ে গত বুধবার (১৭ জুলাই) গোলাম মাওলার বক্তব্য জানতে তোপখানা রোডে মেহেরবা প্লাজার দশম তলায় তাঁর কার্যালয়ে যান। কিন্তু সারা দিন বসে থাকার পরও গোলাম মাওলার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সাংবাদিক ইমতিয়াজ মমিন বলেন, ন্যাম ভবন ছাড়াও পটুয়াখালীর আরেকটি ঘটনা নিয়েও তাঁরা তদন্ত করছেন। একটি সূত্রের মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারেন, পটুয়াখালীর একটি দরপত্রের বিষয়ে সমঝোতা করতে একজন সরকারি কর্মকর্তা দুই কোটি টাকা নিয়ে গোলাম মাওলার সঙ্গে দেখা করতে তাঁর মেহেরবা প্লাজার কার্যালয়ে গেছেন। এ খবর সংগ্রহ করতে দুপুর পৌনে একটার দিকে সেখানে ক্যামেরা নিয়ে প্রস্তুত থাকেন তাঁরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গোলাম মাওলা কার্যালয় থেকে বের হয়ে তাঁদের দুজনকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। পরে গোলাম মাওলার সহযোগী কর্মকর্তারাও তাঁদের মারধর শুরু করেন। তাঁদের ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিয়নের সভাপতি শাহেদ চৌধুরী, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আখতারুজ্জামান প্রমুখ। তাঁদের সঙ্গে সাংসদ গোলাম মাওলার কয়েক দফা বৈঠক হয়। একপর্যায়ে দাবি করা হয় উভয় পক্ষের মধ্যে মীমাংসা হয়েছে।
বৈঠকের পর গোলাম মাওলা সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। আহত সাংবাদিকদের চিকিত্সার খরচ এবং ক্যামেরা ভেঙে যাওয়ার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। তবে তিনি কোনো হামলা করেননি বলে দাবি করেন। হামলা না করে দুঃখ প্রকাশ করা এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে গোলাম মাওলা বলেন, ‘কার্যালয়ের সামনে ঘটেছে, তাই দুঃখ প্রকাশ করছি।’ মারধরের সঙ্গে কারা জড়িত, জানতে চাইলে সাংসদ বলেন, এ ঘটনায় ওই ভবনের অন্য লোকজন জড়িত।
তবে পরে আহত দুই সাংবাদিক বলেন, তাঁরা মীমাংসা মানেন না। তাঁরা আইনগত পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান। পরে এ ব্যাপারে ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সহকারী ব্যবস্থাপক ইউনূস আলী বাদী হয়ে সাংসদ গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলামও মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করলেও ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজে দেখা গেছে, মেহেরবা প্লাজার সিঁড়িতে গিয়ে প্রথমে সাংসদ গোলাম মামলাই সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। গোলাম মাওলা সাংসদ হওয়ার পর তাঁর নির্বাচনী এলাকা পটুয়াখালীতেও তাঁর হাতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক নির্যাতিত হন।
Category: 1stpage, দেশের খবর, ব্রেকিং নিউজ, শীর্ষ সংবাদ