• ৮ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,22 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

নিয়ম রক্ষার ঈদ, আনন্দের ছোয়া লাগেনি- ইলিয়াস সহধর্মিনী লুনা

| আগস্ট 13, 2013 | 0 Comments

ইলিয়াস সহধর্মিনী তাহসিনা রুশদী লুনা

দেশের খবর:
ছালেহ আহমদ শান্ত, বিশ্বনাথ:
ঈদ খুশির বা আনন্দের এই কথা কারো অজানা নয়। সকল দুঃখ-কষ্ট, ভেদাভেদ ভুলে ঈদের আনন্দে সবাই মেতে উঠে যে যার মতো করে। ঈদের আনন্দে মাতোয়ারা থাকে উৎসবপ্রেমী গোটা দেশবাসী। কিন্তু আনন্দময় এই ঈদের ছোয়া লাগেনি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ এম.ইলিয়াস আলীর পরিবারে। নিরানন্দ ঈদ পালন ইলিয়াস পরিবারের। ইলিয়াস বিহীন এ নিয়ে ৩টি ঈদ পালিত হলো। ঈদের দিন প্রতিটি ঘরে ঘরে যখন ঈদের আনন্দ উল্লালে ব্যস্ত সবাই তখন ইলিয়াসের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। চোখের জলে বুক ভাসছে ইলিয়াসের মা-স্ত্রী ও সন্তানদের। কোন প্রবোদই যেন তাদের কান্না থামাতে পারছেনা। প্রতি বছর ঈদ এলে সিলেট-২ আসনের সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপির সভাপতি এম. ইলিয়াস আলী স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মায়ের সাথে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ী বিশ্বনাথ উপজেলার রামধানা গ্রামে আসতেন। নিজ হাতে পরিবারের সবার জন্য ঈদের জামা-কাপড় কিনে আনতেন। বাড়ীর পাশে রামধানা শাহী ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করতেন তিনি। ঈদের দিন কুশল বিনিময় করতে ছুটে আসতেন নির্বাচনী এলাকাসহ সিলেটের দলীয় নেতাকর্মী ও শুভাকাংখিরা। প্যান্ডেল বেঁধে গরু জবাই করে ধুমধাম করে খাওয়ানো হতো আগতদেরকে। ঈদের পুরোটা সময় এলাকাবাসী ও পরিবারের সাথে আনন্দঘন পরিবেশে পালন হতো প্রতিবছর। এসব আজ অতীত। ইলিয়াস নিঁেখাজের পর সকল আনন্দ আজ বিষাদে পরিনত হয়ে গেছে। পরিবারের কারো জন্য ঈদের নতুন জামা-কাপড় কেনা হয়না। বাড়ীতে প্যান্ডেল বেঁধে গরু জবাই করে খাওয়ানো হয়না আগের মতো। মানুষের আনাগোনাও নেই। সেই সাথে হারিয়ে গেছে পরিবারের সুখ শান্তি কিংবা আনন্দ।

ঈদের দিন ইলিয়াস আলীর বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, যে বাড়ীটি লোকে লোকারণ্য থাকতো ঈদের দিন সেই বাড়ীটি জনশুন্য। চারিদিকে নিরব নিস্তব্ধতা। অশ্রুশিক্ত নয়ন পরিবারের লোকজনের। ইলিয়াসের মা যুর্যবান বিবি ও স্ত্রী লুনার পড়নে পুরাতন কাপড়। ঈদের নতুন কাপড় কেনা হয়নি কারো জন্য। নিঃসঙ্গতা বিরাজ করছে সর্বত্র। বাড়ীর ভিতরে গিয়ে কথা হয় ইলিয়াস সহধর্মিনী তাহসিনা রুশদী লুনা’র সাথে। কিভাবে ঈদ কাটছে এমন প্রশ্ন শুনতেই ঝরঝর করে চোখের জল গড়িয়ে পড়তে শুরু করে তাঁর চোখ থেকে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। কিছুক্ষন পর অনেক কষ্টে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে ভাঙ্গা গলায় তিনি বলেন, আমাদের পরিবারে ঈদের আনন্দ নেই। নতুন জামা-কাপড় কেনা হয়নি কারো জন্য। প্রতি বছর ঈদে আমার স্বামী ইলিয়াস আলী সবার জন্য নতুন জামা-কাপড় কিনে আমাদের সাথে নিয়ে বাড়ীতে আসতেন। এই নিয়ে ৩টি ঈদ তাঁকে (ইলিয়াস) ছাড়া কেটেছে। কখনো ভাবিনি এভাবে ঈদ আসবে আমাদের জীবনে। আমার সন্তানদের নিয়ে বাড়ীতে আসছি শুধু মাত্র আমার শয্যাশায়ী শাশুড়ির পাশে থাকতে, ঈদের আনন্দ করতে নয়। জানিনা আজ আমার স্বামী কিভাবে কোথায় আছেন। আমার সন্তানরা প্রতিনিয়ত বাবার জন্য কাঁদে। আমার মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল বাবার জন্য ছটপট করছে। মাঝে মাঝে সে আমাকে বলে, মা বাবাকে যারা নিয়ে গেছে তারা কেন বাবাকে ফিরিয়ে দিয়ে যায়না। ওরা কি জানেনা বাবার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে। ওরা ‘সরি’ বলে আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিলেই তো পারতো? তখন সাইয়ারার কথার কোন উত্তর আমি দিতে পারিনা। প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমি দেখা করে স্বামী উদ্ধারের জন্য মিনতি করি। কিন্তু আজ ১৫মাসেও কোন সুফল আসেনি। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমার স্বামী ফেরার আশায় আমি থাকবো। এজন্য তিনি দেশবাসীর দোয়া ও সহযোগীতা কামনা করেন।

এর আগে রামধানা শাহী ঈদগাহ মাঠে ঈদের জামাতের আগে ইলিয়াস আলীর বড় ছেলে আবরার ইলিয়াস অর্নব উপস্থিত সবার কাছে তার বাবার জন্য দোয়া কামনা করে বলেন, এই ঈদগাহ’র মুতাওয়াল্লি ছিলেন আমার বাবা ইলিয়াস আলী। প্রতি বছর বাবার সাথে এখানে এসে ঈদের জামাত আদায় করতাম । আজ আমার বাবা কোথায় আছেন জানিনা। আমার বাবা যেন সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসেন সে জন্য আপনারা দোয়া করবেন।

এদিকে আনসারের পরিবারে ঈদের দিন চলছিল শোকের মাতম। পরিবারের বড় ছেলে আনসার নিখোঁজ তাই সবার চোখে ছিল পানি। ঈদের নতুন কাপড় তো কেনা দূরের কথা ঠিক মতো ঈদের বাজার সদাই করা হয়নি। এক কথায় আনন্দের বদলে বাড়ীটি ছিল কান্নার শব্দে ভারী।

আনসারের মা নূরজাহান বেগম সাংবাদিকদের দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, আইজ ৩টা ঈদ গেল আমার পুয়া ছাড়া। আমি কোনদিন পুয়ারে ছাড়া ঈদ করমু ভাবছিনা। আমার পুড়া কপাল এরলাগি ঈদর দিন কান্দি কান্দি যার। আল্লায় যদি আমার কান্দন হুনইন তে আমার পুয়ারে ফিরাইয়া দিবা। আনসারের স্ত্রী মুক্তা বলেন, স্বামীকে ছাড়া ঈদের আনন্দ ছিল বিষাদের মতো। আমার শাশুড়ি ও মেয়ের মুখের দিকে থাকালে বুক ধরাতে পারিনা। আমাদের পরিবারে ঈদের আনন্দ তখন আসবে যখন আমার স্বামীকে ফিরে পাব।

Category: 1stpage, দেশের খবর

About the Author ()

Leave a Reply