• ৯ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,23 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

শিক্ষক পরিমলের বিরুদ্ধে ছাত্রী ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্য দিয়েছে

| আগস্ট 23, 2013 | 0 Comments

দেশের খবর: রাজধানীর ভিকারুননিসা স্কুলের বসুন্ধরা শাখার বাংলা শিক্ষক পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্য দিয়েছে ধর্ষিত ছাত্রী। সাক্ষ্যে ধর্ষিত ছাত্রী জানায়, ঘটনার দিন আলাদা পড়ানোর নামে স্যার (পরিমল) তাকে বাসায় যেতে বাধা দেয়ার পর ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে ধর্ষণ করে।
গতকাল ঢাকার ৪ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রুদ্ধদ্বার কক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার সময় ভিকটিম দশম শ্রেণীর জবানবন্দিতে এ কথা বলে।
এ সময় ধর্ষিত ছাত্রী জানায়, শিক্ষক পরিমল তাকে বিবস্ত্র করে মোবাইলে ছবি উঠিয়ে ধর্ষণের কথা কাউকে না বলতে বলে। অন্যথায় ইন্টারনেটে ওই ছবি ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়।
প্রসঙ্গত, কোচিংয়ের নামে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষক পরিমল জয়ধর ২০১১ সালের ২৮ মে এবং এর পর আরও এক বার দশম শ্রেণীর ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। এছাড়া বিভিন্ন কৌশলে শিক্ষক আরও কয়েক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করে বলে এ সময় অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনা জানাজনি হলে দেশজুড়ে শিক্ষক পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে পরিমলের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীর বাবা মামলা করেন। এ মামলায় গতকাল সাক্ষ্য দেয় ওই ছাত্রী।
জবানবন্দিতে ধর্ষিত ছাত্রী বলে, ‘পরিমল স্যারের কাছে আমি বাংলা দ্বিতীয় পত্রের কোচিং করতাম। ২০১১ সালের ২৮ মে আমার কোচিংয়ে যেতে দেরি হয়। ওইদিন স্যার তিনটি চ্যাপ্টার পড়ায়। আমি শেষ চ্যাপ্টারটি পাই। পড়া শেষে স্যার বলে, তুমি বসো। ওই দুটি চ্যাপ্টার তোমাকে আলাদা করে পড়িয়ে দেব। এরপর সবাই চলে গেলে পড়ানোর একপর্যায়ে সে হঠাত্ ওড়না কেড়ে নিয়ে আমার হাত বেঁধে ফেলে। ধস্তাধস্তি করে আমাকে বেঞ্চ থেকে মেঝেতে ফেলে দেয়। জোর করে আমাকে বিবস্ত্র করে। এরপর মোবাইল ফোনে উলঙ্গ ছবি তোলে ও প্রথম দফায় ধর্ষণ করে।
ধর্ষণের পর স্যার বলে, ঠিকমতো পড়াশোনা করো। এ ঘটনা কাউকে বলো না। বললে ইন্টারনেটে তোমার ছবি ছেড়ে দেব। আমার কিছুই হবে না, বরং তোমারই ক্ষতি ও বদনাম হবে। লজ্জা ও ভয়ে আব্বু-আম্মুকে কিছু বলিনি। কোচিংয়ে পড়া চালিয়ে গেছি।
পরের মাসে ১৭ জুন স্যার কোচিংয়ে একা পেয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে আবারও ধর্ষণ করে। ১৯ জুন স্কুলে গেলে স্যার দফতরি দিয়ে আমাকে টিচার্স রুমে ডেকে নিয়ে ১০০ টাকা দিয়ে বলে পিল খেয়ে নিস।’
আদালতসূত্রে জানা যায়, সাক্ষ্য গ্রহণের সময় আদালতের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছিল। নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল আসামি।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক আরিফুর রহমান এ সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। একইসঙ্গে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেন। তিনি এ দিন সাক্ষ্য দিতে আসার জন্য মেডিকেল পরীক্ষাকারী ডাক্তার, ২২ ধারার জবানবন্দি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেট ও তদন্ত কর্মকর্তাকে সমন দেয়ার নির্দেশ দেন।
এর আগে দুপুর সোয়া ১২টায় ক্যামেরা ট্রায়ালের জন্য আদালতের এজলাস থেকে এ মামলার আসামি, আসামির আইনজীবী, ভিকটিম, ভিকটিমের আইনজীবী ও স্পেশাল পিপি ছাড়া আর সবাইকে বের করে দেয়া হয়।
এরপর আদালতের কক্ষ ভেতর থেকে লাগিয়ে দিয়ে ভিকটিমের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। জবানবন্দি শেষে তাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী।
২০১১ সালের ৫ জুলাই রাজধানীর বাড্ডা থানায় ওই ছাত্রীর বাবা মাহমুদুল হক শিক্ষক পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওই ছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে ২০১১ সালের ২৮ মে ধর্ষণ করে শিক্ষক পরিমল। ওই সময় ওই ছাত্রীর নগ্ন ছবি মোবাইলে ভিডিও করা হয়। পরে ওই ভিডিও বাজারে ছাড়ার কথা বলে ওই বছরের ১৭ জুনও ধর্ষণ করে।
মামলার পর ২০১১ সালের ৬ জুলাই পরিমল জয়ধরকে কেরানীগঞ্জের পরিমলের স্ত্রীর বড় বোনের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর পরের দিন তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। ১১ জুলাই রিমান্ডে থাকাকালে পরিমল আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।
২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর অধিকতর তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মাহবুবে খোদা পরিমল জয়ধরকে অভিযুক্ত করে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত বছরের ৭ মার্চ আসামি পরিমলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে অব্যাহতি দেয়া হয় অপর দুই আসামি ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম ও বসুন্ধরা শাখা প্রধান লুত্ফর রহমানকে।

Category: 1stpage, দেশের খবর, শীর্ষ সংবাদ

About the Author ()

Leave a Reply