• ৯ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,24 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

ঐশীর সঙ্গে এক রুমে ঘুমাতে নারাজ সংশোধনী কেন্দ্রের বাসিন্দারা

| আগস্ট 27, 2013 | 0 Comments

ইউরোবিডি২৪নিউজঃ এমব্রয়ডারি, সেলাইয়ের ক্লাস করছে ঐশী। টেলিভিশন দেখছে, তার নিজের খবরও দেখেছে। খাবার-দাবার করছে অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই। এখন তার একটাই চিন্তা, জামিন। চিন্তা আছে পরীক্ষারও। ভাইকে দেখার জন্যও ব্যাকুল। তবে ঐশীর সঙ্গে রাত কাটাতে নারাজ কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রের অন্য কিশোরী নিবাসীরা। গতকাল সকালে সংশোধনী কেন্দ্রের অন্য সব নিবাসীর সঙ্গে সবজি আর ডাল দিয়ে নাস্তা করেছে ঐশী। সকাল ৯টায় সবার সঙ্গে কেন্দ্রের মাঠে হাজির হয় শরীর চর্চায়। বেলা ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ছিল প্রশিক্ষণ ক্লাসে। অন্য ২৫ জন নিবাসীর সঙ্গে ইনস্ট্রাক্টর সেবিকা বড়ালের ক্লাসে বসে থাকে সে। অন্য সবার মতোই দুপুরের খাবার খায়। তার বাসার কাজের মেয়ে সুমির সঙ্গে ভাত খায় সবজি, ডাল আর মাছ দিয়ে। এভাবেই দিন পার হচ্ছে তার।

মা-বাবাকে খুনের ঘটনায় গাজীপুরের কোনাবাড়ি কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা ঐশী অন্য নিবাসীদের মতো অনেকটাই স্বাভাবিকভাবে সময় কাটাচ্ছে। রোববার রাতে খাবারের পর ঐশী তার ফ্লোরে থাকা টেলিভিশন দেখেছে। টেলিভিশনে তার এখন পছন্দ খবর। আর নিজের খবরও দেখেছে। কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক তাসমিন ফেরদৌসী জানান, সে খবরের কাগজ পড়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। বলেছে, পেপার পেলে ভাল হতো। তার এখন মূল চিন্তা, কবে জামিন হবে। সে ভীষণভাবে অনুভব করে ভাই ঐহীকে। এ কথা সে বলেছে কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। ভাইকে দেখার জন্যে ব্যাকুলতা প্রকাশ করে ঐশী কর্মকর্তাদের বলেছে, একবার শুধু ভাইকে দেখতে দিন। ঐশী বার বার জানতে চেয়েছে তার একমাত্র ছোট ভাই এখন কেমন আছে? খুব শিগগিরই তার ছোট ভাইকে দেখানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয় তাকে। সামনেই পরীক্ষার কথা বলে ঐশী পড়ার বই দিতে বলেছে কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষকে। কর্তৃপক্ষ তাকে আশ্বাস দিয়েছেন, তার আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে বই এনে দেবেন। তারা কেউ এলে বই পাঠানোর কথা বলা হবে। সোমবার পর্যন্ত তার কোন আত্মীয়স্বজন দেখা করতে যাননি সংশোধনী কেন্দ্রে। প্রতি মাসের ৭ আর ২২ তারিখ এ দু’দিন নিবাসীদের স্বজনদের অনুমতি সাপেক্ষে দেখা করার নিয়ম রয়েছে। তবে প্রথম বারের মতো এর আগেই যে কোন দিন দেখা করতে পারে স্বজনরা। ঐশীর স্বজনরাও তা পারবেন।

এদিকে, ঐশীর সঙ্গে রাত কাটাতে নারাজ কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রের অন্য কিশোরী নিবাসীরা। তবে তাদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে, তার সঙ্গে, এক রুমে অন্যদের ঘুমাতে রাজি করান কর্তৃপক্ষ। রুমের অন্য কিশোরীদের ধারণা, নিজের পিতা-মাতা কে যে হত্যা করে, সে যে কাউকে হত্যা করতে পারবে। এমন ধারণা করেই কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রের একই রুমে থাকা অন্য কিশোরীরা রাতে ঐশীর রুমে এক সঙ্গে ঘুমাতে রাজি হয়নি। কেন্দ্রের তেতলায় ঐশীকে যে রুমে রাখা হয়েছে, ওই ১১ নম্বর রুমে রয়েছে ৪টি বেড। ভয়ের কারণে ঐশীর রুমে প্রথমে অন্যরা রাত কাটাতে রাজি না হলেও পরে আরও ৫ কিশোরী রাত কাটিয়েছে। ঐশী মা-বাবাকে খুন করেছে শুনেই রুমের অন্যদের মাঝে তার সঙ্গে রাত কাটানো নিয়ে ছিল তাদের ভয়। অন্য মেয়েদের সঙ্গে অনেক কথা বললেও মা-বাবার কথা একবারও বলেনি ঐশী। তবে বার বারই বলেছে, তার ভাই ঐহীর কথা। শনিবার রাতে কোনাবাড়ি সংশোধনী কেন্দ্রে আনার পর দু’দিন অনেকটাই স্বাভাবিক দেখা গেছে ঐশীকে। এখানে বন্দি থাকা অন্য কিশোরীদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকছে, কথা বলছে। ঐশী কেন্দ্রের সবার সঙ্গেই স্বাভাবিক আচরণ করছে। কোনাবাড়ি কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে ঐশী এখানে এমব্রয়ডারি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে প্রশিক্ষণ পর্ব শুরু হয়, আর শেষ হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়। দুপুরে খাবারের পর বিরতি থাকে। বেলা সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তাদের খেলাধুলা করতে সময় দেয়া হয়। তবে ঐশী অন্যদের সঙ্গে কোন খেলাধুলা কিংবা আনন্দে অংশ নিচ্ছে না। গত ১৬ই আগস্ট ঢাকার চামেলীবাগে নিজের ফ্ল্যাট থেকে পুলিশের এসবির পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না বেগমের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের মেয়ে ঐশী তার পিতা ও মায়ের হত্যাকাণ্ডের মামলায় আটক রয়েছে।

Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, দেশের খবর, প্রচ্ছদ, শীর্ষ সংবাদ

About the Author ()

Leave a Reply