দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা
আন্তর্জাতিক: তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে মি. ওবামা ৩০৩টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পান আর রিপাবলিকান মিট রমনি পান ২০৬টি। সমানে সমানে লড়াই হয়েছে যে ৯টি অঙ্গরাজ্যে তার মধ্যে ৭টিতেই বারাক ওবামা জয়ী হয়েছেন।
এর পর শিকাগোতে হাজার হাজার লোকের একটি সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট ওবামা তার সমর্থকসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর আহবান জানান।
তিনি বাবাক ওবামা, বিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ভূমিধস বিজয়ের মাধ্যমে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী মিট রমনিকে হারিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য গতকাল পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন এই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। ওবামার জয়ের মাধ্যমে তিনি নিজেই শুধু ইতিহাসের বরপুত্রে পরিণত হননি, মার্কিনিদেরও নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। মার্কিনিদের সম্পর্কে বিশ্ববাসীর প্রচলিত ধারণাও পাল্টে গেছে। মার্কিনিরা দেখিয়েছেন যে, তারাও বিশ্ববাসীর চাওয়া-পাওয়াকে মূল্য দেন। দ্বিতীয় মেয়াদে চার বছরের জন্য ওবামাকে ভোট দিয়ে তারা বর্ণবাদকে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছেন।
“আমরা আমাদের অন্তর থেকে এটা জানি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যা কিছু সেরা – তার অনেকটাই এখনো সামনে পড়ে আছে”- প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
বারাক ওবামা আরও বলেছেন, “এই নির্বাচনে আমেরিকান জনগণ মনে করিয়ে দিয়েছে যে – যদিও আমাদের পথ ছিল কঠিন, পথ ছিল দীর্ঘ, কিন্তু আমরা উদ্দীপ্ত হয়েছি, লড়াই করে আমরা ফিরে এসেছি। এবং আমরা আমাদের অন্তর থেকে এটা জানি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যা কিছু সেরা – তার অনেকটাই এখনো সামনে পড়ে আছে।“
গতকাল বাংলাদেশ সময় ১১টার দিকে যখন ওবামার জয় নিশ্চিত হয়, তখনও কয়েকটি রাজ্যে ভোটগ্রহণ চলছিল। বাকি রাজ্যগুলোতেও চলছিল ভোটগণনা। ভোটগণনা শুরুর কয়েক ঘণ্টার মাথায় ওবামার জয় নিশ্চিত হয়। ওবামার জয় নিশ্চিত হওয়ার পরপরই মার্কিন রেওয়াজ অনুযায়ী ওবামাকে ফোন করে অভিনন্দন জানান রমনি। তিনি নিজের পরাজয়ও মেনে নেন। বিজয়ের পর প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, তিনি মিট রমনির সাথে বৈঠক করে আলোচনা করবেন যে কিভাবে দুই দল মিলে সামনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা যায়। তিনি বলেন যে, তার সামনে প্রধান কাজ হবে অর্থনীতি- এবং ফেডারেল বাজেটের ক্ষেত্রে তাকে কংগ্রেসের রিপাবলিকানদের সাথে একটি আপসরফায় পৌছতে হবে। নতুন বছরে কর বৃদ্ধি এবং ব্যয় সংকোচ বাস্তবায়ন হবে –যাতে বেকারত্ব এবং মন্দা বেড়ে যাবে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। এটা কাটানোর জন্য মি. ওবামা উচ্চ আয়ের লোকদের ওপর কর বাড়াতে চান – যার বিরোধিতা করছে রিপাবলিকানরা।
রমনির পরাজয়ের কারণ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে রক্ষণশীল রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনি সম্ভাব্য সবকিছুই করেছেন। এরপরও জয় তার অধরাই থেকে গেল। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিশ্লেষকসহ অনেকে অনেক কথাই বলছেন। এ ক্ষেত্রে কেউ বিতর্কে নিজেকে সঠিকভাবে তুলে ধরার ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন। কেউ আবার নির্বাচনী অঙ্গীকারে জনগণকে তার খুশি করতে না পারার বিষয়টিকে দোষ দিয়েছেন।
রমনির সমর্থকরা বলছেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে হারিকেন স্যান্ডির আঘাত যুক্তরাষ্ট্রকে লণ্ডভণ্ড করে দিলেও প্রেসিডেন্ট ওবামাকে অনেকটাই এগিয়ে নেয়। কেননা তিনি ওই সময় নির্বাচনী প্রচারণা বাদ দিয়ে দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পাশে দাঁড়ান। এতে তার জনপ্রিয়তা অনেকটাই বেড়ে যায়।
বিশ্লেষকদের মতে, অভিবাসন আইনের কড়াকড়ির বিরোধী পক্ষ, অভিবাসনের সমর্থক গোষ্ঠী, আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক-এমন একক গোষ্ঠীকে যথেষ্ট পরিমাণে খুশি করতে পারেননি রমনি। মতাদর্শ নিয়ে বিভিন্ন রকম কথা বললেও তিনি কোনো উপসংহার টানতে ব্যর্থ হন। একই সঙ্গে সরকার পরিচালনার বিষয়ে সঠিক কোনো দিক নির্দেশনাও তিনি দিতে পারেননি।
সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলার সুযোগ তার ছিল। তিনি যখন ম্যাসাচুসেটসের গভর্নর ছিলেন, ওই সময় ডেমোক্র্যাটিক শাসনাধীনে থেকে স্বাস্থ্যসেবা-বিষয়ক একটি সার্বজনীন পরিকল্পনা তৈরিতে কাজ করেছেন। ওই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এ ক্ষেত্রে দিক নির্দেশনা দিতে পারতেন।
সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে তার রানিং মেট পল রায়ানের সঙ্গে পরিকল্পনা নিয়ে মতভেদ ছিল। রমনি ছিলেন সরকারের আকার ছোট করার পক্ষে। কিন্তু পল ছিলেন এর উল্টো অবস্থানে। এ জিনিসটিও ভোটাররা ভালোভাবে গ্রহণ করেননি।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, আন্তর্জাতিক