• ১৯ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,03 Dec ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

আমার জীবনদর্শন হচ্ছে- ‘মানুষ মানুষকে ভালবাসবে।’- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

| ডিসেম্বর 7, 2012 | 0 Comments

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি ও কথাসাহিত্যিক। জন্ম মাদারীপুর জেলার মাইজপাড়া গ্রামে ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বরে। দেশ বিভাগের কারণে সপরিবারে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় স্থায়ী আবাস গড়ে উঠলেও এপার বাংলার জন্মভূমির সঙ্গে সুনীলের নাড়ির টান অচ্ছেদ্য। নিরন্তর সৃজনশীলতা নিয়ে তিনি সর্বভারতীয় পর্যায়েও একজন বড় সাহিত্য ব্যক্তিত্ব ভারতীয় সাহিত্য আকাডেমীর সভাপতি। তাঁর লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস দুই বাংলার পাঠকদের কাছে সমান সমাদৃত। জন্মভূমিতে অনুষ্ঠিত সুনীল মেলায় যোগ দিতে গত ২০০৭ সালের ২৭ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। ঘুরে গেছেন নিজ জন্মভিটা মাদারীপুর। মেলায় আসা এই প্রখ্যাত লেখক ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে লেখক জীবনের নানা কথা বলেছিলেন আহমেদ সুবীরের সঙ্গে।

গত ২৩ অক্টোবর ২০১২ তারিখে হৃদযন্ত্রজনিত অসুস্থতার কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ২০০৩ সালের ৪ এপ্রিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতার ‘গণদর্পণ’কে সস্ত্রীক মরণোত্তর দেহ দান করে যান। কিন্তু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একমাত্র পুত্রসন্তান সৌভিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ইচ্ছেতে তাঁর দেহ দাহ করা হয়। পশ্চিম বঙ্গ সরকারের ব্যবস্থাপনায় ২৫ অক্টোবর ২০১২ তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।

আজ সুনীল স্বরণে এই বিশেষ সাক্ষাতকারটি প্রকাশ করা হল।

আহমেদ সুবীর: আপনার শৈশব ও কৈশোর সম্পর্কে কিছু বলুন?

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: আমার শৈশবের কিছুটা অংশ পার করেছি এই মাইজপাড়া গ্রামে। বাকিটা সময় কেটেছে কলকাতায়। ছোটবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে পাট ক্ষেতে দৌড়াদৌড়ি করতাম, হারিয়ে যেতাম, গ্রামের পুকুর জলে সাঁতার কাটতাম। কাগজের ঠোঙ্গা দিয়ে নৌকা বানিয়ে পানিতে ভাসিয়ে দিতাম। শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো এখনও আমাকে প্রবল আনন্দ দেয়। আমার লেখালেখির শুরু কলকাতায় হলেও পূর্ববঙ্গের শৈশব-স্মৃতি আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াত। এটা লেখালেখির সূচনাপর্ব থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত আছে বলে মনে হয়।

আহমেদ : আপনার ছাত্র জীবনটা কেমন কেটেছে?

সুনীল: দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ভয়াবহতার শিকার হয়েছিলেন আমার বাবা। স্কুল, কলেজ বন্ধ হয়ে গেল অনির্দিষ্টকালের জন্য বেসরকারী স্কুলে ছাত্রদের মাইনে থেকেই শিক্ষকদের বেতন হত। স্কুল বন্ধ হওয়ার পর বাবা বেকার হয়ে যান, তার পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হওয়ায় আমাদের পাঠিয়ে দেন গ্রামের বাড়িতে। আমি মাইজপাড়ার বীরমোহন বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। টিনের চালের স্কুল ঘরটি ছিল বেশ পরিচ্ছন্ন। এর পেছন দিকে টলমলে জলভরা সুন্দর একটা বড় দীঘি ছিল। স্কুলটি আমাদের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে হওয়ায় হেঁটে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। শহরের স্কুলে আমাদের সঙ্গে কোনও মুসলমান সহপাঠি না থাকলেও গ্রামের স্কুলে ছাত্র হিসেবে হিন্দু-মুসলমান উভয়ই ছিল। হেড মাস্টার লঙ্কর সাহেবকে মনে হতো চলমান এক পর্বত, কিন্তু তিনি অমায়িক ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিলেন। তখন স্কুলে যেতাম নরম নরম ফেনামাখা ভাত খেয়ে।

আহমেদ : আপনার জীবনে প্রেমের কোন বিশেষ স্মৃতি থাকলে জানতে চাই?

সুনীল : দুর্গাপূজা উপলক্ষে আমাদের গ্রামের মামার বাড়িতে অনেক আত্মীয়-স্বজনের সমাবেশ হতো। তাদের মধ্যে আমার কয়েকজন অন্সরীতুল্য মাসি ছিলেন, আমি তাদের প্রত্যেকের প্রেমে পড়েছিলাম। সেই প্রেম অনেকটা দেবী-আরাধনার মতো। এক একজনের ফর্সা, নরম পা দেখে মনে হত, আমি মাটিতে শুয়ে থাকব, তিনি যদি অন্যমনস্কভাবে আমার বুকের উপর দিয়ে হেঁটেও যান, তাতেও আমার জীবন ধন্য হবে।

আহমেদ : জীবনের কোন কষ্টের ঘটনা বলবেন কি?

সুনীল : আমার প্রধান দোষ আমি বই পড়তে পড়তে খুব কাঁদি। মৃত্যু দৃশ্য বা করুণ দৃশ্যে নয়, ভুল বোঝাবুঝির দৃশ্যে আমার চোখে বেশি জল আসে। একজন আরেকজনকে ভুল বুঝছে, অথচ ভালোবাসার অভাব নেই। এরকম আমি সহ্য করতে পারি না। এ বিষয়টি আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়। মনে আছে, সতীনাথ ভাদুড়ীর জাগরী প্রথমবার পড়ার সময় মা-বাবা ও দুই ভাইয়ের ভুল বোঝাবুঝির কাহিনীতে আমি এত জোরে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলাম যে, মা ভয় পেয়ে পাশের ঘর থেকে ছুটে এসে ব্যাকুলভাবে জানতে চেয়েছিলেন, কী হয়েছে? তখন লজ্জায় চোখের জল মুছতে বাধ্য হয়েছিলাম। এ জীবনে আমি বই পড়ে যতবার কান্নাকাটি করেছি, প্রিয়জন বিচ্ছেদে কান্না সে তুলনায় অনেক কম।

আহমেদ সুবীর: আপনাদের প্রজন্ম দেশভাগ, মহাযুদ্ধ ইত্যাদি মানবসৃষ্ট দুর্যোগের মধ্য দিয়ে শৈশব-কৈশোর যৌবনের উল্লেখযোগ্য অংশ কাটিয়েছেন। তো, এই ধরনের বিপর্যয়ের ভিতর থেকে জীবনের নতুন কোন অর্থ বা তাৎপর্য কি খুঁজে পেয়েছেন?

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়: অনেক ঘটনা আছে। আমরা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ দেখেছি। তখন একটা দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। মানুষ খাবার পেত না। আমরাও এর শিকার হয়েছিলাম। খাবার সংগ্রহ করতে আমাদের খুবই অসুবিধা হতো। দাঙ্গা দেখেছি। বীভৎস দাঙ্গা! যারা এক সময় প্রতিবেশী ছিল, বন্ধু ছিল তারা হঠাৎ অবিশ্বাসী, হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। কত নিরীহ লোক মারা পড়েছে! বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়েছে! আর যারা এসব নিয়ে রাজনীতি করেছে তাদের কিছুই হয়নি। দেশ বিভাগ দেখেছি। দেশ বিভাগের অভিজ্ঞতা যেমন করুণ তেমন ছিল ভয়াবহ। বাংলাদেশ থেকে শুধুমাত্র আমরা চলে গেছি তাই নয়, পশ্চিম বাংলা থেকেও অনেকে এখানে এসেছে। এসব কারণে লাখ লাখ পরিবার বিপর্যস্ত হয়েছে। এসব ঘটনা মনের মধ্যে একটা ছাপ ফেলে দিয়েছে। এসব থেকে সব সময় নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করেছি, মানুষ কেন মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে? মানুষ যদি এক হয়ে থাকতে পারতো তাহলে পৃথিবীটা সত্যিই একটা সুন্দর জায়গা হতো। এই চিন্তা থেকেই লেখালেখি শুরু করেছি।

আহমেদ : লিটলম্যাগ সম্পর্কে আপনার ভাবনা কি?

সুনীল : লিটল ম্যাগাজিন সাহিত্যের জন্য একটা ভাল উদ্যোগ। বাংলা ভাষায় অনেক লিটল ম্যাগাজিন বের হয়। এটি নতুন লেখকদের অনুপ্রেরণা যোগায়। লেখালেখিতে আগ্রহী করে তোলে। আমিতো ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াই। বাংলা ভাষার মতো অন্যান্য ভাষায় এতো লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয় না।

আহমেদ : তরুণদের বই প্রকাশে প্রকাশকদের অনীহা সম্পর্কে বলুন?

সুনীল : মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে হলে প্রচুর সংগ্রাম করতে হয়। তরুণদেরকেও লড়াই করতে হবে। প্রথম জীবনে সবাইকেই সংগ্রাম করতে হয়। লড়াই-সংগ্রাম করতে করতেই একদিন তারা জিতবে। নিজেদের জায়গা করে নেবে। আস্তে আস্তে পাঠকদের ভালবাসা পেলে তবেই প্রকাশকরা তাদের বই প্রকাশে আগ্রহী হয়।

আহমেদ: তরুণ লেখকদের প্রতি সম্পাদকদের কেমন ভূমিকা থাকা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

সুনীল : তরুণ লেখকদের প্রতি সম্পাদকদের দৃষ্টিকোণ অবশ্যই ভাল থাকা উচিত। যে সম্পাদক তরুণ লেখকদের প্রতি সহানুভূতিপূর্ণ ও আন্তরিক ব্যবহার প্রদর্শন করেন না, তাকে একসময় পস্তাতে হয়। কারণ প্রবীণ বা খ্যাতিমান লেখকরা চিরকাল বেঁচে থাকে না; তরুণরা সেই স্থান পূরণ করে। তাছাড়া সম্পাদকদের আমার নিজের একটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তরুণ লেখক হিসেবে আমারও ছাপা হওয়া লেখার বিল দিতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছেলো।

তারা আরও বলেছিল, নতুন লেখকের নাম ছাপা হওয়াটাই বড়; কথাটা শুনে আহত যেমন হয়েছিলাম তেমনি দৃপ্তকণ্ঠে সম্পাদককে বললাম, নতুন আর পুরনোতে কী যায়- আসে, আপনার পত্রিকায় এক পৃষ্ঠা জুড়ে আমার গল্প ছাপা হয়েছে, সেই জায়গাটার দাম দিবেন না? তাহলে ছাপতে গেলেন কেন? তিনি পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে একটা পাঁচ টাকার নোট আমার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, যাও। বিদায় হও। আমিও সঙ্গে সঙ্গে সেই টাকা তার দিকে আরও জোরে ছুঁড়ে দিয়ে বললাম, আমি কি ভিখিরি নাকি? এ টাকা দিয়ে আপনার বাড়ির ছেলে-মেয়েদের চানাচুর খাওয়াবেন।

আহমেদ : এবার একটা ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। পশ্চিমবঙ্গের কবিতার ভাষা আর এখানকার ভাষার মধ্যে আপনি কোন পার্থক্য খুঁজে পান কি?

সুনীল : মৌলিক পার্থক্য কিছুই নেই। দু’একটা শব্দ এদিক-ওদিক আছে। ওই পর্যন্তই। কবিতার মৌল উপাদান বা কাব্যকৌশলের ক্ষেত্রে ভাষাগত ঐক্যের কারণে দুই বাংলার কবিতাতেই বেশকিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করি।

আহমেদ: দুই বাংলার কবি ও কবিতা সম্পর্কে মূল্যায়ন করুন।

সুনীল : দু’বাংলাতেই বেশ ভাল লেখা হচ্ছে। বাংলাদেশের লেখকদের লেখার মান বরাবরই ভালো। তাদের চিন্তা-চেতনায় সামাজিক দায়বদ্ধতার ছাপ সুস্পষ্ট। তাছাড়া একাত্তরের যুদ্ধের ভয়াবহতা এখানকার সাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছে। যুদ্ধপূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সাহিত্য মান বিবেচনা করলে পার্থক্যটি আরও সুস্পষ্ট হবে। কলকাতার চেয়ে বাংলাদেশের পত্রিকাগুলো অনেক যতœ নিয়ে সাহিত্য বিষয়ক লেখা প্রকাশ করে: এটা খুবই আশার কথা।

আহমেদ : একটি বিশেষ বিষয় সম্পর্কে আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি- ওপার বাংলায় রাষ্ট্র কি কবিদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়?

সুনীল : না। রাষ্ট্রের সঙ্গে কবি-সাহিত্যিকদের কোন অর্থনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে লেখকের জন্য যথাযথ মূল্যায়ন করে পুরস্কারের ব্যবস্থা আছে। সত্যিকারের লেখকরা সেই পুরস্কার পায়।

আহমেদ : আপনার প্রিয় কোন কবিতা সম্পর্কে পাঠকদের কিছু বলবেন কি?

সুনীল : আমার কোন কবিতাই আমার কাছে প্রিয় মনে হয় না, সবগুলোই বাজে লাগে।

আহমেদ: স্বল্প সময়ে লেখা আপনার কবিতা, গল্প, উপন্যাসের নাম বলবেন কি?

সুনীল : অনেক। কয়টি বলব। ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতাটি মাত্র কুড়ি মিনিটে লেখা। ‘কান্না’ গল্পটি দু’ঘণ্টায় লেখা। আর কিছু উপন্যাস আছে যা লিখেছি মাত্র একমাসে।

আহমেদ : লিখতে বেশি সময় লেগেছে এমন কবিতা, গল্প, উপন্যাসঃ.

সুনীল : আমার লেখায় বেশি সময় লেগেছে এমন বইয়ের মধ্যে রয়েছে- ‘দেখা হলো ভালবাসা’ (কবিতা)- যা লিখতে একমাস পার করেছি। ‘গরম ভাত অথবা নিছক ভূতের গল্প’ (গল্প)- লিখেছি দশ দিনে। আর উপন্যাস ‘পূর্ব-পশ্চিম’ লিখতে সময় লেগেছে দীর্ঘ চার বছর।

আহমেদ : আপনার কোন গল্প-উপন্যাসের চরিত্রে বাস্তবের বিখ্যাত কেউ আছেন কি?

সুনীল : হ্যাঁ, এটা ভাল প্রশ্ন করেছেন। আমার বিভিন্ন গল্প-উপন্যাসের কাহিনী লেখা হয়েছে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে। তার মধ্যে ‘নদী তীরে’ গল্পটি শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে নিয়ে লেখা। তাকে নিয়ে আমার লেখা একটি কবিতাও আছে। আর ‘পূর্ব-পশ্চিম’ উপন্যাসে বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবর রহমানকে তুলে এনেছি।

আহমেদ : চলতি পথে আপনার লেখার কোন অভিজ্ঞতাঃ

সুনীল : হ্যাঁ, চলতি পথে অনেক লেখা লিখেছি। তবে এর বেশিরভাগই ব্যক্তিগত চিঠিপত্র। এগুলো লিখেছি ট্রেনে বসে। আর ‘এথেন্স থেকে কায়রো’ কবিতাটি লেখা প্লেনে বসে।

আহমেদ : এমন কেউ কি আছেন যে বা যারা আপনার জীবনের প্রারম্ভ- পর্বে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিলেন?

সুনীল : জীবনের শুরুতেই মা-বাবার প্রভাবই বেশি ছিল। তাদের বাইরে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আমাদের পড়াশোনা রবীন্দ্রনাথ থেকেই শুরু। প্রভাব যদি বলেন; তাহলে বলব, আমার লেখক জীবনে রবীন্দ্রনাথের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। আমার মা বই পড়তে খুবই ভালবাসতেন। তার সাথে আমিও বই পড়তাম। বাবা শিক্ষার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ফলে বাড়িতে একটা শিক্ষার পরিবেশ ছিল। মূলত এসবই আমার লেখালেখিতে প্রভাব ফেলেছে।

আহমেদ : আপনার গল্প-উপন্যাস-কবিতার নায়িকাদের অনেকেই তো খুব পাঠকপ্রিয়। যেমন কবিতার নায়িকা নীরা, বরুণার কথাই ধরা যাক। এ নায়িকারা আপনার সুখী দাম্পত্যে কখনও কোন বিঘœ ঘটায় কি?

সুনীল : না, খুব একটা না। কয়েক দশকব্যাপী নীরা, বরুণারা বাংলার পাঠক সমাজে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছেন। এ নিয়ে আমার স্ত্রী কিংবা নিকটজনদের খুব যে কৌতূহল আছে তা নয়। তবে আমি নিজে মাঝে মাঝে আমার সৃষ্ট নায়িকাদের মিস করি।

আহমেদ : সাহিত্যিক না হয়ে অন্য কিছু হলেন না কেন?

সুনীল : কেন হলাম না সে উত্তর তো দেয়া মুশকিল। অল্প বয়সে নাবিক হবার শখ ছিল। এখন মনে হয়, গায়ক হতে পারলে বেশি তৃপ্ত হতাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিয়তি আমাকে সাহিত্যিকই করেছে।

আহমেদ: আপনার বিশ্বাসকে প্রভাবিত করেছেন এমন লেখক ও বইয়ের নাম বলবেন কি?

সুনীল : অনেক বই ও লেখকের নাম বলা যায়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে রবীন্দ্রনাথের ‘গীতবিতান’ আমার প্রিয়। সেটা আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করেছে। আর রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতাই আমার মুখস্থ। রবীন্দ্রনাথের কবিতার চেয়ে গানই আমায় বেশী টানে। অনেক গানের সুরে গুনগুন করি। আমাকে যদি কোথাও নির্বাসনে যেতে হয় তবে সঙ্গে নিতে ‘গীতবিতান’ অবশ্যই চাইবো। স্কুলজীবন শেষ করে যখন কলেজে পা রাখি, বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কে একটু ধারণা হতে থাকে; তখন ভাবতাম, শেক্সপিয়রের লেখা না পড়লে আমার জীবন ব্যর্থ! শেক্সপিয়রের লেখা আমি মন দিয়ে পড়েছি। এসব লেখা আমাকে সবসময় প্রভাবিত করেছে এবং এখনও করে চলেছে।

আহমেদ : সাহিত্যে নোবেল পাবার আশা করেন কি?

সুনীল : নোবেল নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। আর নোবেল নিয়ে বাঙালির আদিখ্যেতার কারণটাও বুঝি না। আপনারা বাঙালি পাঠকেরা আমার লেখা পড়েন, তাতেই আমি খুশি। নোবেল পুরস্কারের চেয়ে আপনাদের ভালবাসাই আমার কাছে মূল্যবান।

আহমেদ : আপনার জীবনের স্মরণীয় কোন ঘটনাঃ

সুনীল : জীবনের স্মরণীয় ঘটনা, আমার বিয়ের বছর। অর্থাৎ যে বছরটিতে আমি বিয়ে করি। আমি স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বিয়ে করিনি! এক সময় ভেবেছিলাম বিয়েই করব না। বিয়ে না করেও বেশ জীবন কাটানো যায়। কিন্তু হঠাৎই এক মেয়ের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক হয়। এক পর্যায়েই শুনলাম তার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধি। তবে এতে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। সেসব এখন শুধুই স্মৃতি। ধূসর-সোনালি স্মৃতি।

আহমেদ : আপনার জীবনদর্শন কি?

সুনীল : আমার জীবনদর্শন হচ্ছে- ‘মানুষ মানুষকে ভালবাসবে।’ সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষ তার ভালবাসাকে ভবিষ্যৎ পৃথিবী ও মানুষের জন্য রেখে যাবে।

আহমেদ : আমাদের বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আপনার উপলব্ধি জানাবেন কি?

সুনীল : বাংলা ভাষার অধিকার অর্জন বাঙালির জীবনে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। অনেক লড়াই-সংগ্রামের পর বাঙালি জাতি তার নিজেদের অধিকার অর্জন করেছে। বায়ান্নর পথ ধরে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। তারপর বিজয়। এই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। এই কষ্টার্জিত স্বাধীনতা যেন বিনষ্ট না হয়। বরং স্বাধীন বাংলাদেশ সামনের পথে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যাবে- এটাই আমার আকাঙক্ষা।

আহমেদ : বাংলা কবিতার অর্ধশত বছরের একটি শক্তিশালী স্রোত ‘কৃত্তিবাস’ হতেই প্রবাহিত হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আপনি বিষয়টি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

সুনীল : এটা পাঠকের বিচার। কৃত্তিবাসের কি অবদান বা আমরা কি করেছি এটা আমার মুখ দিয়ে কোনদিনই বলবো না। পাঠকদের, সমালোচকদের বিচার কি হয়েছে না হয়েছে আমি জানলেও বলবো না।

পৃথিবীতে সবচেয়ে পুরনো কবিতা পত্রিকার নাম হচ্ছে ‘পয়েট্রি’। সেটা আমেরিকার শিকাগো শহর থেকে ১৯১২ সালে প্রথম বের হয়। এর মূল্যায়নের সঙ্গে সমান্তরালভাবে আমাদের পত্রিকার মূল্যায়নও করা যায়। অন্তত এর বিকাশ ধারাবাহিকতার দিক দিয়ে বিবেচনা করলে।

আহমেদ : ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মুক্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা কি বলে মনে করেন?

সুনীল : ব্যক্তি স্বাধীনতা বা মুক্তির পথে বাধা হচ্ছে ‘কুসংস্কার’! অনেক পারিবারিক সংস্কার থাকে। সেই কুসংস্কার থেকে মুক্ত হতে অনেক সময় লাগে। নারী-পুরুষের যে তফাৎ বিভিন্ন ধর্ম করে রেখেছে, পরিবার থেকে যেগুলো আরোপ করা হয়েছে, স্বামীরা যেগুলো স্ত্রীদের ওপর আরোপ করে এসব থেকে যদি মুক্তি না পাওয়া যায়, মনের দিক থেকে যদি মুক্তি পাওয়া না যায় তাহলে উন্নতি হবে না। এই কুসংস্কার থেকে মুক্তি পাওয়াটাই মূল কথা বলে মনে করি।

আহমেদ : জীবনে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কখনো যখন দ্বিধায় ভোগেন তখন কার মতামত আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ঠেকে?

সুনীল : জীবন চলার পথে আমি অধিকাংশ সময় নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়েছি। আমি খুব একটা পারিবারিক প্রাণী ছিলাম না। অল্প বয়সেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজের ইচ্ছেমত কাজ করেছি। এখন তো বিবাহিত জীবনে। তাই অনেক সময় আমার স্ত্রীর মতামত নিতে হয়। সিদ্ধান্ত জানতে হয়। যেমন এখানে আসার ব্যাপারে আমার স্ত্রীর মতামতটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমি নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।

আহমেদ : সেই সময়, প্রথম আলো, পূর্ব-পশ্চিম এর মতো ট্রিলজি আমরা আপনার কাছ থেকে পেয়েছি; যেখানে ইতিহাস, সমাজ, দেশভাগ, মন্বন্তর এবং এসবের সাথে আপনার ব্যীক্তজীবনের লিপ্ততা এক নতুন কথাসাহিত্যিক মাত্রায় উন্মোচিত হয়েছে। এ ধরনের বিস্তৃত পরিসরে নতুন কোন কাজ কি করছেন?

সুনীল : আমার একটা ইচ্ছে আছে। আমি বইপত্র জোগাড় করছি। বাংলাদেশের ইসলামের আগমন এবং সুফি ধর্মের প্রভাব, হিন্দুদের মধ্যে কুসংস্কার এবং হিন্দুদের মধ্যে একশ্রেণীর লোকের আরেক শ্রেণীর লোকের উপর অত্যাচার যে সময়টায় ছিল সেই সময়টা নিয়ে লেখার একটা ইচ্ছা আছে। বাংলা অঞ্চলের নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিরোধের একটা বিশ্বস্ত চেহারা উপন্যাসের পরিসরে ধারণ করার চেষ্টা করছি। সম্প্রতি প্রকাশিত মনের মানুষ উপন্যাসে আমার এ চেষ্টার একটা নজির হয়তো আপনারা দেখে থাকবেন।

আহমেদ : সাংবাদিকতা থেকে শুরু করে অনেক বিচিত্র পেশায় কাজ করার অভিজ্ঞতা আপনার কাছে। বলা হয় সাংবাদিকতা সাহিত্যিকের পয়লা নম্বর শত্রু। এ বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতাটা জানতে চাচ্ছি।

সুনীল : আমি সত্যিকারভাবে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলাম না। তবে সংবাদপত্রের সাথে জড়িত ছিলাম। আমি হয়ত পুস্তক পরিচিতি বিভাগের সম্পাদক ছিলাম, কবিতা বিভাগের সম্পাদক ছিলাম- যাকে বলে বিভাগীয় সম্পাদক। কেজো সাংবাদিকতা বলতে যা বুঝায় তার সাথে আমার তেমন যোগাযোগ হয়নি। তাই হয়তো আমার অভিজ্ঞতাটা খুব ভয়াবহ নয়।

আহমেদ : সাম্প্রতিক পশ্চিম বাংলায় হিন্দির ক্রমবর্ধমান দাপটকে লেখক-শিল্পীরা কিভাবে দেখছে বা মোকাবেলা করছে?

সুনীল : সামগ্রিকভাবে পশ্চিম বাংলাতে হিন্দির যে খুব একটা প্রভাব আছে তা নয়। তবে শহরের ছেলে-মেয়েরা একটু-আধটু হিন্দি ভাষা ব্যবহার করছে। আজকাল তো ঢাকাতেও ছেলে-মেয়েরা টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল দেখছে। তবে হিন্দি ভাষার কোন সামগ্রিক প্রভাব এখনো পশ্চিমবাংলায় পড়েনি। আমাদের প্রধান দ্বন্দ্ব হচ্ছে ইংরেজির সঙ্গে। এটা ঢাকাতেও আছে।

অল্প-বয়সী ছেলেমেয়েরা এখন ইরেজি শিখতে বাধ্য। ইংরেজি শিখতে গিয়ে তারা আর বাংলাটা শিখছে না। বাংলাদেশে তবুও বাংলাটা বাধ্যতামূলক। পশ্চিম বাংলায় তো ছেলে-মেয়েরা বাংলা কম শিখে। তবে গ্রামে এখনো বাংলা শেখে। বিশ্বায়নের সর্বগ্রাসী দাপটের বিষয়টি মাথায় রাখলে আমরা এ ব্যাপারটি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবো। আমাদের জীবনযাপনের সর্বক্ষেত্রে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যেভাবে নাক গলাচ্ছে তা দুই বাংলার ভাষার ক্ষেত্রেও আঘাত হানছে। লক্ষ্য করে দেখবেন অশুদ্ধ-বিদেশি ভাষারীতির বিজ্ঞাপনচিত্রের একটি অশুভ প্রভাব নতুন প্রজন্মের মাঝে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে যা ভাষার ভবিষ্যতের জন্য একটি অশনি সংকেত। তাই সমস্যাটিকে শুধু ভাষাগত না ভেবে অবশ্যই রাজনৈতিক-সাম্রাজ্যবাদী বিষয় হিসেবে দেখতে হবে।

আহমেদ : একটা বিতর্ক কিছুদিন যাবৎ চলছে। কেউ বলছেন, পশ্চিম বাংলার সাহিত্য বাংলাদেশের তুলনায় অনেক সমৃদ্ধ। আবার কেউ ভবিষ্যদ্বাণী করছেন যে, ঢাকাই হবে বাংলা সাহিত্যের পরবর্তী রাজধানী। এই ধরনের বিতর্কের প্রেক্ষিতে বাংলা ভাষার একজন লেখক হিসেবে আপনার মতামত বা অবস্থান কি?

সুনীল : সাহিত্য তো শ্রেষ্ঠত্ব-তুচ্ছত্বের বিষয় নয়। অনুভূতির বিষয়। বাংলাদেশে এখন লেখক- কবির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। পশ্চিম বাংলায় তো আগে থেকেই ছিল। এখন যদি দুই ধারায় চলে তাহলে মন্দ কী? যেহেতু আমরা অভিন্ন ভাষার সন্তান। তবে একটা ধারা মুছে যাবে, আরেকটা ধারা থাকবে এটার কোন মানে হয় না। আবার কেউ কারো উপরে যাবে এটারও কোন মানে হয় না। আমার মতে, বাংলাদেশে যেমন ভাল লেখা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গেও ভাল লেখা হচ্ছে। তবে প্রকাশনার গুরুত্বটা মনে হয় বাংলাদেশে বেড়ে যাবে। কিন্তু এ নিয়ে কোন অসাহিত্যিক লড়াই সুযোগ সন্ধানীদেরই জোর বাড়াবে। তাই দুই বাংলার লেখকদেরই এ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

আহমেদ : ক্রমে ক্রমে আমাদের মাঝে পাঠাভ্যাস হ্রাস পাচ্ছে। তা থেকে উত্তরণের উপায় কি?

সুনীল : অভ্যাস কমে যাচ্ছে মানে কি! দেখা যায় ৬০ ভাগ লোক কোন কিছুই পড়ে না। অবশ্যই সবাই তো আর বই পড়বে না। শতকরা যদি ২৫ ভাগ লোক বই পড়তো, তাহলেও অনেক হয়ে যেত; অন্তত আমাদের জনসংখ্যার দিক থেকে। তার থেকেও যদি কমে যায় তাহলে নিশ্চয়ই ভয়ের কথা। উত্তরণের তো আর সোজাসাপ্টা কোন উপায় নেই। মানুষের জীবনযাপনের জটিলতা বই পড়ার সময়টুকু কেড়ে নিচ্ছে। তার উপর তথ্যপ্রযুক্তির সহজপ্রাপ্যতাও বইকে যেন ক্রমশ মূল্যহীন করতে চাচ্ছে। কিন্তু বই অনন্ত যৌবনা। মানুষকে তার নিজের প্রয়োজনেই, তার নিজের ক্ষুধা মেটাতেই বইয়ের কাছে আসতে হবে।

আহমেদ : আপনি জন্মগতভাবে বাংলাদেশের সন্তান। কিন্তু সাহিত্যিক জীবন পুরোটাই বলা যায় পশ্চিমবঙ্গে অতিবাহিত করেছেন। আজ বাংলা ভাষাভাষীদের প্রিয় এক লেখক আপনি। নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশ নিয়ে কি স্বপ্ন দেখেন?

সুনীল : হ্যাঁ, আমি স্বপ্ন দেখি। আমি যখন পঞ্চান্ন বছর পরে বাংলাদেশে এলাম এবং সেই বিষয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম। সেই লেখাটার নাম হচ্ছে ‘মাটি নয় মানুষের টানে’। ঐ যে মাটিটা আমি ছেড়ে এসেছি সেই মাটির জন্য আমার ওরকম টান আর নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষের ব্যবহার দেখে এখনও অভিভূত হতে হয়। সাধারণ মানুষ এখনও ভালবাসে আমাকে। কাজেই আমাদের দুই বাংলার মধ্যে যদি ভালবাসার একটা সম্পর্ক থাকে সেটাই যথেষ্ট। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি সীমান্তবর্তী বিভিন্ন ক্যাম্পে ঘুরে বেড়িয়েছি, মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজ-খবর নিয়েছি।

তাছাড়া বাংলাদেশের অনেক অনেক গল্প আমি আমার মাসি, পিসীদের মুখ শুনেছিলাম। শুনেছিলাম জমির কথা, মাটির কথা, জামগাছের কথা এবং পুকুর ভর্তি মাছের কথা। আমি পরবর্তীতে দৃশ্যগুলো দেখতে চাই না। সেইগুলো কল্পনায় রাখতে চাই। জন্মভূমি সম্পর্কে যেকোন কথাই খন্ডিত হতে বাধ্য। কারণ নাড়ির টান নিয়ে কোন বাগাড়ম্বর বা তত্ত্ব কথা চলে না। শুধু আমার ভালবাসার কথাই আরও একবার আপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে জানাতে চাই।
আহমেদ : দীর্ঘ সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সুনীল : আপনাকেও।

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

Category: এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ

About the Author ()

Leave a Reply