• ৭ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,21 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

মাননীয় নেত্রীদ্বয়, শুধু মাত্র ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য দেশকে আরেকটি রক্তপাত ও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবেননা প্লিজ ।

| সেপ্টেম্বর 21, 2013 | 0 Comments
সম্পাদকীয়:মাননীয় নেত্রীদ্বয়, শুধুমাত্র ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য দেশকে আরেকটি রক্তপাত ও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবেননা প্লিজ ।  
একনদী রক্ত ঢেলে দিয়ে এই জাতি যে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলো তার প্রকৃত স্বাদ কি দেশের সাধারন জনগণ উপভোগ করতে পেরেছে ? না পারেনি ।যুগে যুগে শাসক শ্রেনী তা জনগণকে উপভোগ করতে দেয়নি । যার ফলে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতি দশকে জাতিকে মুখোমুখি হতে হয়েছে একটি করে রাজনৈতিক মহাদুর্যোগের । যে দুর্যোগের ভয়াল থাবায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র হয়েছে বারবার বিপন্ন, জাতি হারিয়েছে তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, বারবার বাংলার লাল সবুজ পতাকা হয়েছে তাজা রক্তে রঞ্জিত, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ হয়েছে ভূলুন্ঠিত, বিপন্ন হয়েছে মানবতা আর হরণ হয়েছে গণমানুষের অধিকার । তারপরও কি ক্ষান্ত হয়েছে শাসক শ্রেনী ? না, বরং পর্যায়ক্রমে কঠিন থেকে কঠিনতম পরিস্থিতির দিকে জাতিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে বারবার ।শিক্ষক, চিকিৎসক ও শ্রমিক সহ সমাজের প্রতিটি গোষ্ঠীকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে।আমলা, পুলিশ সহ প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দলীয়করণ করেনি স্বাধীন বাংলাদেশে এমন সরকার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে।    

১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে প্রথম হুমকির মুখে ফেলে আওয়ামীলীগ । পরবর্তীতে ব্যক্তিতন্ত্রের আড়ালে গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের যে স্বার্থান্বেষি  কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিলো তার ভয়াল থাবা বাংলাদেশে  এখনও দাপটের সাথে বিদ্যমান ।৭৫ পুর্ববর্তী গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়ার দায় যেমনি আওয়ামীলীগকেই নিতে হবে তেমনি ৭৫ পরবর্তী রাজনৈতিক দুর্যোগের দায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির এতে কোন সন্দেহ নেই ।

জাতির দুই শ্রেষ্ঠ নেতাকে হারিয়ে দেশ যখন নেতৃত্ব শূণ্য তখন কৌশলে সামরিক শক্তির উপর ভর করে জাতির ঘাড়ে চেপে বসে স্বৈর শাসক এরশাদ। গণতন্ত্রকে বুটের নিচে চাপা দেয়ার ষোল কলা পূর্ণ করে ৯ বছর মূলত দেশকে জিম্মি করে রাখে ।তারই শাসন আমলে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্রগ্রামে শেখ হাসিনার জনসভায় ২৪ জনকে গুলি করে হত্যা করে । ১৯৮৯ তে গণঅভ্যূত্থান অত:পর জন্ম হয় নূরহোসেন দিবসের ।যার বুকে পিঠে লিখা ছিলো –“স্বৈরাচার নিপাত যাক গণতন্ত্র মুক্তি পাক“ । নূরহোসেন তোমাকে লাল সালাম । এমন সাহসী সন্তান পৃথিবীর বুকে খুব কম জাতির ভাগ্যেই জোটে ।

তারপর বাংলার ইতিহাসের সেই বিরল ঘটনা স্বৈরশাসক হটাতে দুই নেত্রীর এক টেবিলে বসা ।গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের শেষ চেষ্টা ।সেই যাত্রায় দুই নেত্রী সফল এবং জাতিকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তার হারানো গণতন্ত্র । জাতি আজও শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করে দুই নেত্রীর সেই অবদানের কথা ।

৯১-এর নির্বাচন । বিএনপির জয় । স্বৈরশাসকের পতন । আবার গণতান্ত্রিক পথ চলা শুরু  । কিন্তু হায় কপালে যাদের দুঃখ লেখা সুখ তাদের বেশীদিন সইবেনা এটাইতো নিয়তি ।আবারো হোঁচট ! ১৯৯৫-৯৬ সালে তত্ত্বাবদায়ক সরকারের দাবি না মেনে , ১৯৯৬ সালে একতরফা নির্বাচন করে গণতন্ত্রকে আবারও হুমকির মুখে ঠেলে দেয় বিএনপি ।আওয়ামীলীগের চরম আন্দোলনের মুখে ধিক্কার ও নিন্দা কুড়িয়ে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা মেনে নেয় । অতঃপর নির্বাচন এবং আওয়ামীলীগের জয় ।আবারও গণতন্ত্রের পথে হাটার চেষ্টা । যার ফলশ্রুতিতে ২০০১ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন এবং বিএনপির বিজয় । স্বাধীন বাংলাদেশে এটিই মনে হয় একমাত্র শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা হস্তান্তর ।যার প্রশংসা আওয়ামীলীগ পেতেই পারে ।

বিএনপির ২০০১-২০০৫ মেয়াদে বাংলাদেশ দূর্নীতিতে  বারবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানের মুকূট অর্জন করলেও দেশ গণতান্ত্রিক পথেই হাঁটছিলো ।কিন্তু বিধি যাদের বাম , তাদের উদ্ধার করবে কে ? আর তাই ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নিজেদের মতো করে সাজাতে গিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আরেকটি মহাদুর্যোগ নিয়ে আসে বিএনপি । যারফলে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীনের  সেনা সমর্থিত সরকার সংবিধান বহির্ভূত ভাবে প্রায় দুই বছর দেশ পরিচালনা করে । তবে বড় দুইদলের নেতাদের  দূর্নীতি আর হরিলুটে অসহায় হয়ে সাধারণ জনগণ ঐ সেনাসমর্থিত  অগণতান্ত্রিক সরকারকে সমর্থন দিলেও শেষ পর্যন্ত তারা তাল সামলাতে পারেনি । ঐ দুইবছর সাধারণ মানুষের চেয়েও রাজনীতিবিদদের জন্যই ছিল চরম সংকটের । মূলত স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এই রকম সংকটময় সময় রাজনীতিবিদরা খুব কমই অতিবাহিত করেছেন । যার খেসারত বিএনপি এখনও দিয়ে যাচ্ছে ।

২০১৩-১৪ বাংলার গণতন্ত্রের আকাশে আবারও মেঘের ঘনঘটা । দূর্যোগের ধূসর আলোয় ফ্যাকাসে হয়ে আসছে গণতন্ত্রের লাল সবুজ আভা । আওয়ামীলীগের মত একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দল , যার স্বাধীনতা সংগ্রামে অনস্বীকার্য অবদান রয়েছে, রয়েছে ২০০১ সালে  শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের কৃতিত্ব , সেই দল কেন বিএনপির দেখানো ভুল পথে হাঁটবে ?  আরেকটি  ওয়ান ইলেভেনের জন্ম দিয়ে কেন কাঁধে তুলে নিবে কলঙ্ক আর ধিক্কার ? সেই প্রশ্ন রইল আওয়ামীলীগের নীতি নির্ধারকদের কাছে ।

একনেত্রী বলছেন, সংবিধান থেকে একচুলও নড়বেন না, অন্যনেত্রী বলছেন চুল বাতাসে উড়ে যাবে । আমাদের গণতন্ত্র এখন  চুলাচুলিতে গিয়ে ঠেকেছে । এখনই থামতে হবে । ভাবতে হবে গণতন্ত্রের কথা । কারণ চুলাচুলি গিয়ে কিলাকিলিতে ঠেকলে আবারও বিপন্ন হবে গণতন্ত্র, লুন্ঠিত হবে গণমানুষের অধিকার ।সংবিধান থেকে নড়াচড়া নিয়ে নজরুলের কবিতার দুটি লাইন মনে পড়ছে- ”পুজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল  মূর্খরা সব শোন মানুষ এনেছে গ্রন্থ , গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোন । তাই মানুষের প্রয়োজনে , গণতন্ত্রের প্রয়োজনে গ্রন্থ বা সংবিধান সংশোধিত হতে পারে ।অথবা সংবিধানে নেই এমন যেকোন পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হতে পারে এবং তা আলোচনা সাপেক্ষে সংবিধানে সংশোধন করা যেতে পারে ।শুধু প্রয়োজন স্বদিচ্ছা এবং দেশপ্রেম।

সরকারীদলকে যেমন আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে, তেমনি বিরোধীদলকেও উদার ও সমঝোতা মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে । দেশটি একটি অগণতান্ত্রিক সরকারের কাছে গেলে যে মহাদুর্যোগ নেমে আসবে তাতে গণতন্ত্র ভুলুন্ঠিত হবার পাশাপাশি বড় দুই দলকেই সবচেয়ে বেশী খেসারত দিতে হবে । তাই গণতন্ত্র ভুলুন্ঠিত হয়ে বুটের তলায় আর অস্ত্রের মুখে জিম্মি হওয়ার আগেই  দুই নেত্রীকে একটি গ্রহণযোগ্য সমঝোতা ও সিদ্ধান্তে আসতে হবে । শুধুমাত্র ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য দেশকে আরেকটি মহাসংকটে ফেলে জাতি ও গণতন্ত্রকে আরেক ধাপ পিছিয়ে দেয়ার অভিশাপ বড় দল দুটির কেউই নেবেনা, জাতি এটাই প্রত্যাশা করে ।

Category: সম্পাদকীয়

About the Author ()

Leave a Reply