বৃটেনে ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় মেয়র লুৎফর ৫৩ তম
ইউরোবিডি কমিউনিটি সংবাদ: বৃটেনের শীর্ষ পত্রিকা ডেইলি টেলিগ্রাফে এই সময়ের সেরা ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হয়েছেন টাওয়ার হ্যামলেটস-এর প্রথম নির্বাহী মেয়র লুতফুর রহমান।
৩য় বারের মতো তিনি এই তালিকায় এলেন এবং ১৫ জনকে ছাড়িয়ে জায়গা করেছেন ৫৩ তম স্থানে। বৃটেনের ১ম এথনিক কমিউনিটির নির্বাচিত মেয়র লুতফুর রহমান টপ হান্ড্রেডস মোস্ট ইনফুয়েন্সিয়াল লেফট উইংগার-এ একজন নির্বাচিত মেয়র হিসেবে গত ২০১১ সালে যুক্ত হন ৭৮তম স্থানে, ২০১২ সালে তিনি ১০জনকে টপকে আরো এগিয়ে যান। নিশ্চিত করেন ৬৮ তম স্থান। ক্ষমতার উত্থান পতনের উপর নির্ভর করে তৈরী করা এই তালিকায় সাবেক ফরেন মিনিষ্টার ডেইবিড মিলিবান্ড এবার যেমন জায়গা পেয়েছেন ৭৬-এ, ঠিক একইভাবে দু বছরে ২৫ জনকে ছাড়িয়ে মেয়র লুতফুর ৭৮ থেকে ৫৩। তালিকায় মূলত জাতিয় নেতাদের প্রাধান্য রয়েছে এবং বৃটেনের নির্বাহী পদ্ধতির ১৩টি কাউন্সিলের নির্বাচিত মেয়রের মধ্য থেকে রয়েছেন শুধু একজন, তিনি লুতফুর রহমান।
তবে এবার প্রথমবারের মতো তালিকায় অন্তভূক্ত হয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটি কাউন্সিলের লিডার (র্যাংকিং ৫১) এবং বার্মিংহাম সিটি কাউন্সিল লিডার (র্যাংকিং ৬১)।
মেয়র লুতফুর হচ্ছেন তালিকার থাকা একমাত্র বাংলাদেশী অরিজিন। তবে হোম এফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটি চেয়ার কিথবাজ এমপি ও সাদিক খান এমপিসহ সামান্য কজন বিএমই বা অশ্বেতাংগ রয়েছেন তালিকায়। আর ব্লেয়ারের আমল থেকে লেবার পার্টিকে সবচেয়ে বেশী ডোনেশন প্রদানকারী বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী লর্ড সেইন্সবারী এবার প্রথম বারের মতো তালিকায় (র্যাংকিং ৪৬) এসেছেন। তালিকায় স্থান পাওয়া একমাত্র বাংলাদেশী অরিজিন ব্যক্তিত্ব মেয়র লুতফুর রহমান সম্পর্কে ডেইলি টেলিগ্রাফে এবারও উল্লেখ করা হয়, খুবই সক্রিয় একজন কমিউনিটি লিডার, যিনি প্রথম বারের মতো টাওয়ার হ্যামলেটস-এ মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তাকে একজন সফল মেয়র হিসেবে দেখা হচ্ছে,যিনি এলাকায় বিপুল পরিবর্তন এনেছেন।
নির্বাহী মেয়র লুতফুর যা বলেন..টেলিগ্রাফে তালিকাভূক্তির ব্যাপারে নির্বাহী মেয়র বলেন, সাবেক মন্ত্রী টেসা জাওয়েল বা ডেইবিড মিলিবান্ড এর মতো নেতাদের উপর যাওয়ার মতো কাজ করেছি কী না-এটা আমি বলতে পারবো না। তবে এটা বলতে পারি এই চরম ফান্ডিং কার্টের সময়ে আমরা উদাহরন সৃষ্টি করেছি। আমাদের বিকল্প এডুক্যাশন এলাউন্স,ইউনিভাসিটি গ্রান্ট,ফ্রি স্কুল মিল এর ব্যাপারে জাতিয় ভাবে আলোচনা চলছে। এছাড়া আমরা লন্ডন লিভিং ওয়েজ চালু করেছি এবং দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সোস্যাল হাউজ নির্মনা করার স্বীকৃতি পেয়েছি। বুধবার লেবার পার্টি কনফারেন্সকে কেন্দ্র করে এই তালিকা প্রকাশ পায় এবং লেবার মনা বা বাম মনারাই এতে স্থান পান। লেবার না হয়েও প্রগতিশীল লেবার এজেন্ডা নিয়েই কাজ করছেন নির্বাহী মেয়র লুতফুর। এ কারনে নানাভাবে মিডিয়ায় আলোচিত হন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে বিবিসি-এর সানডে পলিটিক্স প্রোগ্রামে একটি বিশেষ রিপোর্টে কিছু উদাহরণ সহ বলা হয়েছে, অন্য লেবার কাউন্সিল কিছু প্রগতিশীল লেবার এজেন্ডা বাস্তবায়ন না করলেও করছেন মেয়র লুতফুর। একই ভাবে গার্ডিয়ানসহ মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় তার কার্যক্রমের প্রশংসা করা হয়েছে।
ক্ষমতার উত্থান পতন:২০০৯ সাল থেকে এই তালিকা প্রকাশ শুরু হয় এবং প্রতি বছরের তালিকা দেখলেই পরিস্কার হয়ে যায়-রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার উত্থান পতনের দিকটি। এক সময়ে তালিকার শুরুর দিকে থাকা ততকালিন প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন গেলো বছর কোনো মতে ১০০ তম স্থানে এবং টনি ব্লেয়ার ২৩তম স্থানে জায়গা করে নিলেও এ বছর তারা বাদ পড়েছেন। আর টেলিগ্রাফের তালিকায় ১ম থাকা এডমিলিবান্ড কে প্রভাবশালী নেতা এবং ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখা হলেও তার সংগে চরম বিতর্ক ও সমালোচনায় জড়িয়ে পড়া ইউনাইট ইউনিয়ন লিডার লেন মেক কাসকি ৪র্থ থেকে ৩য় স্থানে চলে এসেছেন। সাবেক ফরেন সেক্রেটারী ডেইবিড মিলিবান্ড ৪৭ জনের পেছনে পড়ে জায়গা পেয়েছেন ৭৬-এ। টেলেগ্রাফের মতে আগামীর চ্যান্সেলর হিসেবে বিকল্প পথ দেখাতে পারেনি এডবলস। তার পরও ২য় অবস্থানটি ধরে রেখেছেন প্রভাবশালী ১০০ জনের মধ্যে। বৃটেনের রাজনীতিক, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ক্যাম্পেইনার ও বুদ্ধিজীবি ইত্যাদি নানা পর্যায়ের বিশেষ প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছেন এমন ব্যক্তিত্বদের এই তালিকায় অন্তভূক্ত করা হয়েছে। তালিকায় ডেইলি মিরর, গার্ডিয়ান, নিউস্টেটসম্যান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও বিবিসির এডিটর বা সিনিয়র সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রয়েছেন। রয়েছেন শীর্ষ ট্রেড ইউনিয়নিষ্টরা। তবে এসব নামেও অনক যোগ বিয়োগ হয়েছে।
এক নজরে লুতফুর রহমান :আর ২০১০ সালে ২১ অক্টোবর-এ মেয়র নির্বাচন-এ লুতফুর রহমানের বিজয়ের মধ্যদিয়ে বৃটিশ বাংলাদেশীদের জন্য এক অনন্য ইতিহাস রচিত হয়। ১ম বাংলাদেশী নির্বাচিত নির্বাহী মেয়র হিসেবে ইতিহাসের খাতায় নাম লেখান বাংলাদেশী অরিজিন লুতফুর রহমান। সারা বৃটেনে থাকা আরো ১৩জন নির্বাচিত মেয়রের মধ্যে তিনি ছাড়া বাকী সকলেই শ্বেতাংগ। এছাড়া এই নির্বাচনের মধ্যেদিয়েই সত্যিকারের পিপুলস মেয়রের খ্যাতিপান লুতফুর। বর্তমানে তার দায়িত্বে রয়েছে ১.২বিলিয়ন পাউন্ড বাজেট এবং ১১ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী। বৃটিশ বাংলাদেশী পাওয়ার হান্ডেড-লিস্টে ২০১২ সালে তিনি রাজনীতিক ক্যাটাগরিতে শীর্ষে ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ ক্যাটারাস এসোসিয়েশন(বিসিএ)এর ৫০ বর্ষ অনুষ্ঠানে তাকে বিসিএ অনার এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এশিয়ান ভয়েস পেপারও তাকে লোকাল গর্ভমেন্ট এওয়ার্ড প্রদান করেছে। নির্বাচিত এক্সিকিউটিভ মেয়র হিসেবে ফুল টাইম কমিটম্যান্টে যাবার আগে লুতফুর রহমান ছিলেন একজন প্রখ্যাত ফ্যামিলি এন্ড চাইলড প্রটেকশন ল স্পেশালিস্ট ও সিনিয়র সলিসিটর। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দু টার্ম ছিলেন লেবার কাউন্সিলের লিডার। লুতফুর রহমান পারিবারিক জীবনে বিবাহিত এবং দু সন্তানের জনক। তিনি চার বছর বয়সে এদেশে আসেন সিলেটের বালাগনজের সিকন্দর পুর গ্রাম থেকে। ১৯৫৭ সাল থেকে তার পিতা বৃটেনে বসবাস করছেন।
নির্বাহী মেয়রের শীর্ষ ১০ সাফল্য : ২০১০ সালে নির্বাহী মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার পর সাফল্যের কিছু অংশ নিয়ে টপ টেন এচিভম্যান্ট তালিকা প্রকাশিত হয়েছে:
১. হাউজিং : এ দেশের সেরা গত বছর দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩ হাজারের বেশী ঘর নির্মিত হয়েছে। কাউন্সিলের মালিকানাধীন ঘরগুলোর কিচেন ও বাথরুম নতুনভাবে তৈরী করতে ১৬৮ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়াও ১ মিলিয়ন পাউন্ডের ‘প্রিভেন্টিং হোমলেসনেস ফান্ড’ গঠন করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সংখ্যক সোস্যাল হাউজ নির্মান করে ১৬ মিলিয়ন পাউন্ড সরকারী বোনাস মিলেছে।
২. এডুকেশনে শীর্ষ দশ: শিক্ষা খাতে, স্কুল ভবন নির্মাণে ও সংস্কারে ৩৮০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে মেয়র্স এডুকেশন এওয়ার্ড, ১.২৬ মিলিয়ন পাউন্ডের মেয়র্স ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস এবং ২.৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগে রিসেপশন ও ইয়ার-ওয়ান এর বাচ্চাদের জন্য ফ্রি স্কুল ডিনার। এছাড়া সারাদেশে বন্ধ করে দেয়া এডুকেশন মেনটেইনেন্স এলাউন্স (ইএমএএ) বিকল্প ফান্ডিং-এ চালু করা হয়েছে। আমাদের স্কুলগুলো স্থান করে নিয়েছে দেশের সবচেয়ে ভালো ১০টি কাউন্সিল স্কুলের তালিকায়।
৩. জব : বাসিন্দাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি: স্থানীয় জনগণের জন্য ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২,৭০০ এর বেশী চাকুরি নিশ্চিত করা হয়েছে, অলিম্পিক আসর চলাকালে ৩,৯৫০টি চাকুরি নিশ্চিত করা হয়েছে, তরুণদের জন্য ৩৭৫টি এপ্রেন্টিশিপ এবং ১০০০ জনের জন্য প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
৪. স্যোশাল কেয়ার : বিপদে মানুষের পাশে.. সমাজে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারী মানুষের জন্য ১৭ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে ফ্রি হোমকেয়ার সেবা অব্যাহত রাখা রয়েছে। টাওয়ার হ্যামলেটস দেশের একমাত্র কাউন্সিল যেখানে এই সেবা দেওয়া হচ্ছে। কাউন্সিল ট্যাক্স পরিশোধের ক্ষেত্রে ৩৫ হাজার মানুষকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
৫. ফেইথ ফান্ড : কবরস্থান ফেইথ বিলডিংস সাপোর্ট স্কিমের আওতায় ৩ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। নতুন কমিউনিটি ব্যারিয়েল সাইট (কবরস্থান) এর ব্যবস্থা করতে ৩ মিলিয়ন পাউন্ডের ফান্ড গঠন করা হয়েছে।
৬. কমিউনিটি সেইফটি : নিরাপদ টাওয়ার হ্যামলেটস অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়োগ ও টাওয়ার হ্যামলেটস এনফোর্সমেন্ট অফিসার নিয়োগে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে কাউন্সিল। ‘ডিলার-এ-ডে’ কৌশল বাস্তবায়ন করে ৩৬৫ জন ড্রাগ ডিলারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
৭. ইয়ুথ সার্ভিস : নতুন আইডিয়া স্টোর ইয়ুথ সার্ভিস খাতে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং সাড়ে ৪ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে নির্মিত নতুন একটি আইডিয়া স্টোর খুলে দেওয়া হয়েছে।
৮. কোহেশন: কমিউনিটি আরো ঐক্যবদ্ধ : কমিউনিটিগুলোর মধ্যকার ঐক্য বজায় রাখা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজ। বর্ণবাদ ও অসহিঞ্চুতার বিরুদ্ধে আমাদের চলমান যুদ্ধে সকল কমিউনিটিকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করেছি।
৯. থার্ড সেক্টর : ৪০০ সংগঠনকে ফান্ডিং আমাদের বারার ৪শতাধিক কমিউনিটি অর্গানাইজেশন-এর মধ্যে ৮ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ করা হয়েছে।
১০. এনভায়রনমেন্ট: ‘কীপ ব্রিটেইন টাইডি এওয়ার্ড’ : বারার রাস্তা-ঘাট পরিচ্ছন্ন রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল পেয়েছে ‘কীপ ব্রিটেইন টাইডি এওয়ার্ড’ আর স্থানীয় ৮টি বড় পার্কের জন্য অর্জন করেছে ‘গ্রিন ফ্যাগ এওয়ার্ড’।
প্রভাবশালী ১০০ রাইটউইংগার: উল্লেখ্য টেলিগ্রাফ সমান ভাবে প্রভাবশালী ১০০জন রাইটউইং-এর একটি তালিকা প্রকাশ করে। ২০১২ সালের তালিকা অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেবিড ক্যামেরুন শীর্ষে রয়েছেন। লেফট বা বাম তালিকার মতো রক্ষনশীলমনা এই তালিকায়ও রাজনীতিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব স্ট্রাটিজিস্ট এবং থিংক ট্যাংক ডিরেক্টররা রয়েছেন। এতে সমালোচিত অর্থমন্ত্রী জর্জ ওসবনকে পেছনে ফেলে ২য় স্থানে চলে আসেন আলোচিত লন্ডন মেয়র বরিস জনসন।//UKBDNEWS
Category: Community UK, ইউরোবিডি কমিউনিটি সংবাদ