• ৯ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,23 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

প্রবাসে বাংলাদেশের রাজনীতি চর্চা এবং একটি সমীক্ষা

| অক্টোবর 5, 2013 | 0 Comments

শেখ মহিতুর রহমান বাবলু :: ১৯৮৭ সালে ইউরোপে আসার পর থেকে প্রবাসে বাংলাদেশের রাজনীতি চর্চার সুফল ও কুফল লক্ষ্য করে আসছি। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে পৃথিবীতে বাংলাদেশী ছাড়া অন্য কোন জাতি দেশের বাইরে তাদের দেশের রাজনীতি চর্চার কথা চিন্তাও করেনা।

অথচ আমরা প্রকাশ্যে দিনের পর দিন এগুলো করেই চলেছি। দেশের এক শ্রেনীর নেতাদের ব্যক্তিস্বার্থ ও ব্যর্থতার কারনেই প্রবাসে অহেতুক বাংলাদেশের রাজনীতি চর্চা করতে গিয়ে বার বার হোচট খাচ্ছে কমুউনিটি। বিপদাপন্ন এক বন্ধুর পাহাড়ী পথে শিশুর মতো হাঁটছে প্রবাসী বাংলাদেশীরা। এসবের অবসান প্রয়োজন।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলী তথা কিছুদিন আগে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এটি এন বাংলা ইউরোপের অফিসের মধ্যে শারিরীক ভাবে হামলার শিকার হলেন। জাতি হিসাবে বাংলাদেশীদের মাথা নিচু হলো বৃটেন সহ বিশ্বময়। প্রবাসে এধরনের দলাদলি, মারামারি, ধাওয়া, পাল্টাধাওয়া, থানা , পুলিশ, সংবাদ সম্মেলন , সংবাদ শিরোনাম ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের ইমেজ সংকট কি রাজনীতি বিদদের বিবেক কে একবারও স্পর্শ করে না ?

হাসানুল হক ইনু একজন প্রথম কাতারের বামপন্থী অভিজ্ঞ নেতা। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ তিনি এমন কিছু কথা বলেছেন যা তার মতো নেতার মুখে মানায় না।দেশের কিছু কিছু মানুষ মনে করেন বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতোনা । কিন্তু হাসানুল হক ইনুরা যেন বলতে চান বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বঙ্গবন্ধুর বাবারও জন্ম হতোনা। ক্ষমতার রিন শোধ করতে একজন জাতীয় পর্যায়ের নেতা নিজ দলের আদর্শকে উপেক্ষা করে এত নির্লজ্জ হতে পারে ভাবতেও অবাক লাগে।

এটি এন বাংলা অফিসে যেদিন ঐ দুর্ঘটনাটি ঘটে ঠিক তার আগেরদিন পূর্ব লন্ডনের ব্লু মুন  হলে এক কর্মী সভায় ইনু মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কে লক্ষ্য করে বলেন,“ মিঃ প্রেসিডেন্ট সিরিয়া নয় এই মুহুর্তে বাংলাদেশে আমেরিকার সৈন্য পাঠানো উচিত। কারন বাংলাদেশে মৌলবাদীরা বড্ড বেড়েছে।” হাসানুল হক ইনুর মতো দায়িত্বশীল একজন নেতার মুখ থেকে এমন কথা দেশদ্রোহীতার সামিল। কোন দেশ প্রেমিক একথা শুনে স্থির থাকতে পারেননা। কিন্তু তারপরও সভ্যতার সুতিকাগার বৃটেনে বসে দেশের একজন জাতীয় নেতা ও প্রভাবশালী মন্ত্রীর গায়ে হাত তোলা একটি চরম বর্বরতা ছাড়া আর কিছু নয়। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি এ ধরনের ঘটনাগুলি ঘটছে প্রবাসে দেশের নষ্ট রাজনীতি চর্চার কারনেই ।

কয়েক বছর আগে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ছুরিকাঘাত করেছিল ব্রিকলেনে। বিচারপতি মানিক ও আওয়ামীলীগের বর্ষীয়ান নেতা মরহুম আঃ জলীলও লাঞ্চিত হয়েছিলেন লন্ডনে। প্রধানমন্ত্রী এদেশে আসলে অশ্লীল ভাষায় লেখা প্লাকেট দেখানো হয়। উত্তোলন করা হয় কালো পতাকা। শ্লোগান দেয়া হয় কুরুচীপূর্ন শব্দ ব্যবহার করে। এতে বিদেশীদের সামনে লজ্জায় মাথা নীচু হয় কমিউনিটির। এ সব কিছুর পিছনে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী নিহিত ।

আমাদের স্বাধীনতা , মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন এবং নিজস্ব জীবন সংগ্রাম প্রভৃতি বিদেশের মাটিতে রাজনৈতিক মাদুলী হিসাবে ফেরী করার জন্য নয়। বাংলাদেশের রাজনীতিকে ভর করে প্রবাসে যারা যশ, অর্থ, খ্যাতি ও সাফল্যের  চূড়ায় আরোহনের দিবাস্বপ্ন দেখেন তাদের কাছে জিঞ্জাসা আপনারা কি আপনাদের বিদেশে রাজনীতি করার নেজ্য অধিকার নিজ নিজ দল বা দেশের কাছ থেকে আদায় করতে পেরেছেন? পারেন নি। প্রমান স্বরুপ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগের প্রেক্ষাপট ও প্রবাসে বর্তমানে আপনাদের রাজনৈতিক আইডেনটিটির বিষয়টা একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখবেন কি?

প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে আপন জন্মভুমির প্রতি অনুভু’তিগত আকর্ষন থাকবেই। সবারই থাকে। কিন্তু তার অর্থ প্রবাসে দেশের রাজনীতি চর্চা নয়।প্রবাসে বাংলাদেশীদের কেউ কেউ আওয়ামী পন্থী, কেউবা বি এন পি, কেউবা জাতীয় পার্টি আবার কেউ জাসদ। এরা একে অপরকে সম্মানতো দুরের কথা কেউ কাউকে সহ্য পর্যন্ত করতে পারে না। পরস্পর পরস্পরের প্রতি ক্রুদ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে , দেশের সমস্যা নিয়ে এরা কথা বলে না। এমনকি প্রবাসেও কমিউনিটির চরম দুর্দিনে এদেরকে দেখা যায় না । কিছুদিন আগে যুক্তরাজ্যের বর্নবাদী দল ই ডি এল পূর্ব লন্ডনে মার্চ করতে এলে এদেরকে প্রতিহত করতে সাধারণ মানুষের পাশে অনেক সাদা বৃটিশ দেখেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রাজনীতি যারা করে তাদের কাউকে সেখানে সক্রিয় ভুমিকা রাখতে দেখা যায়নি। সুতরাং বলা বাহুল্য প্রবাসে যারা রাজনীতি করেন তাদের কাজ অর্থহীন সমর্থন অসমর্থনের। দেশের মানুষের অথবা কমিউনিটির স্বার্থে তাদের কোন ভুমিকা নেই।

দেশ থেকে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যারা বিদেশে সরকারী সফরে বা বেড়াতে আসেন। তারাও কিন্তু প্রবাসী রাজনীতি বিদদেরকে সুপরামর্শ দেন না । তারা দামী উপঢৌকন , নগদ অর্থ ও জিন্দাবাদ ধ্বনী শোনার জন্য এদের কে ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশের মতো প্রবাসেও রাজনৈতিক দলগত বা জোটগত বিভাজন তো আছেই । আবার একই রাজনৈতিক দলের মধ্যেও ক্ষমতার লড়াই নিয়ে কোন্দল আছে। কিন্তু এসব নিয়েও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নিতে দেশ থেকে আসা রাজনৈতিক নেতাদেরকে দেখা যায় না।

এদেশে যারা বাংলাদেশের রাজনীতি চর্চা করেন তারা অহেতুক সভা সমাবেশ, মিটিং, মিছিল করে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। এ অর্থগুলি কি কোন সৃষ্টিধর্মী কাজে ব্যয় করা যায়না?  দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আমরা আবেগের চালচিত্র নির্মানে খুবই পটু। কিন্তু সৃষ্টিধর্মী কল্যানকর কোনও কর্মে নিজেদেরকে নিযুক্ত করতে পারিনা। বাংলাদেশ থেকে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যারা এদেশে আসেন তাদের মাধ্যমে স্থানীয় কমিউনিটি কি কোন রকম উপকৃত হয়েছেন ? এক কথায় বলতে হবে না। প্রবাসীদের প্রানের দাবী ভোটাধিকার ইস্যুর কোন সুরাহা হয়েছে কি? না। সুতরাং অহেতুক এক শ্রেনীর অবুঝ প্রবাসী মরিচীকার পিছে ছুটে  সময় অর্থ দুটোই নষ্ট করছেন।

 এদেশে আমাদের অনেক কিছু করার আছে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপুর্ন লবিং গড়ে তুলতে হবে। হাউস অব কমান্স ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে বাংলাদেশের পক্ষে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। জাতি হিসাবে প্রবাসে যদি আমরা মাথা উচু করে দাড়াতে চাই তবে এদেশের  মূলধারার রাজনীতির সাথে আমাদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। অনুসরন করতে হবে টিউলিপ সিদ্দিকী, মিনা রহমান, লুৎফর রহমান, রুশনারা  আলীর মতো সৃজনশীল মানুষের পথ। এটাই হবে প্রবাসে আমাদের যথার্থ কাজ।//UKBDNEWS

                                                                  লেখক:: সাংবাদিক ও লেখক

Category: Community UK, ইউরোবিডি কমিউনিটি সংবাদ

About the Author ()

Leave a Reply