ভলকানাইজড রাবার! চার্লস গুডইয়ারের এক বিশ্ময়কর আবিস্কার
একটা প্রবাদ আছে – উদ্যমী পুরুষকেই ভাগ্যদেবী বরণ করেন। বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিস্কারগুলোর পেছনে থাকে উদ্যম ও দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা। কিন্তু তার পরেও থেকে যায় একটা আকস্মিক ঘটনা (Chance Factor)।
চার্লস গুডইয়ার। আমেরিকান এই বিজ্ঞানী বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করছিলেন কচাও গাছের রসকে ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে। রবার গরমে গলে গিয়ে চটচটে হয়ে যায় আর ঠান্ডায় জমে ভঙ্গুর হয়ে যায়। অথচ এটি জল নিরোধক ও হালকা। এছাড়াও এর অনেক গুণ। তিনি তাই কাঁচা রাবারকে কঠিন নমনীয় উষ্ণতাসহিঞ্চু এক বস্তুতে পরিণত করতে চাইছিলেন। গবেষণায় ব্যায় করতে করতে তিনি নিঃস্ব হয়ে গেলেন। পাওনাদাররা তাকে জেলে পাঠাল। জেলে বসে তিনি নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে মুক্তি পেলেন। কিন্তু গবেষণার ভূত মাথা থেকে গেলনা। তাই যেখানে যা ছিল বিক্রি করে আবার শুরু করলেন গবেষণা। দুই বছর কেটে গেল। কোন সাড়া নেই গবেষণায়।
অবশেষে ১৮৩৯-এর সেই সন্ধ্যে। পর পর দু’দিন অনাহারে। ঘর গরম করারও কোন ব্যবস্থা নেই। একটা পয়সা নেই পকেটে। স্থির করলেন আত্নহত্যা করবেন গন্ধক খেয়ে। ছেঁড়া ওভারকোটটা গায়ে দিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন গুডইয়ার। মুদি দোকানে এক জোড়া জুতোর বিনিময়ে নিয়ে এলেন গন্ধক। এবার গন্ধকটা খেতে হবে। গুডইয়ার হঠাৎই ভাবলেন, খালি পেটে মরবো কেন? যে রাবারের জন্য এত কষ্ট তার দুটো কাঁচা তাল তো এখনও মজুদ। তারই একটা মিশিয়ে গন্ধকের সঙ্গে খাবো। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। চুলোতে সসপ্যানে কাঁচা রাবার আর গন্ধক চাপিয়ে দিলেন। তারপর খিদে আর ঠান্ডায় অজ্ঞান। পরের দিন অনেক বেলায় সূর্যের তাপে জ্ঞান ফিরলো। ছুটে গেলেন সসপ্যানের কাছে। চুলো কখন নিভে গেছে কে জানে। সসপ্যানের মধ্যে হাত দিয়ে নিতে চাইলেন রাবার আর গন্ধকের মিশ্রন। কিন্তু এ কি দেখছেন তিনি! এ যে অন্যরকম বস্তু। তিনি এটি ঠান্ডা ও প্রচন্ড উত্তাপে পরীক্ষা করলেন। দেখলেন তিনি যা চেয়েছিলেন তা পেয়ে গেছেন। অতএব, আর মরা হল না। আবিস্কৃত হল ভলকানাইজড রাবার যা পথ পরিবহনে করলো নতুন যুগের সূচনা। গাড়ির টায়ার থেকে জুতার তলি কোথায় নেই এই ভলকানাইজড রাবার। চার্লস গুডইয়ারের সম্মানে গুডইয়ার টায়ার কোম্পানি তাঁদের কোম্পানির নামকরণ করেন।
Category: 1stpage, তথ্যপ্রযুক্তি, প্রচ্ছদ