• ৯ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,23 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

ব্রিটেনে উদযাপিত ঈদ-উল আজহা

| অক্টোবর 17, 2013 | 0 Comments

ইউরোবিডি কমিউনিটি সংবাদ: যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় ব্রিটেনে উদযাপিত হয়েছে ঈদুল আজহা। ব্রিটেনের ত্রিশ লাখের কাছাকাছি সংখ্যার মুসলমান জনগোষ্ঠীর মূল অংশটি মঙ্গলবার উদযাপন করেছেন তাদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা।

পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত কমিউনিটির বড় অংশটি বুধবার ঈদ পালনের প্রস্তুতি নিলেও ঈদের মূল আমেজ পরিলক্ষিত হয়েছে মঙ্গলবার।

স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ অন্যান্য কমিউনিটির বড় অংশ এদিনই পালন করেছেন ঈদুল আজহা। ঈদ উপলক্ষে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসহ দেশটির অন্যান্য বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় বাংলাদেশের মতোই ঈদের আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। এসব এলাকাগুলোর রাস্তায় নতুন জামা কাপড় পড়ে ছোট ছোট শিশুদের জামাতে যাওয়ার দৃশ্য ঈদের চিরাচরিত আমেজই দিয়েছে কমিউনিটিকে।

বার্মিংহাম, নিউক্যাসেল, লিডস, ম্যানচেস্টার, কার্ডিফ, সান্ডরল্যান্ড, লিভারপুলসহ লন্ডনের বাইরের বিভিন্ন শহরেও যথাযোগ্য মর্যাদায় ঈদ পালনের খবর বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ।

লন্ডনের ব্রিকলেন জামে মসজিদ ও ইস্ট লন্ডন মসজিদসহ বিভিন্ন বড় বড় মসজিদে ঈদের একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হলেও স্থানীয় মসজিদগুলোর প্রতিটিতেই ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেন জামে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান।

জামাত শেষে দুজনই স্থানীয় মুসল্লিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিয়ম করেন ও সংবাদ মাধ্যমগুলোর কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস বলেন, ঈদুল আজহা আমাদের যে ত্যাগের শিক্ষা দেয়, সেই শিক্ষা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কাজে লাগাতে পারলে আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনের অনেক সমস্যারই সমাধান হতে পারে।

প্রবাসী বাঙালিদের দেশপ্রেমের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হাইকমিশনার বলেন, এই ঈদেও প্রবাসীদের মুক্তহস্ত দানে দেশের অনেক গরীব মানুষ সামান্যতম হলেও ঈদের আমেজ অনুভব করার চেষ্টা করছেন।

ঈদের আনন্দ ত্যাগ, ভ্রাতৃত্ব ও একতার সুমহান শিক্ষা নিয়ে প্রতিবছর আমাদের মাঝে উপস্থিত হয় বলেও মন্তব্য করেন হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস।

তিনি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রবাসী বাঙালিসহ বিশ্ব মুসলমানদের প্রতি ঈদের শুভেচ্ছা জানান।

টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, ত্যাগ-সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে প্রতি বছর ঘুরে আসে আমাদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এই ঈদে আল্লাহর নির্দেশে কোরবানি পালনের মাধ্যমে আমরা মনের পশুকে কোরবানি দেওয়ার চেষ্টা করি। পশু কোরবানির মাধ্যমে মনের পশুকে যদি প্রকৃতভাবেই আমরা কোরবানি দিতে পারি, তাহলে আমাদের দৈনন্দিন জীবন অবশ্যই সুন্দর ও শান্তিময় হতে বাধ্য।

টাওয়ার হ্যামলেটসসহ ব্রিটেনের ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রতি ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে মেয়র বলেন, ঈদের ত্যাগের শিক্ষায় আমরা সবাই শিক্ষিত হই, এই কামনাই করছি এবারের ঈদুল আজহায়।

তিনি বাংলাদেশের জনগণের প্রতিও টাওয়ার হ্যামলেটসবাসীর পক্ষ থেকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানান।

এদিকে, মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ব্রিটিশ ফরেন সেক্রেটারি উইলিয়াম হেইগ। বাংলানিউজসহ সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক শুভেচ্ছা বার্তায় ফরেন সেক্রেটারি বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশ্বের মুসলমান সম্প্রাদায়ের প্রতি আমি জানাচ্ছি ঈদ শুভেচ্ছা।’

তিনি বলেন, ‘ঈদুল আজহা পবিত্র হজের সমাপ্তি পর্ব। আর পবিত্র হজের এই সমাপ্তি লগ্নেই সারা বিশ্বের মুসলমানরা উদযাপন করেন তাদের অন্যতম বড় এই ধর্মীয় উৎসব।’

ঈদ শুভেচ্ছায় ব্রিটিশ ফরেন সেক্রেটারি আরো বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সিরিয়ার অধিকাংশ জনগণ এবার ঈদ উদযাপন করতে পারছে না। বিশ্বের সকল মুসলমানের ঈদ প্রার্থনায় সিরিয়ার জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা কামনার বিষয়টি অবশ্যই থাকবে বলে আমি আশা করি।’

এর আগে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও ব্রিটেনসহ বিশ্বের মুসলমান সম্প্রাদায়ের প্রতি শুভেচ্ছা জানান। বাংলানিউজসহ সংবাদ মাধ্যমগুলোতে পাঠানো এক ঈদ শুভেচ্ছা বার্তায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্রিটেনসহ বিশ্বের মুসলিম সম্প্রাদায়ের প্রতি পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানাই আমি।’

তিনি বলেন, ‘বছরের এই সময়টিতে আমরা দেখতে পাই, বিশ্বের সব বয়সের মুসলমানরা নিজেদের সমস্যা পেছনে রেখে অন্যের শুভকামনায় সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনারত থাকেন।’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার প্রতি ব্রিটেনের তিন মিলিয়নের কাছাকাছি মুসলমানের আনুগত্য, চ্যারিটি কার্যক্রম ও ত্যাগের মনোভাবের প্রশংসা করি আমি।’

ক্যামেরন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি বিভিন্ন ধর্ম বিশ্বাসীদের প্রতিষ্ঠানিক অবদান ও মূল্যবোধের কারণে আমাদের দেশ একটি শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই বছর আমি মিলিত হয়েছি মুসলিম ব্যবসায়ী, ধর্মীয় নেতা, সরকারি কর্মকর্তাসহ পরিশ্রমী পরিবারগুলোর সঙ্গে। যারা আমাদের দেশের উন্নয়নে বিরাট ভমিকা রাখছেন।’

ক্যামেরন বলেন, ‘আমি গর্ববোধ করি এই ভেবে যে, আমি এমন একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী, যে দেশে ভিন্ন ধর্ম ও ব্রাকগ্রাউন্ড থেকে আসা নাগরিকরা স্বাধীনভাবে নিজেদের ধর্মচর্চা করছেন। দেশের ভবিষ্যত লক্ষ্য অর্জনে অংশ নিচ্ছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসন্ন নতুন বছরের শুরুতে আমাদের নতুন আশা, আমরা ওইসব সমস্যা মোকাবেলায় সক্ষম হবো, যেসব সমস্যায় মুসলমানসহ অন্যান্যরা ভুক্তভোগী। আমি এই ভেবে আনন্দিত যে, বর্তমান সরকার তাদের প্রতিশ্রুত জাতীয় আয়ের ০.৭ ভাগ পৃথিবীর গরীব জনগোষ্ঠীর সাহায্যে ব্যবহার করতে পারছে।’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তার শুভেচ্ছাবাণীর শেষে ‘ঈদ মোবারক’ উচ্চারণ করে সব মুসলমানদের জন্যে আনন্দ ও শান্তিপূর্ণ উৎসব কামনা করেন।

Category: Community UK, ইউরোবিডি কমিউনিটি সংবাদ

About the Author ()

Leave a Reply