ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা বিস্তারের সুযোগ হারিয়েছে ইউরোপ
ইউরো সংবাদ: ফরাসি দৈনিক লা মন্ড ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার একতরফা নিষেধাজ্ঞা, বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থায় আমেরিকার একক আধিপত্য এবং মার্কিন অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে ইউরোপীয় দেশগুলোকে ব্যবহারের বিষয়ে বিস্তারিত নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।
এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দৈনিকটি লিখেছে, আমেরিকার জেনারেল মটর কোম্পানি ২০১২ সালে ইরানের গাড়ির বাজার থেকে ততপরতা গুটিয়ে আনতে ফ্রান্সের পেজো গাড়ি নির্মাণ কোম্পানিকে বাধ্য করেছিল। সে সময় ইরানের গাড়ির বাজারে ৩০ শতাংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল ফ্রান্সের পেজো কোম্পানির। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-নীতি লঙ্ঘন করে ইরানের গাড়ি নির্মাণ কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত বিদেশি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের হুমকি দিয়েছিল। ইরানের গাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করাই ছিল মার্কিন এ হুমকির প্রধান উদ্দেশ্য।
ফরাসি দৈনিক লা মন্ড ইরানের ব্যাপারে মার্কিন অযৌক্তিক নীতির তীব্র সমালোচনা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেন মার্কিন অযৌক্তিক নীতির ব্যাপারে এত নমনীয়তা দেখাচ্ছে এবং ইউরোপীয় সরকারগুলো কেন ওয়াশিংটনের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কথা বলছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। লা মন্ড আরো লিখেছে, এটা খুবই দুঃখজনক যে আমেরিকা সারা বিশ্ব ডলারে পূর্ণ করেছে এবং ডলারের মাধ্যমেই যাবতীয় লেনদেন হচ্ছে। আর এসবই হচ্ছে ইউরোপের নতজানু নীতির কারণে। আর এ থেকে বোঝা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা নিজেদের রাজনৈতিক গুরুত্বের বিষয়টি উপলব্ধি করে না।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে মার্কিন চাপের মুখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞায় শামিল হয়। ২০১০ সাল থেকে ইরানের ওপর এ কঠোর নিষেধাজ্ঞা বলবত রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ইরানের তেল বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি ইউরোপের ব্যাংকগুলোর সঙ্গেও ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু এখন ইউরোপীয় দেশগুলোর এটা বুঝতে বাকি নেই যে, মার্কিন নীতি অনুসরণ করতে গিয়ে তারা যে শুধু ইরানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ হাত ছাড়া করেছে তাই নয় একই সঙ্গে এ নিষেধাজ্ঞার ফলে তারা নিজেরাই নানা ঝামেলার মধ্যে পড়েছে। এ কারণে সম্প্রতি ইউরোপের আদালত ইরানের ব্যাংকের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার নির্দেশ জারি করে বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞার পক্ষে পর্যাপ্ত যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।
বাস্তবতা হচ্ছে, ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার একতরফা নিষেধাজ্ঞার প্রতি ইউরোপের তেমন সমর্থন ছিল না। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইরান বিরোধী প্রস্তাব পাশ এবং ছয় জাতিগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমেরিকার পাশে থেকে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে ব্রিটেন ও ফ্রান্স। কিন্তু এখন তারা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান পরমাণু সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছে, এ বিষয়ে আরো স্বচ্ছতা সৃষ্টিতে তেহরান প্রস্তুত রয়েছে। ইরান বলেছে, পাশ্চাত্য ইতিবাচক আচরণ করলে তেহরানও অনুরূপ জবাব দেবে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সরাসরি ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে কিন্তু এ ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য দুটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রথমত, উভয়কে প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে এবং দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, ইরানের সঙ্গে বিদ্বেষী নীতি পরিহার করতে হবে।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ইউরোপের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের বিষয়টি আমেরিকা থেকে আলাদা। কারণ আমেরিকা প্রায় অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ ও শত্রুতা করে আসছে। কিন্তু গত এক দশকের ঘটনাবলী বাদ দিয়ে বলা যায় ইউরোপের সঙ্গে ইরানের অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় ছিল এবং ইউরোপ ছিল ইরানের প্রধান বাণিজ্য শরীক। এ অবস্থায় এসব দিক বিবেচনা করে ইউরোপ ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে নয়া অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে যদিও এ ক্ষেত্রে এখনো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
Category: 1stpage, ইউরো সংবাদ, ইউরো সংবাদ, শীর্ষ সংবাদ