দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা বিমানবাহী রণতরী
ইউরোবিডি২৪নিউজঃ চীন পূর্ব চীন সাগর এলাকায় ‘আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চল’ গঠন করে যেসব নিয়ম নীতির ঘোষণা দিয়েছে গতকাল তা না মানার কথা জানিয়েছে জাপানের দুটি এয়ারলাইন্স। জাপান এয়ারলাইন্সের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোকে চীনের নিয়মনীতি মানতে হবে না, মঙ্গলবার জাপান সরকার এ কথা বলার পর আমরা বৈঠকে বসি। বৈঠকে চীনের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলের নিয়ম না মানার সিদ্ধান্ত হয়।’
এ প্রেক্ষিতে অল নিপ্পন এয়ারওয়েজও চীনের নিয়ম না মানার ঘোষণা দেয়। অবশ্য এর আগে অবশ্য এসব নিয়ম মেনে চলবে বলে জানিয়েছিল।
এর আগে জাপানের দুটি বৃহৎ এয়ারলাইন্স বলেছিল, চীনের ঘোষিত আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চল দিয়ে বিমান আসা যাওয়ার জন্য তারা বেইজিংয়ের কাছে তাদের ফ্লাইট পরিকল্পনা জমা দিয়েছে।
শনিবার চীন আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চল গঠনের ঘোষণা দিয়ে বলেছিল, এ অঞ্চলে বিমান প্রবেশের আগে তাদের জানাতে হবে। চীনের এ উদ্যোগের ফলে ওই অঞ্চলে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। আগে থেকেই ওই অঞ্চলের দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা নিয়ে চীন ও জাপানের মধ্যে বিরোধ চলছিল। দ্বীপপুঞ্জটি চীনের কাছে দাইয়ুস এবং জাপানের কাছে সেনকাকু নামে পরিচিত।
জাপান চীনের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চল গঠনের নিন্দা জানিয়েছে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও এ উদ্যোগের নিন্দা জানায়। এছাড়া সোমবার বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জের ওপর চক্কর দেয় মার্কিন বি-৫২ বোমারু বিমান। চীনের কোনো অনুমতি না নিয়েই বিমান দুটি ওই এলাকায় ঢুকে পড়ে।
পেন্টাগনের সেনা মুখপাত্র কর্নেল স্টিভ ওয়ারেন এ সম্পর্কে বলেন, ‘এটি ছিল আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ এবং তা অব্যাহত থাকবে। এ বিষয়ে আমরা আগেভাগে কোনো রেডিও সিগন্যাল দিইনি এবং কোনো ফ্রিকোয়েন্সিও নিবন্ধন করিনি।’ আমেরিকান এ সেনা কর্মকর্তা আরও জানান, গুয়াম দ্বীপের অ্যান্ডারসন বিমানবাহিনীর ঘাঁটি থেকে বিমান দুটি ওড়ে এবং এটি ছিল দীর্ঘ পরিকল্পিত ‘কোরাল লাইটনিং’ মহড়ার অংশ।
শনিবার চীন সরকার ঘোষণা দেয় যে, তারা পূর্ব চীন সাগরের আকাশসীমায় ‘বিমান প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ এলাকা’ বা এডিআইজেড প্রতিষ্ঠা করেছে। এডিআইজেড প্রতিষ্ঠার ফলে পূর্ব চীন সাগরের ওপর দিয়ে চলাচলের সময় সব বিমানই চীনা আইন মানতে বাধ্য। অন্যথায় চীন যে কোনো বিমানকে নামিয়ে তল্লাশি করতে পারবে।
কিন্তু চীনের এ ঘোষণার একদিন পর আমেরিকা ঘোষণা করে তারা চীনের এ আইন মানবে না।
তার একদিন পরই ওই অঞ্চলের ওপর দিয়ে পেন্টাগন বি-৫২ বোমারু বিমান ওড়ালো। চীনের স্বঘোষিত নিয়মাবলি অনুযায়ী ‘বিমান প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ এলাকা’ দিয়ে যাওয়ার আগে প্রতিটি বিমানকে তাদের ফ্লাইট প্ল্যান জমা দিতে হবে। এর সঙ্গে জাতীয়তার স্পষ্ট পরিচয় রাখতে হবে এবং দ্বিপাক্ষিক বেতার যোগাযোগ রেখে চলতে হবে যাতে তারা চীনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শনাক্তকরণের প্রশ্নের ‘সময়মতো এবং যথার্থ জবাব দিতে পারে’।
বিশ্বের অধিকাংশ সরকারের কাছেই চীনের এ একতরফা পদক্ষেপ অকার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর চীনের মতো শক্তির বিরোধিতা করার সামর্থ্য কিংবা প্রবৃত্তি কোনোটাই নেই। তাই জ্যাপানিজ এয়ারলাইন্স এবং অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ (আনা) জানিয়েছে, তারা চীনের দাবি মেনে চলছে ও চলবে। তাইওয়ানের বেসামরিক বিমান প্রশাসন সিএএ’র এক মুখপাত্র জানান, তাইওয়ানের বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো চীনের নিয়মাবলি মেনে চলবে। সিএএ নিজেই তাদের ফ্লাইট প্ল্যানগুলো চীনের এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে সরবরাহ করবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এয়ার এবং এসিয়ানা এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, তাদের বিমানগুলো চীনের ‘বায়ু প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ এলাকা’ দিয়ে যাওয়ার আগে চীনের কাছে খবর পাঠাচ্ছে না। বরং তারা পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে নতুন নীতিমালা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
সরকারি তরফ থেকে চীনের সমালোচনার কোনো কমতি নেই। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলিয়া বিশপ বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়া পূর্ব চীন সাগরের স্থিতি পরিবর্তনের যে কোনো বলপূর্বক বা একতরফা পদক্ষেপের প্রতি তার বিরোধিতা স্পষ্ট করে দিয়েছে।’
মঙ্গলবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের মুখপাত্র চীনের ‘বলপূর্বক এবং একতরফাভাবে’ সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থিতি পরিবর্তনের প্রচেষ্টার সমালোচনা করেছেন।
এর আগে আমেরিকা স্পষ্ট করে দেয়, সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ আমেরিকা-জাপান নিরাপত্তা চুক্তির আওতায় পড়ে যা সম্ভবত চীনের প্রতি সবচেয়ে জোরালো সংকেত হিসেবে গণ্য। জার্মান সরকারও জানিয়েছে, চীনের এই পদক্ষেপ চীন ও জাপানের মধ্যে একটি সশস্ত্র ‘ঘটনার’ ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এদিকে চীন এবার দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত এলাকায় বিমানবাহী একটি রণতরী পাঠিয়েছে।
দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জের আকাশে একটি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পর পরই এ রণতরী পাঠাচ্ছে দেশটি।
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, আন্তর্জাতিক, প্রচ্ছদ, শীর্ষ সংবাদ