• ৭ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,21 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

বড়দিন নিয়ে জার্মানদের রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য

| ডিসেম্বর 25, 2013 | 0 Comments

Weihnachtsmann mit Draisine unterwegs

ইউরো সংবাদ:

ঐতিহ্যের প্রতি বিশেষ অনুরাগ রয়েছে জার্মানদের৷ ক্রিসমাসকে ঘিরে পুরানো ঐতিহ্য, রীতি-নীতির সমাহার চোখে পড়ে সর্বত্র৷ অফিস আদালত ও বাড়িতে বাড়িতে চোখে পড়ে আলোক সজ্জিত ক্রিসমাস ট্রির বাহার৷

জার্মানদের নিজস্ব ঐতিহ্য

বড়দিনের উৎসব পালনেও জার্মানদের রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস৷ অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বড়দিনের উৎসবটা যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন ২৫ শে নয় বরং আগের দিনই অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয়৷ কয়েকশ বছর ধরে উৎসবটাকে এগিয়ে আনা হয়েছে৷ মিডনাইট মেস থেকে শুরু করে ক্রিসমাস ট্রির নীচে রাখা উপহার বিতরণ – এসব কিছুই চলে ২৪ তারিখ অর্থাৎ পবিত্র রাতে৷Großfamilie Weihnachten

জার্মানিতে বড়দিনের উৎসব পাল

ক্রিসমাস ট্রি

যে-কোনো উৎসব মানেই হৈচৈ, আনন্দ, উপহার, কেনাকাটা, খাওয়া-দাওয়া৷ তবে তা যদি হয় ধর্মীয় কোনো উৎসব তাহলে স্বাভাবিকভাবে সবকিছুর মাত্রা খানিকটা বেড়ে যায়৷ জার্মানিতে বড়দিনের উৎসব নানাজনে নানাভাবে উদযাপন করে৷ বেশিরভাগ মানুষই অতি যত্নে ক্রিসমাস ট্রি সাজান৷ আর সবাই অপেক্ষা করে থাকে ক্রিসমাস ট্রির নীচে রাখা উপহারের জন্য৷

বড়দিনের বাজারেও বিশেষত্ব রয়েছে জার্মানদের৷ মাল্ডওয়াইন, স্টোলেন বাএক ধরনের ফ্রুট কেক এসব একান্তই জার্মান

তবে ঠিক কোন দিনটি পবিত্র রাত এটা জিজ্ঞেস করলে মানুষজন একটু গোলমাল পাকিয়ে ফেলেন৷ এক নারী বলেন, ‘‘আমার মতে পবিত্র রাত হলো ২৪ তারিখে৷” আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমার মতে ২৫ তারিখ৷” আরেক মহিলা উত্তর দেন, ‘‘যখন দারুচিনির গন্ধে চারিদিক ভুরভুর করে, যখন চারিদিক আলোকোজ্জ্বল হয়ে ওঠে তখন৷”

উপহারগুলি কে নিয়ে আসে কে?

উপহারগুলি কে নিয়ে আসে এব্যাপারেও জার্মানদের মতভেদ রয়েছে৷ এক মহিলা বলেন, স্যান্টাক্লজ বা ভাইনাখটসমান, এক ছেলে বলে না না ক্রিস্টকিন্ড (ক্রিস্ট-চাইল্ড), আরেক মেয়ে বলেন, নানা স্যান্টা ক্লজ, আরেক ছেলে বলে আমার বাবা-মা৷

স্যান্টাক্লজ বা ক্রিস্টকিন্ড যেই উপহার আনুক না কেন জার্মানরা এব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত৷ প্রটেস্টান্ট অধ্যুষিত উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের মানুষজন স্যান্টাক্লজকে বিশ্বাস করেন৷ আর ক্যাথলিক অধ্যুষিত দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে ক্রিস্টকিন্ডের প্রভাবটাই বেশি৷

আরো কিছু বিশেষত্ব রয়েছে জার্মানিতে

ক্রিসমাসের আরো কিছু বিশেষত্ব রয়েছে জার্মানিতে৷ জার্মানিতে বড়দিনের উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় প্রায় চার সপ্তাহ আগে থেকেই৷ এই সময়টাকে বলা হয় ‘আডভেন্টৎসাইট’৷ অর্থাৎ (যিশুর) আবির্ভাবের সময়৷ উৎসবের সময়টাকে ‘কাছাকাছি’ আনার জন্যই এতসব আয়োজন৷ এই সময় তৈরি করা হয় ‘আডভেন্টক্রানৎস’৷ এটির যাত্রা শুরু ১৮৩৯ সালে জার্মানির হামবুর্গে৷ ফার গাছের পাতা পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে বানানো একরকম তোড়া৷ এটি টেবিলে রাখা হয় কিংবা জানালায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয় অনেক বাড়িতে৷ তার ওপর গেঁথে দেয়া হয় চারটা মোমবাতি৷

Symbolbild Gehstockবড়দিনের সময় মা-বাবারা ছেলেমেয়েদের কাছে পাবার আশায় দিন গুণতে থাকেন

বড়দিনের আগের চার সপ্তাহে প্রতি রোববার একটি করে মোমবাতি জ্বালানো হয়৷ চারটা মোমবাতি জ্বালানো হয়ে গেলে বুঝতে হবে বড়দিন আসন্ন৷ আডভেন্ট ক্যালেন্ডারও জার্মানদের সৃষ্টি৷ পরিবারের বড়রা আডভেন্ট ক্যালেন্ডার তৈরি করে তার খোপে খোপে ছোটদের জন্য রেখে দেন বাদাম, ফল, চকলেট বা খেলনা৷ এক এক দিন এক একটা জিনিস পেয়ে বাচ্চাদের আনন্দ আর ধরে না৷

পারিবারিক উৎসব

জার্মানদের জন্য বড়দিন বিশেষ করে পারিবারিক উৎসব৷ এই দিন পরিবার পরিজনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন সবাই৷ বিশেষ করে মা-বাবারা ছেলেমেয়েদের কাছে পাবার আশায় দিন গুণতে থাকেন৷ এদিক দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে জার্মানদের মিল রয়েছে৷

Gericht Fish Essen

আস্ত মাছ ভাজি

যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন ২৪ ডিসেম্বর রাতে৷ তাই এ রাতকে পবিত্র রাত বলা হয় অর্থাৎ তখন থেকে বড়দিনের মূল উৎসব শুরু হয়ে যায়৷ জার্মানিতে সেদিন রাতে পুরনো ঐতিহ্য অনুযায়ী মাছ খাওয়া হয়, বিশেষ করে কারফেন মাছ, তবে সব অঞ্চলে নয়৷ আস্ত মাছটি ওভেনে বেক করে পরে কেটে কেটে পরিবেশন করা হয়৷ এবং এ রাতেই উপহারগুলো সুন্দর প্যাকেটে ভরে ক্রিসমাস ট্রির নীচে সাজিয়ে রাখা হয়৷

Weihnachtsgans

রাজহাঁসের রোস্ট

বড়দিন পারিবারিক উৎসব৷ তাই যারা পরিবার থেকে দূরে থাকে তারা উৎসবের দিনগুলো একসাথে উদযাপন করতে চায়৷ খাবারের আয়োজন হয় বেশ ঘটা করে৷ সেদিন খাওয়া হয় বিশাল আকারের ওভেনে রোস্ট করা রাজহাঁস৷ এর জন্য রয়েছে বিশেষ রেসিপি৷ রাজহাঁসের পেটের ভেতরে যে মশলা বা পুর ভরা হয় তার ওপরই নির্ভর করে রাজহাঁসের রোস্টের স্বাদ৷

17.12.2012 DW Euromaxx zum fest Fondue

তরুণ প্রজন্ম

জার্মানরা ঐতিহ্যপ্রিয়, তবে তা এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে তেমন লক্ষ্য করা যায় না৷ ওরা অনেকেই এতো ঝামেলায় যেতে চায় না৷ তারা ঐতিহ্যবাহী খাবারের চেয়ে হালকা বা সহজ উপায়ে তৈরি খাবারই বেশি পছন্দ করে থাকে৷ যেমন বিদেশি খাবার রাকলেট বা ফনড্যু৷ যা আগে থেকে তৈরি বা প্রস্তুত না করে অতিথি আসার পরে একসাথে বসে ঝটপট করে ফেলা যায় এবং গরম গরম খাওয়া যায়৷

Fastenbrechen Ramadan Essen Zuckerfest Familie Religion Tradition

বড়দিনে বিদেশিরা কি করেন?

আজকের এই বিশ্বায়নের যুগে কোনো উৎসবই আর শুধু নিজস্ব উৎসব হিসেবে নেই৷ জার্মানিতে ৪০ লাখেরও বেশি মুসলমানের বসবাস৷ তাছাড়া অন্যান্য ধর্মের মানুষও রয়েছেন৷ তারাও ছুটির দিনগুলোতে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে মিলিত হন, খাওয়া-দাওয়া করেন৷ করেন উপহার আদান-প্রদান৷ আসলে ‘ধর্ম যার যার হলেও উৎসব কিন্তু সবার’ – এই রীতিই মানুষের মাঝে লক্ষ্য করা যায়৷ অনেক বিদেশির বাড়িতেও মোমবাতি বা আলোকসজ্জা দেখা যায়৷

Category: 1stpage, ইউরো সংবাদ, ইউরো সংবাদ, শীর্ষ সংবাদ

About the Author ()

Leave a Reply