ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে ইউরোপের তরুণ প্রজন্ম
ইউরো সংবাদ: বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, বাধ্যতামূলক ব্যয় সংকোচন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীর গতি ইত্যাদি কারণে ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত হয় পড়ছে ইউরোপের মানুষ৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ধৈর্য ও সাহস হারিয়ে ফেলছে৷
অর্থনৈতিক সংকট থেকে ধীরে ধীরে গা ঝাড়া দিয়ে উঠছে ইউরোপ৷ আগামী বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এক শতাংশ বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ তবে এই ঊর্ধ্বগতিটা বেশ শ্লথ৷ইউরোপের তরুণরা চাকরির ব্যাপারে আশার আলো দেখছেন খুব কমই৷
২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে ২৫ বছরের কম বয়সি তরুণদের মধ্যে সাড়ে তিন মিলিয়নের বেশি ছিলেন বেকার৷ স্পেন ও গ্রিসে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫০ শতাংশেরও বেশি৷ অবশ্য ইউরোপের দক্ষিণের দেশগুলিতে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার আগে থেকেই এই প্রবণতাটা লক্ষ্য করা গেছে৷
বার্লিনের জার্মান অর্থনৈতিক গবেষণা ইন্সটিটিউটের কার্ল ব্রেঙ্কে এর পেছনে কাঠামোগত দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেন৷ অবশ্য গত কয়েক বছরে তা তীব্র হয়েছে৷ দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে তরুণদের পেশাগত প্রশিক্ষণ তেমন মানসম্মত নয়৷ এছাড়া সংস্কার সত্ত্বেও সেখানকার কর্মবাজার এখনও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত৷ তবে যুব-বেকার সমস্যা এখন ক্রমেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে৷
বয়স্করাও উদ্বিগ্ন
তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হলে বয়স্করাও উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত গ্রীষ্মে যুব-বেকারত্ব নিয়ে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷ কারণ একটি ‘হারিয়ে যাওয়া প্রজন্ম’ রাজনীতিকদের জন্য ইতিবাচক হতে পারে না৷ ‘‘অল্পবয়সিরা শুরুতেই যদি কোনো কাজ পেতে অসুবিধার সম্মুখীন হন, তাহলে সমাজের কাছ থেকে তাদের দূরত্ব বাড়বে,” সতর্ক করে বলেন ব্রেঙ্কে৷ প্রথমে দেখা দেয় হতাশা আর তা থেকে সৃষ্টি হয় নৈরাশ্য৷ এর ফলেঅনেকে হাল ছেড়ে দিতে পারেন বলে জানান বার্লিন গবেষণা কেন্দ্রের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ক্রিশ্টিয়ান ব্রিজিনস্কি-ফে৷
প্রতিবাদী হয়ে উঠছেন তরুণরা
তবে যুব সমাজের হাল ছেড়ে দেওয়ার লক্ষণ সেসব দেশে দেখা যাচ্ছে না৷ বরং অনেক জায়গায় তাদের যুদ্ধংদেহী ভাব লক্ষ্য করা যায়৷ স্পেন, গ্রিস, পর্তুগাল, ইটালি ইত্যাদি দেশগুলিতে ধর্মঘট, প্রতিবাদ, বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে মানুষ৷ তরুণরা তাদের ভবিষ্যৎ, পরিবার পরিজন, সমৃদ্ধি এসব ব্যাপারে উদ্বিগ্ন৷ আগের প্রজন্মের ওপরও ক্ষুব্ধ তারা৷ তাদের ধারণা, আগের প্রজন্ম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে ভুলভ্রান্তি করেছেন, তার মাশুল দিতে হচ্ছে তাদের৷
সুযোগটা কাজে লাগায় কট্টর দক্ষিণপন্থিরা
এই সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইছে কট্টর দক্ষিণপন্থি রাজনৈতিক দলগুলি৷ এক্ষেত্রে এক ‘বলির পাঁঠা’ও পেয়ে গেছে তারা৷ আর সেটি হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য এই সংস্থাটিই দায়ী বলে তারা জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নে এই রকম আবহ বিরাজ করতে থাকলে চরম দক্ষিণপন্থি দলগুলি ইউরোপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে শক্ত অবস্থানে আসতে পারে৷ ‘‘এই ধরনের পার্টিগুলি যে সস্তা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, তা লক্ষ্য করা যায় ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস কিংবা স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলিতে,” বলেন ব্রিজিনস্কি-ফে৷ তবে ইউরোপীয় সমাজ দৃশ্যমান চরমপন্থার দিকে ঝুঁকবে বলে মনে করেন না এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী৷ কেননা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এখানে অনেক মজবুত৷
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, ইউরো সংবাদ, ইউরো সংবাদ, শীর্ষ সংবাদ