সুইসরা অভিবাসন সীমিত করার পক্ষে
ইউরো সংবাদ: একটি গণভোটে সুইস নাগরিকরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদের সুইজারল্যান্ডে যথেচ্ছ অভিবাসন সীমিত করার সপক্ষে মত প্রকাশ করেছেন৷ এর ফলে সুইজারল্যান্ড এবং ইউরোপ, উভয়েই প্রভাবিত হবে বলে মনে করেন ব্যার্ন্ড রিগার্ট৷
ইইউ নাগরিকরা যে একেবারে স্বেচ্ছায় ও স্বাধীনভাবে সুইজারল্যান্ডে বসবাস ও কাজকর্ম করতে পারতেন, এমন নয় – কিছু কিছু বাধা ও সীমা এর আগেও ছিল৷ কিন্তু এবার যে ইইউ নাগরিকদের জন্য ‘কোটা’ চালু করার কথা শোনা যাচ্ছে, তাতে ব্রাসেলসের টনক নড়ার কথা৷ বিশেষ করে যখন ইইউ নাগরিকদের অপরাপর ইইউ দেশেই বাস ও কাজ করা নিয়ে একটা বিতর্ক দানা বাঁধছে – যেমন সম্প্রতি জার্মানিতে, বুলগেরিয়া ও রোমানিয়া থেকে আগতদের নিয়ে৷ ওদিকে সামনে ইউরোপীয় সংসদের নির্বাচন: সেই নির্বাচনেও বিষয়টি গুরুত্ব পেতে পারে৷
সুইজারল্যান্ডের গণভোটটির পিছনে ছিল দক্ষিণঘেঁষা শোয়াইৎসার ফলক্সপার্টাই বা সুইস গণদল, নয়তো বাকি সব রাজনৈতিক দল ও শিল্পপতিদের সমিতি ইত্যাদি ছিল অভিবাসন সীমিত করার বিপক্ষে৷ মনে রাখা দরকার, অভিবাসন বলতে সুইজারল্যান্ডে যা বোঝায়, তা একটু অন্যরকম৷ যেমন সুইজারল্যান্ডের ৮০ লাখ নাগরিকদের মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ ইইউ-তে কাজকর্ম ও বসবাস করে৷
সে তুলনায় সুইজারল্যান্ডে দশ লাখ ইইউ নাগরিকের বাস৷ তাতে বছরে ৮০ হাজার করে ইইউ নবাগত যুক্ত হচ্ছে৷
এই সব ইইউ নাগরিকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কর্মহীন কিংবা সামাজিক ভাতার উপর নির্ভর নয়৷ তা সত্ত্বেও সুইস জনগণ ৫০ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটে অভিবাসন সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিল৷ শহরগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, যানজট বৃদ্ধি, এ সবের চেয়েও বড় কথা, সুইসরা দৃশ্যত তাদের সুইস সংস্কৃতি বিপন্ন হতে পারে বলে বোধ করছে৷
এই সুইস গণভোটের ফলাফল ব্রাসেলসে দুর্বোধ্য৷ অপরদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সুইজারল্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তি আছে, যেগুলির ভাগ্য অনিশ্চিত, বিশেষ করে যদি সুইস সরকার ইইউ নাগরিকদের সুইজারল্যান্ডে মুক্ত অভিবাসনের অধিকার নিয়ে চুক্তির শর্ত নতুন করে নির্ধারণ করতে চান৷
সুইজারল্যান্ড আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ বাজারের অংশ বললেই চলে৷ ইইউ সুইজারল্যান্ডের বৃহত্তম বাণিজ্যিক সহযোগী৷ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ পণ্যের ক্ষেত্রে ২৩০ বিলিয়ন ইউরো, পরিষেবার ক্ষেত্রে আরো ১৩০ বিলিয়ন ইউরো৷
সুইস সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ভবিষ্যৎ আলাপ-আলোচনায় এই আর্থিক দিকটা স্মরণে রাখবে বলেই ধরে নেওয়া যায়৷
সুইস গণভোটের আসল বিপদ হল এই যে, ইইউ জুড়ে এবার অভিবাসন, বহিরাগত ও ইইউ নাগরিকদের সর্বত্র বাস ও কাজকর্ম করার অধিকার নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়ে যাবে৷ সুইসরা যা করতে চলেছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ঠিক তাই করার কথা ভাবছেন: নতুন ইইউ দেশগুলি থেকে অভিবাসন সীমিত করা৷ জার্মানিতেও বুলগেরিয়া ও রোমানিয়া থেকে ‘‘দারিদ্র্যজনিত অভিবাসন” নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে৷ ফ্রান্স কিংবা নেদারল্যান্ডসের চরম দক্ষিণপন্থি দলগুলি স্বভাবতই সুইস গণভোটের ফলাফলে উচ্ছ্বসিত৷ অথচ এই বিচ্ছিন্নতা এবং বহিষ্কারের প্রবণতা ইউরোপীয় একীকরণের ধারণার ঠিক বিপরীত৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ভবিষ্যৎ আলাপ-আলোচনায় শুধু একটি জিনিস পরিষ্কার করে দিতে হবে: যেখানে মানুষের মুক্ত যাতায়াতের সুযোগ নেই, সেখানে পণ্য এবং পুঁজির মুক্ত আদানপ্রদানের কোনো প্রশ্ন উঠতে পারে না৷
Category: 1stpage, Scroll_Head_Line, ইউরো সংবাদ, ইউরো সংবাদ, শীর্ষ সংবাদ