• ৮ অগ্রহায়ণ ,১৪৩১,22 Nov ,2024
  • ব্রেকিং নিউজ : বাংলাদেশের রিকশাচিত্র পেল ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি

ইউরোপীয় ইউনিয়নে শরণার্থীরা স্বাগত নন

| মার্চ 2, 2014 | 0 Comments

ইউরো সংবাদ//শরণার্থীরা আশা করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তে ঢুকতে পারলেই বুঝি নিরাপদ আশ্রয় পাওয়া যাবে৷ কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই উলটোটাই দেখা যায়৷ লক্ষ্য করা যায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও সহানুভূতির অভাব ৷

হিদির কারুল-এরও এই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল৷ ‘‘হঠাৎ হাতকড়া পড়ে হাতে৷ পাঠানো হয় হাজতে৷” হামবুর্গে বিদেশিদের জন্য ভারপ্রাপ্ত দপ্তরের কথা স্মরণ করে এইভাবেই বলেন হিদির৷

‘‘আমাকে আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের অনুমতি দেওয়া হয়নি৷ পরদিন তুরস্কে পাঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল৷ অর্থাৎ আমাকে বহিষ্কার করতে চেয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ৷”

গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি এড়াতে

হিদির কারুল তুরস্কের নাগরিক৷ কুর্দ অ্যালাওয়াইট সম্প্রদায়ের মানুষ৷ ১৯৯৫ সালে ১৫ বছর বয়সে গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জার্মানিতে পালিয়ে আসেন তিনি৷ এখানে নিয়মমাফিক সবকিছু করা সত্ত্বেও তাঁকে অবৈধ বলে গণ্য করা হয়৷ বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ যদিও জার্মানিতে পৌঁছানোর সাথে সাথে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছিলেন হিদির৷ নিয়ম মতো একজন অভিভাবকও পেয়েছিলেন৷ পেয়েছিলেন একটি বাসস্থান৷ স্কুলে যাওয়াও বাদ যায়নি৷

আইন অনুযায়ী এক বছর পর জার্মানিতে থাকার অনুমোদন পত্র নবায়নের জন্য বিদেশিদের দপ্তরে গিয়েছিলেন হিদির৷ কিন্তু আচমকা পরতে হলো তাঁকে হাতকড়া৷ যেতে হলো হাজতে৷ পরদিন তাঁকে তুরস্কের প্লেনে উঠিয়ে দেওয়ার কথা ছিল৷ তবে শেষ মুহূর্তে উকিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়৷ বহিষ্কার রোধ করা যায়৷ হিদির বলেন, ‘‘স্বাগত বলতে আমি অন্য কিছু বুঝি৷”

সহজেই জার্মানির ভিসা পান

অন্য অনেক শরণার্থীর তুলনায় হিদির কারুল সহজেই জার্মানির ভিসা পেয়েছিলেন৷ তুরস্কে জার্মান দূতাবাসে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর ভিসা নিয়ে জার্মানিতে চলে আসেন তিনি৷ সব মিলিয়ে খরচ পড়েছে ৩,০০০ ইউরো৷ যা বহন করা বহু শরণার্থীর জন্য দুরূহ৷ অবৈধ পথে জার্মানিতে বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দেশে আসার চেষ্টা করেন অনেকে৷ প্রতারক দালালের কবলেও পড়তে হয় অনেক সময়৷ সর্বস্বান্ত হয়ে মারা যাওয়াও কোনো বিরল ঘটনা নয়৷

সংকটপূর্ণ অনেক দেশে কোনো দূতাবাস নেই, যেখানে ঝুঁকিতে পড়া মানুষজন সাহায্য পেতে পারেন৷ ভাগ্য ভাল থাকলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দেশের সীমান্ত পার হতে পারেন তাঁরা৷ তবে সেখানেও তাদের অবস্থা অনিশ্চিত৷ একেক দেশে একেক রকমের আচরণের সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের৷

মানবেতর জীবনযাপন

অনেক শরণার্থীকে কারাবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়৷ এ ব্যাপারে বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি ও গ্রিস-এর বিরুদ্ধে সমালোচনায় চলছে ইদানীং৷ তবে এইসব দেশকে ভারমুক্ত করার জন্য ইইউ-এর তরফ থেকেও বিশেষ উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না৷ ‘‘মানুষজনকে বিপদের সময় সরাসরি সাহায্য করার চেয়ে জার্মানি শরণার্থী ফান্ডে অর্থদান করেই ক্ষান্ত৷” বলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী পেট্রা বেনডেল৷

হিদির কারুলের ঘটনাটি ইতিবাচক পরিণত পায়৷ এর পেছনে রয়েছেন সহানুভূতিশীল কিছু মানুষ, যারা তাঁর অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয়েছিলেন৷ অপরিচিত কোনো দেশে পালিয়ে এলে সবারই কিন্তু এই রকম সৌভাগ্য হয় না৷ শরণার্থীরা ‘আশ্রয় পাওয়া’ দেশের ভাষা জানেন না, আইনকানুন সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই, জানেন না কোন সংস্থায় তাঁরা সাহায্যের জন্য যাবেন৷ বলেন কোলোনের বিদেশিদের জন্য ভারপ্রাপ্ত দপ্তরের প্রধান ডাগমার ডামেন৷ ‘‘তাঁরা এখানে কাজ করতে চান, সরকারের ওপর নির্ভরশীল হতে চান না৷ কিন্তু শরণার্থী হিসাবে স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত তাদের কাজের অনুমতি দেওয়া হয় না৷”

ইন্টিগ্রেশনের জন্য কাজের সুযোগ থাকা উচিত

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী পেট্রা বেনডেল মনে করেন, অনেক তরুণই ইইউ-এর দেশগুলিতে আসেন বিশেষ করে কাজ করতে৷ ইন্টিগ্রেশনের জন্য এটা সবচেয়ে ভাল উপায়৷ শরণার্থীরা কাজ করতে না পেরে ভেঙে পড়েন৷ সারাদিন অনেকের সঙ্গে ঠাসাঠাসি করে আশ্রয়কেন্দ্রে শুয়ে বসে দিন কাটাতে হয় তাঁদের৷

ইউরোপীয় কমিশন বেশ কিছুদিন ধরে একটি আইনের খসড়া নিয়ে কাজ করছে৷ এতে ইউরোপের শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের দক্ষতা যোগ্যতা অনুযায়ী ভাগ করা হয়৷ যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁদের কাজে লাগানো যায়৷ কিন্তু শ্রমনীতির বিষয়টি বিভিন্ন দেশে জাতীয় ব্যাপার৷ এক্ষেত্রে ইইউ-এর দেশগুলি সহযোগিতামূলক কাজ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না৷

Category: 1stpage, ইউরো সংবাদ, ইউরো সংবাদ

About the Author ()

Leave a Reply